কেন এগিয়ে এল আফ্রিকার কাপ অব নেশনস?
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের আয়োজনগুলো বেশ সাজানো-গোছানো। বছরে ৯ মাস খেলা হয়। বাকি সময়টায় অফুরন্ত অবসর থাকে খেলোয়াড়দের। আগস্ট থেকে মে মাস পর্যন্ত থাকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ব্যস্ত মৌসুম। আর জুন-জুলাই দুই মাস বরাদ্দ থাকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের জন্য। বিশ্বকাপ, ইউরো, কোপা আমেরিকার মতো বড় বড় টুর্নামেন্টের পর্দা ওঠে দুই মাসে। পুরো ফরম্যাটকে এমনভাবেই সাজানো হয়েছে যে এই বিচ্যুতি ঘটলেই সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়।
যেমনটা ছিল ২০২২ বিশ্বকাপে। পুরো ইউরোপিয়ান ফুটবলকে ওলটপালট করে বিশ্বকাপের আসর বসেছিল নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। বিশ্বকাপকে জায়গা করে দিতে ইউরোপিয়ান ফুটবলকে বেশ বড়সড় মাশুলও দিতে হয়েছিল সেবার। খেলা বন্ধ রেখে আয়োজন করা হয়েছে বিশ্বকাপ। শোনা যাচ্ছে ২০৩৪ সালে সৌদি আরবে বিশ্বকাপ হলেও নাকি একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এমন এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টও আছে যাদের জন্য ইউরোপিয়ান ফুটবলে আসে না কোনো বিরতি, বরং ছুটি নিয়ে খেলতে যান খেলোয়াড়েরা। বলছি আফ্রিকার মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট অ্যাফকনের কথা।
আফ্রিকার মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট অ্যাফকন বা আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের আসর শুরু হয়েছে ২১ ডিসেম্বর থেকে। সাধারণত চার বছর পরপর অ্যাফকনের আসর বসে জানুয়ারির মাঝামাঝি। এর কারণও আছে বৈকি। সাধারণত যে সময়টাতে ইউরো ও কোপা আমেরিকা বসে, সেই জুন-জুলাইয়ে প্রচণ্ড গরম পড়ে আফ্রিকাজুড়ে। তখন কোনো খেলা আয়োজন করা বেশ মুশকিল। যে কারণে শীতের সময়কে বেছে নেয় তারা। প্রতি চার বছর পরপর আয়োজন করা হয় এই টুর্নামেন্ট। এবার অবশ্য সেই আসর এগিয়ে এসেছে প্রায় এক মাস। ৬৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অ্যাফকনের আসর বসতে চলেছে বড়দিনের ছুটির মধ্যে। কিন্তু কেন?
এর পেছনে মূল কলকাঠি নেড়েছে ফিফা। ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপ ও মূল বিশ্বকাপের মধ্যে গ্যাঁড়াকলে পড়েছে অ্যাফকন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে লম্বা সময়ের জন্য খেলোয়াড়দের ক্লাব থেকে আনলে খেলোয়াড়-ক্লাব দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতি। যে কারণে আফ্রিকান ফুটবল ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের টুর্নামেন্ট এগিয়ে আনার। এক মাস এগিয়ে বড়দিনের ছুটিতে টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে তাদের বেশ কয়েকটি জায়গা থেকেই সুবিধা।
প্রথম সুবিধা আসে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে। আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে খেলার জন্য লম্বা একটা ছুটি নিতে হয় ক্লাব থেকে। বেশির ভাগ ক্লাবই এই ছুটি দিতে চায় না। জানুয়ারিতে প্রতিটি দলের সূচিতে থাকে ব্যস্ততা। লিগ ও কাপের ম্যাচের সঙ্গে সঙ্গে বছরখানেক ধরে শুরু হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। সব মিলিয়ে জানুয়ারি মাসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর জন্য।
এ ছাড়া জানুয়ারিতে চলে ইউরোপিয়ান ফুটবলের শীতকালীন দলবদল। এই শীতকালে খেলোয়াড় কেনাবেচা করতে চাইলেও বেশ বেগ পোহাতে হয় ক্লাব কর্তৃপক্ষকে। তবে যত যা-ই হোক না কেন, ক্লাবের সাধ্য নেই খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে খেলতে না দেওয়ার। কিন্তু তাই বলে দ্বন্দ্ব কম থাকে না। এ ছাড়া দুই বছর পরপর হয় বলে খেলোয়াড়দের হারানোর শঙ্কাও থাকে বেশি। সেই সঙ্গে এক মাসের টুর্নামেন্টে চোটের কথা ভুলে গেলেও চলবে না
নাপোলি মালিক একবার সরাসরি বলেই ফেলেছিলেন, আফ্রিকান খেলোয়াড়দের আমি কিনতে চাই না এই দুই মাসের ছুটির জন্য। লিভারপুলের হয়ে মোহাম্মদ সালাহকেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে ক্লাব ছেড়ে দেশের হয়ে খেলতে যাওয়ায়। এ ছাড়া আরও অনেকে আছেন, যাঁরা দল ছাড়ার আগে দলের যে অবস্থা দেখেছেন, তার থেকে খারাপ অবস্থায় পেয়েছেন ফিরে আসার পর। কেউ মূল একাদশে জায়গা হারিয়েছেন, কেউ বেঞ্চ থেকে চলে গেছেন রিজার্ভে। এমনটা আফ্রিকান খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘটে প্রায় নিয়মিতই।
সেই ঝামেলা থেকে বাঁচতেই টুর্নামেন্ট এক মাস এগিয়ে আনা। ডিসেম্বরের শেষ দিকে সব লিগেই চলে বড়দিনের বড় একটা ছুটি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বড় ছুটি পায় দলগুলো, শুধু প্রিমিয়ার লিগ বাদে। এই বন্ধটা কাজে লাগাতে চায় আফ্রিকান কাপ অব নেশনস। যাতে করে ক্লাবগুলোর বড় কোনো ক্ষতি না হয়, আবার আফ্রিকার কঠিন আবহাওয়াকেও মোকাবিলা করা সম্ভব। এই টুর্নামেন্টের ফলে সর্বোচ্চ ২-৩টি ম্যাচ মিস যাওয়ার সুযোগ থাকবে। তা-ও যদি দলগুলো সেমিফাইনাল অথবা ফাইনাল খেলে। সবকিছু মিলিয়েই এক মাস এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্যাফ বা কনফেডারেশনস অব আফ্রিকান ফুটবল।
এখন শুধু অপেক্ষা আফ্রিকার সেরা খেলোয়াড়দের মিলনমেলায় জয়ের হাসি হাসে কে?