মিচেল স্টার্ক কেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন মিচেল স্টার্কছবি: এএফপি

২ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষা করছেন নিউজিল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষণার জন্য। ঠিক তখনই একটি খবর আসে ভক্তদের কানে। সে খবর শুনে হয়তো আশাহতই হয়েছেন ভক্তরা। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি মিচেল স্টার্ক আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলবেন না। অজি ভক্তদের পাশাপাশি ক্রিকেটবিশ্বও খানিকটা চমকে গেছে স্টার্কের এমন সিদ্ধান্তে। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি?

৩৫ বছর বয়সী এই পেসার আসলে টেস্ট ও ওয়ানডেতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে চান। সামনে ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ, দেশের মাটিতে অ্যাশেজ আর ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এমন তিনটি বড় মঞ্চে নিজেকে ফিট রাখতেই টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছেন স্টার্ক।

মিচেল স্টার্কের এই বিদায়ে হয়তো অনেক ভক্তের মন খারাপ হবে। তবে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর অর্জনগুলো কিন্তু ভোলার মতো নয়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৬৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ৭৯টি উইকেট। তাঁর বিধ্বংসী ইয়র্কার আর গতি সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটাররা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট আছে শুধু লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পেছনেও রয়েছে তাঁর অবদান। টি-টোয়েন্টিতে স্টার্কের ইকোনমি রেট ৭ দশমিক ৭৪। উইকেট প্রতি গড় ২৩ দশমিক ৮১।

আরও পড়ুন

অবসরের ঘোষণায় স্টার্ক বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট সব সময়ই আমার কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত আমি উপভোগ করেছি। বিশেষ করে ২০২১ বিশ্বকাপের কথা বলতেই হয়। শুধু আমরা জিতেছি বলেই নয়, পুরো দলটা ছিল অসাধারণ।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ার বোলিং বিভাগকে পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিতেও সাহায্য করবে।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলিও স্টার্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, ‘নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে গর্ব করা উচিত স্টার্কের। ২০২১ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল সে। যেকোনো মূহূর্তে উইকেট নেওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা নিয়ে সে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারত। আমরা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারকে যথাযোগ্য সম্মান জানাব। তবে আনন্দের বিষয় হলো সে আরও অনেক দিন টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবে।’

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল স্টার্কের। এরপর শুধু ২০১৬ বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি চোটের কারণে।

আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক
ছবি: এএফপি

স্টার্কের অবসরের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে সেই দলে থাকছেন না আরও দুই বড় তারকা প্যাট কামিন্স এবং নাথান এলিস। পিঠের চোটের কারণে বিশ্রামে আছেন কামিন্স, আর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে ছুটি নিয়েছেন এলিস। কামিন্সের চোট বেশ গুরুতর হওয়ায় ভারতের বিপক্ষে আসন্ন সাদা বলের সিরিজেও হয়তো তাঁকে দেখা যাবে না।

মিচেল স্টার্কের এই বিদায়ে হয়তো টি-টোয়েন্টিতে একটি যুগের অবসান হলো, কিন্তু টেস্ট ও ওয়ানডেতে তাঁর বিধ্বংসী ইয়র্কার দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে ক্রিকেটবিশ্ব। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া দলও এখন নতুনদের সুযোগ দিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারবে। একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন জানেন, কখন কোথা থেকে সরে দাঁড়াতে হয় এবং কোথায় শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হয়।

সূত্র: আইসিসি, ইএসপিএন ক্রিকইনফো ও রয়টার্স

আরও পড়ুন