দলের জন্য ডাক্তারের কথা অমান্য করছেন নেইমার
নেইমারের সামনে সুযোগ খোলা ছিল দুটি। বসে বসে নিজের দলকে অবনমনের লড়াই করতে দেখা। অথবা নিজের ক্যারিয়ার বাজি রেখে মাঠে নামা। নেইমার বেছে নিলেন দ্বিতীয়টাই। কারণ, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না তাঁর জন্য।
কার্লো আনচেলত্তি সরাসরি ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন—নেইমার হোক ভিনিসিয়ুস হোক কিংবা এস্তেভাও—তাঁর ব্রাজিল দলে জায়গা পেতে হলে যেমন ফিট থাকতে হবে, তেমনি ফর্মে থাকতে হবে। নেইমারের ২৬ বিশ্বকাপের স্বপ্ন পূরণের জন্য ঠিক কোনো শর্তই ঠিকঠাক পূরণ হচ্ছিল না। সান্তোসের হয়ে ভুলে যাওয়ার মতো একটা মৌসুম কাটিয়েছেন তিনি। একের পর এক ম্যাচে তাঁর বাজে পারফরম্যান্সের দায় নিতে হয়েছে সান্তোসকে। নামতে নামতে একেবারে অবনমনের শঙ্কায় তারা। শেষ তিন ম্যাচে তাই জয়ের কোনো বিকল্প নেই তাঁর কাছে। তার আগেই দুঃসংবাদ শুনতে হলো নেইমারকে।
আগের ম্যাচেই পড়েছেন চোটে। সেই চোট বেড়েছে অনুশীলনে। এই নিয়ে এই বছরে চতুর্থবারের মতো চোটে পড়লেন নেইমার। আর সেই চোট দিয়েই তাঁর বছর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রথমে ধরা হয়েছিল এক ম্যাচের জন্য হয়তো বসতে হবে এই তারকা ফুটবলারকে। কিন্তু না। নেইমারকে বসে থাকতে হবে জানুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ এই মৌসুমে তাঁর খেলার সুযোগ একেবারেই নেই। আর বাকি তিন ম্যাচ বসে থাকলে দল প্রথম বিভাগে থাকবে কি না, সেই নিশ্চিয়তাও নেই।
কিন্তু নেইমার এত কিছু শোনার মানুষ না। চোটের পর ডাক্তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী তিন সপ্তাহ থাকতে হবে বিশ্রামে। নেইমারও জানিয়ে দিলেন, তিনি খেলবেন। তাঁর কাছে শরীর নয়, গুরুত্বপূর্ণ তাঁর দল। দলের জন্য নিজের ক্যারিয়ারকে ঝুঁকিতে রাখতেও আপত্তি নেই নেইমারের। কারণ, তাঁর লক্ষ্য তিনি বিশ্বকাপও খেলবেন, দলকে জিইয়েও রাখবেন। তাতে যা হবে হোক। নিজের শরীর পরে, ফুটবলটাই আগে। ডাক্তারের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে নেইমার সিদ্ধান্ত নিলেন খেলবেন।
অবনমন নিশ্চিত হয়ে যাওয়া স্পোর্টের বিপক্ষে হারজিতের প্রশ্ন। পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে নিয়ে নামলেন নেইমার। সমাধান করে দিলেন সেই জটিল প্রশ্নের মাত্র ২৫ মিনিটেই। শুরু করলেন নিজের গোল দিয়ে, শেষ করলেন সতীর্থকে দিয়ে গোল করিয়ে। নেইমার যেন জানিয়ে দিলেন ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য আসেননি তিনি। দলকে রক্ষা করতে তাই যেকোনো কিছু বাজি রাখতেও আপত্তি নেই।
যদিও প্রেস কনফারেন্সে নেইমার বলেছেন, ফিজিওদের কিছুটা সায় ছিল খেলার প্রতি। নইলে এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এটাও স্বীকার করে নিয়েছেন, নেইমার এখন লড়াই করছেন নিজের সঙ্গে। নিজের স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। শুধু সান্তোসকে বাঁচিয়ে রাখা নয়। ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলা, ব্রাজিলের হেক্সা মিশন পূরণ করা—নিজেদের মাটিতে যে দুঃস্বপ্নের সাক্ষী হয়েছিলেন, সেই স্বপ্ন নিয়ে আরেকবার দাঁড়াতে চান বিশ্বকাপের মঞ্চে। তার জন্য যা করা দরকার, তাই করতে রাজি তিনি।