ফাইনালের আগে যেসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে

২০২৩ সালের আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দল অস্ট্রেলিয়া আবারও ফাইনালে উঠেছে। এবারও ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে তারা। ১১ জুন ইংল্যান্ডের লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে অজিরা। পূর্ণশক্তির দল নিয়েই খেলবে তারা। তবু এই দলে আছে কিছু মধুর সমস্যা। সেসব জানার আগে অস্ট্রেলিয়ার দলটা একনজরে দেখে নিই।

অস্ট্রেলিয়া দল:

প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, উসমান খাজা, স্যাম কনস্টাস, ম্যাট কুনম্যান, মার্নাস লাবুশেন, নাথান লায়ন, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক ও বো ওয়েবস্টার। এ ছাড়া রিজার্ভ হিসেবে রয়েছেন ব্রেন্ডন ডগেট।

শক্তিশালী স্কোয়াড দেখে মনে হতে পারে, এই দলে কোনো দুর্বলতা নেই। কিন্তু কন্ডিশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। এখন দেখে নিই, এই একাদশে অজিদের কী কী বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। সেগুলো সবই কি সমস্যা, নাকি আছে মধুর সমস্যাও?

১. উসমান খাজার ওপেনিং সঙ্গী কে হবেন?

অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেখানে উসমান খাজার সঙ্গে ওপেন করতে দেখা গিয়েছিল ট্রাভিস হেডকে। তবে সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি আবার নিজের পছন্দের জায়গা, অর্থাৎ ৫ নম্বরেই ফিরবেন।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ব্যাটসম্যান স্যাম কনস্টাস অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই। ওই ম্যাচ দিয়েই তিনি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই ওপেনারের ওপর শেষ পর্যন্ত ম্যানেজমেন্ট ভরসা রাখবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

যদি কনস্টাস দলে না থাকেন এবং হেড মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন, তাহলে ওপেন করবেন কে? হয়তো টেস্টের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান মারনাস লাবুশেন। তিনি বর্তমানে ৩ নম্বরে খেলেন। এক ধাপ ওপরে উঠে তাঁকেও ওপেন করতে দেখা যেতে পারে। এমনটা হলে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবে বৈকি! কারণ, লাবুশেন ওপরের দিকে খেললে যেমন স্থিতিশীলতা বাড়বে, তেমনি মিডল অর্ডারে আরও কয়েকজন শক্তিশালী ব্যাটসম্যান খেলতে পারবেন।

২. ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়ে কী করবে অজিরা?

ক্যামেরন গ্রিন সম্পূর্ণ ফিট থাকলে টেস্ট দলে জায়গা করে নেবেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার সম্প্রতি কাউন্টি দল গ্লস্টারশায়ায়ের হয়ে সেঞ্চুরি করে ফর্মের প্রমাণ দিয়েছেন। তবে লর্ডসে তিনি বল হাতে দলকে সাহায্য করতে পারবেন না। কারণ, সম্প্রতি পিঠের অস্ত্রোপচারের পর এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। সে ক্ষেত্রে তিনি খেলবেন শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে। গ্রিন এখন পর্যন্ত ২৮টি টেস্ট খেলেছেন এবং এর মধ্যে ৪ থেকে ৭ নম্বরে ব্যাট করেছেন। অর্থাৎ, গ্রিন যেকোনো পজিশনে ব্যাট করতে পারবেন। তাই লাবুশেন যদি ওপেন করেন, তাহলে ৩ নম্বরে দেখা যেতে পারে গ্রিনকে।

৩. বো ওয়েবস্টার কি দলে জায়গা পাবেন?

যদি ক্যামেরন গ্রিন খেলেন, তাহলে বো ওয়েবস্টারের দলে জায়গা পাওয়া কঠিন হতে পারে। ওয়েবস্টারও রয়েছেন দারুণ ফর্মে। ভারতের বিপক্ষে সিডনি টেস্টে নিজের অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কার মাটিতে আরও দুটি টেস্ট খেলে প্রমাণ করেছেন, তিনি টেস্ট ক্রিকেটের মান অনুযায়ী যথেষ্ট প্রস্তুত। অস্ট্রেলিয়ার হয়তো তাঁকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করবে। ৩১ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ফিল্ডিংয়েও বেশ ভালো। এখন ম্যানেজমেন্টকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিজ্ঞ গ্রিনকে খেলাবে, নাকি ব্যাটসম্যান ও বোলার হিসেবে দলে রাখবে তরুণ ওয়েবস্টারকে।

৪. হ্যাজলউড ও বোল্যান্ডের মধ্যে কে খেলবেন?

জশ হ্যাজলউড ও স্কট বোল্যান্ড—দুজনই বিশ্বমানের পেসার। তবে বাস্তবতা হলো লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে হয়তো শুধু একজনেরই জায়গা হবে। ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে চোট পাওয়া হ্যাজলউডের জায়গায় দলে এসেছিলেন বোল্যান্ড। তারপর থেকে তিনিও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। ফাইনালের দুই ইনিংসেই আউট করেছিলেন শুবমান গিলকে। আর শেষ দিনে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিরাট কোহলিকে আউট করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন বোল্যান্ড। তবে আগে লর্ডসে খেলার অভিজ্ঞতা আছে হ্যাজলউডের। তিন টেস্টে এই মাঠে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিকতার দিক থেকে তিনি বোল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে। এখন দেখা যাক, হ্যাজলউডের দলে জায়গা হয় কি না!

৫. পেস অ্যাটাকেই কি মিলবে সব সমাধান?

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রী সম্প্রতি ‘দ্য আইসিসি রিভিউ’-তে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া হয়তো একটু ঝুঁকি নিয়ে নাথান লায়নকে দলে না রেখে চারজন পেসার নিয়ে খেলতে পারে। কিন্তু আসলে কি এমন সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে অজিরা? অবশ্য লর্ডসে তাঁর সাফল্য তুলনামূলক কম। তিন টেস্টে উইকেট মাত্র ৭টি, গড় ৪০-এর ওপরে। কিন্তু জায়গা না দিলে দলে যে আর কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার থাকবে না! এত বড় ঝুঁকি কি নিতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া? ১১ জুন জানা যাবে তা।

আরও পড়ুন