প্রিমিয়ার লিগে ‘বক্সিং ডে’ ম্যাচ নেই কেন
‘বক্সিং ডে’ শব্দটার আলাদা একটা অর্থ আছে প্রিমিয়ার লিগ ভক্তদের কাছে। পুরো বিশ্ব যখন ব্যস্ত থাকে বড়দিনের আনন্দে, সেখানে বড়দিন শেষ হতে না হতেই খেলোয়াড়েরা ফেরেন মাঠে, মুখোমুখি হন একে অপরের। সেই ১৮৮৮ সালে ইংলিশ লিগ শুরু হওয়ার পর থেকেই চলে এসেছে এই প্রথা। বড়দিনের পরদিন ফুটবলাররা থাকবেন মাঠে। দল বেঁধে পরিবারসহ ভক্তরা দেখতে আসবেন প্রিয় দলের খেলা। কিন্তু এবার সেই আনন্দে কিছুটা ছেদ পড়তে যাচ্ছে। কারণ, বড়দিনের পরদিন এবার নেই কোনো খেলা।
প্রিমিয়ার লিগের ফিকশ্চার ঘোষণা করার পর থেকেই এই নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। সেই শুরু থেকে চলে আসা প্রথা কেন হুট করে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে? কেন বক্সিং ডের ঐতিহ্য নষ্ট করছে প্রিমিয়ার লিগ? সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে সবার মাথায়। তবে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে জানতে হবে, প্রিমিয়ার লিগের শিডিউল আসলে কীভাবে ঠিক হয়।
প্রিমিয়ার লিগের শিডিউল তৈরির কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। প্রতি মৌসুমে প্রতিটি দল খেলে ৩৮ ম্যাচ। এই ৩৮ ম্যাচ ভাগ হয় ৩৩ সপ্তাহে। ৩৩টি উইকএন্ড ও ৫টি মিডউইক। অর্থাৎ পাঁচটি সপ্তাহ এমন থাকে, যেখানে এক সপ্তাহে একটি দল দুবার খেলে। এ ছাড়া থাকে এফএ কাপ ও লিগ কাপ। সেই সঙ্গে ইউরোপিয়ান শিরোপার লড়াই তো আছেই। সব মিলিয়ে অনেক হিসব–নিকাশ মাথায় রেখে শিডিউল সামলাতে হয় প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষকে।
উইকএন্ড ও মিডউইককে দুই ভাগে ভাগ করে প্রিমিয়ার লিগ। শুক্র-শনি ও রবিবার হচ্ছে উইকএন্ড। আর সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার হলো মিডউইক। নিয়ম অনুযায়ী উইকএন্ডের প্রথম দিন অর্থাৎ শুক্রবার সর্বোচ্চ একটি খেলা হয় প্রিমিয়ার লিগে। এবারের বড়দিন পড়েছে বৃহস্পতিবার। অর্থাৎ বক্সিং ডে পড়েছে শুক্রবার। আর নিয়ম অনুযায়ী এই শুক্রবারে খেলা হতে পারবে মাত্র একটি।
প্রিমিয়ার লিগ সেই নিয়ম মেনেই একটা খেলা রেখেছে এই শুক্রবার। মজার ব্যাপার হলো যখন শিডিউল তৈরি করা হয়েছিল তখন কোনো খেলাই ছিল না বক্সিং ডে-তে। প্রিমিয়ার লিগের আসরে প্রথমবারের মতো খালি থাকত বক্সিং ডে। কিন্তু কড়া সমালোচনার মুখে একটি ম্যাচ এগিয়ে আনতে বাধ্য হয় প্রিমিয়ার লিগ। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মুখোমুখি হবে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের। বক্সিং ডে-তে পুরো শিডিউলের পরিবর্তে খেলাপ্রেমীরা এই একটি খেলাই দেখতে পারবেন।
তবে প্রিমিয়ার লিগ আশ্বস্ত করেছে, তাদের এই পরিবর্তন শুধু এবারের জন্যই। পরবর্তী মৌসুমে বক্সিং ডে পড়বে শনিবার। তখন চাইলেই প্রতিটি ম্যাচের শিডিউল ফেলা যাবে বক্সিং ডে-তে। সেখানে কোনো বাধা নেই।
প্রশ্ন করতে পারো, তাই বলে কি নিয়মের পরিবর্তন করা যেত না? কিংবা নিয়ম ভেঙে ঐতিহ্য রক্ষা করা যেত না? যেত, কিন্তু তাতে ভালোর থেকে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। প্রথমত এবারই প্রথমবারের মতো এগিয়ে আনা হয়েছে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস বা অ্যাফকন। বড়দিনের ছুটিতে চলছে টুর্নামেন্ট। প্রিমিয়ার লিগে প্রায় প্রতিটি দলেই আফ্রিকান খেলোয়াড়ের আনাগোনা আছে। তাঁদের কেউই এখন দলের সঙ্গে নেই। ফলে খেলোয়াড়ের কমতি আছে এবার। যা আগে কখনোই হয়নি।
দ্বিতীয়ত এই মৌসুমের শেষে রয়েছে বিশ্বকাপ। ফলে যাঁরা বিশ্বকাপে খেলবেন তাঁদের একটা লম্বা সময় ধরে টানা খেলার মধ্যে থাকতে হবে। এ ছাড়া মৌসুম শুরুর আগে ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেছেন অনেকে। সব মিলিয়ে টানা খেলায় খেলোয়াড়দের শরীর ভেঙে পড়তে পারে সহজেই। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই নিয়ম ভেঙে বক্সিং ডে-তে খেলা রাখেনি প্রিমিয়ার লিগ। তবে তার পরের দুই দিন ঠিকই নিয়ম অনুযায়ী খেলা রেখেছে তারা। অর্থাৎ ২৭ ও ২৮ তারিখ পুরোদমে দেখতে পারবে প্রিমিয়ার লিগের খেলা। কোনো বাড়তি চিন্তা ছাড়াই।