২০২৫ সালের সেরা সায়েন্স ফিকশন মুভি

দেখতে দেখতে ২০২৫ সালটা শেষ হয়ে গেল। পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে এগিয়ে যাব ২০২৬ সালের দিকে। নতুন বছরে নতুন সব সিনেমার জন্য অপেক্ষা তো থাকবেই। তবে গত বছর হলিউড আমাদের কী কী উপহার দিল, সেদিকে একটু ফিরে তাকালে কেমন হয়?

সিনেমা হলে গিয়ে মুভি দেখার চল কিছুটা কমলেও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর দাপট কিন্তু কমেনি। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সায়েন্স ফিকশন মুভিগুলো গত বছর আমাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সুপারহিরোদের অ্যাকশন থেকে শুরু করে ভিনগ্রহের প্রাণী, রোবট ও মহাকাশ অভিযান—কী ছিল না সেখানে! ডিসি তাদের সুপারম্যান দিয়ে যেমন চমক দিয়েছে, মার্ভেলও কম যায়নি তাদের ফ্যান্টাস্টিক ফোর নিয়ে।

কিছু মুভি হয়তো আশানুরূপ জমেনি, কিন্তু আজ আমরা কথা বলব সেই মুভিগুলো নিয়ে, যেগুলো ছিল এককথায় দুর্দান্ত। বক্স অফিসে সব কটি হয়তো টাকার পাহাড় গড়েনি, কিন্তু গল্প আর প্রযুক্তির কারসাজিতে এগুলো দর্শকদের মন জয় করেছে। চলো, ঝটপট দেখে নিই ২০২৫ সালের সেরা ১২টি সায়েন্স ফিকশন মুভির তালিকা।

১. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন

তালিকার শুরুতেই আছে বিখ্যাত পরিচালক গুইলারমো দেল তোরোর মুভি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। নাম শুনেই হয়তো ভাবছ, এটা তো ভয়ের সিনেমা, এখানে সায়েন্স ফিকশন এল কোথা থেকে? আসলে মেরি শেলির ১৮১৮ সালের সেই বিখ্যাত উপন্যাসটিই তো ছিল বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্টের গল্প। মৃতদেহ জোড়া দিয়ে নতুন প্রাণ সৃষ্টি করার সেই বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাকেই পরিচালক দারুণভাবে পর্দায় তুলে এনেছেন। অস্কার আইজ্যাক ও জ্যাকব এলর্ডির অভিনয় আর দুর্দান্ত সব সেট ডিজাইন সিনেমাটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নেটফ্লিক্সের এই সিনেমা একই সঙ্গে ভয়ের এবং আবেগের।

২. দ্য ফ্যান্টাস্টিক ফোর: ফার্স্ট স্টেপস

মার্ভেল–ভক্তদের জন্য অবশেষে ফ্যান্টাস্টিক ফোর নিয়ে একটা ভালো মুভি তৈরি হয়েছে। ১৯৬০-এর দশকের আদলে তৈরি পুরোনো দিনের ভবিষ্যতের নিউইয়র্ক শহরকে দেখানো হয়েছে এখানে। মিস্টার ফ্যান্টাস্টিক, ইনভিজিবল ওম্যান, দ্য থিং ও হিউম্যান টর্চ মিলে লড়াই করছে গ্রহখেকো ভিলেন গ্যালাক্টাস আর তার সঙ্গী সিলভার সার্ফারের বিরুদ্ধে। পেড্রো পাস্কাল অভিনীত এই সিনেমায় অ্যাকশনের সঙ্গে মিশে আছে দারুণ সব হিউমার। ডিজনি প্লাসে দেখা যাচ্ছে এটি।

আরও পড়ুন

৩. অ্যাশ

তুমি যদি মহাকাশ আর ভিনগ্রহের অদ্ভুত সব রহস্য পছন্দ করো, তাহলে এই মুভি তোমার জন্য। প্রতিকূল ভিনগ্রহে আটকা পড়া এক উদ্ধার অভিযানের গল্প এটি। সেখানে আগেই এলিয়েনরা ঘাঁটি গেড়েছে। ফ্লাইং লোটাস পরিচালিত এই সিনেমার ভিজ্যুয়াল দৃশ্যগুলো এতটাই রঙিন আর অদ্ভুত যে চোখ ফেরানো দায়! অনেকটা ভিডিও গেমের মতো আবহ তৈরি করা হয়েছে, যা মুভি শেষ হওয়ার পরও তোমার মাথায় ঘুরপাক খাবে।

৪. প্রিডেটর: কিলার অব কিলারস/ব্যাডল্যান্ডস

পরিচালক ড্যান ট্র্যাকটেনবার্গ দর্শকদের জন্য জোড়া ধামাকা নিয়ে এসেছেন। হুলুর এই প্রজেক্টে দুটি আলাদা স্বাদের গল্প আছে। কিলার অব কিলারস হলো অ্যানিমেটেড বা কার্টুনধর্মী, যেখানে প্রিডেটরদের সেই ভয়ংকর শিকারি রূপ দেখা যায়। আর ব্যাডল্যান্ডস হলো লাইভ অ্যাকশন, যেখানে এক অদ্ভুত গ্রহে এক প্রিডেটর যোদ্ধা আর এক রোবটের বন্ধুত্ব ও অভিযানের গল্প দেখানো হয়েছে। যারা অ্যাকশন পছন্দ করো, তাদের এটি ভালো লাগবেই।

আরও পড়ুন

৫. ২৮ ইয়ার্স লেটার

জম্বিদের দিন কি শেষ? মোটেও না! ২০০২ সালের সেই বিখ্যাত ২৮ ডেজ লেটার মুভির কথা মনে আছে? সেই ঘটনার প্রায় ৩০ বছর পরের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এই নতুন সিকুয়েল। এক ভয়ংকর ভাইরাসে আক্রান্ত ইংল্যান্ডে বাবা আর ছেলের বেঁচে থাকার লড়াই। ড্যানি বয়েলের পরিচালনায় নেটফ্লিক্সের এই সিনেমায় নতুন এক প্রজাতির জম্বির দেখা মিলবে। তবে সাবধান, এটি কিন্তু বেশ ভয়ের!

৬. সুপারম্যান

সুপারহিরোদের মধ্যে সুপারম্যানের জায়গা সব সময়ই আলাদা। পরিচালক জেমস গান নতুন করে সুপারম্যানকে পর্দায় এনেছেন। ডেভিড করিন্সওয়েট নতুন ম্যান অব স্টিল হিসেবে বেশ মানিয়ে গেছেন। মুভির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এখানে সুপারম্যানের সঙ্গী হিসেবে আছে তার সুপার-পাওয়ারড কুকুর ক্রিপ্টো! অ্যাকশনে ভরপুর মুভিটি এইচবিও ম্যাক্সে দেখা যাচ্ছে।

৭. লস্ট ইন স্টারলাইট

কোরিয়ান ড্রামা আর কে-পপ গান যদি তোমার পছন্দ হয়, তবে নেটফ্লিক্সের এই অ্যানিমেটেড সিনেমাটি তোমার মন ছুঁয়ে যাবে। নান-ইয়ং নামের এক বিজ্ঞানী নভোচারী আর জে নামের এক মিউজিশিয়ানের ভালোবাসার গল্প এটি। নান-ইয়ং যখন মঙ্গল অভিযানে যায়, তখন পৃথিবী আর মঙ্গলের এই বিশাল দূরত্ব কি তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াবে? মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে আবেগের এক দারুণ মিশেল এই মুভি।

আরও পড়ুন

৮. বুগোনিয়া

এমা স্টোন অভিনীত এ মুভিটি বেশ অদ্ভুত। দুজন কন্সপিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসী মানুষ এক বড় কোম্পানির সিইওকে কিডন্যাপ করে। তাদের ধারণা, ওই নারী আসলে পৃথিবী ধ্বংস করতে আসা এক এলিয়েন! তারা তাকে তার স্পেসশিপে যোগাযোগ করতে বাধা দেয়। কিন্তু আসলেই সে এলিয়েন নাকি সবটাই ওই দুজনের মনের ভুল? এই রহস্য ভেদ করতে হলে দেখতে হবে বুগোনিয়া।

৯. লিলো অ্যান্ড স্টিচ

২০০২ সালের সেই মিষ্টি কার্টুনটার কথা মনে আছে? হাওয়াই দ্বীপের ছোট্ট মেয়ে লিলো আর তার নীল রঙের এলিয়েন বন্ধু স্টিচ? সে গল্পই এবার রক্তমাংসের মানুষের অভিনয়ে ফিরে এসেছে। লিলোর চরিত্রে মায়া কিউলোহা আর স্টিচ তো আছেই তার দুষ্টুমি নিয়ে। ২০২৫ সালের অন্যতম ব্যবসাসফল এই মুভি ডিজনি প্লাসে দেখতে পাবে। বন্ধুত্বের এক দারুণ গল্প এটি।

১০. দ্য গর্জ

অ্যাপল টিভি প্লাসের এই সিনেমা অ্যাকশন আর রোমান্সে ভরপুর। দুই দেশের দুজন স্নাইপারকে পাহারায় রাখা হয় এক বিশাল গিরিখাতের দুই পাশে। সেই খাতের নিচে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর সব দানব। ডিউটি করতে করতে এই দুই শত্রুদেশের সৈনিক একে অপরের প্রেমে পড়ে যায় আর দানবদের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করে। মাইলস টেলার আর অ্যানিয়া টেলর-জয় অভিনীত মুভিটিও বেশ উপভোগ্য।

১১. দ্য ইলেকট্রিক স্টেট

নেটফ্লিক্সের এই সিনেমা তৈরি করতে খরচ হয়েছে বিশাল অঙ্কের টাকা। মিলি ববি ব্রাউন (স্ট্রেঞ্জার থিংসের ইলেভেন) আর ক্রিস প্র্যাট আছেন এতে। এক ভয়ংকর রোবট বিদ্রোহের পরের পৃথিবীর গল্প এটি। ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে একটি হারিয়ে যাওয়া রোবটকে খুঁজতে বের হয় কয়েকজন। স্পেশাল ইফেক্ট আর অদ্ভুত সব রোবট মিলিয়ে এটি একটা কার্টুনধর্মী অ্যাডভেঞ্চার।

১২. ট্রন: অ্যারিস

তালিকার শেষে থাকলেও ট্রন: অ্যারিস কিন্তু দেখার মতো একটি মুভি। ডিজিটাল জগৎ বা কম্পিউটারের ভেতরের দুনিয়া যখন বাস্তব পৃথিবীতে চলে আসে, তখন কী হয়? জ্যারেড লেটো অভিনীত এই মুভিতে এআইয়ের এক ভিন্ন রূপ দেখা গেছে। নিয়ন আলোর ঝলকানি আর দুর্দান্ত মিউজিক মিলিয়ে এটি চোখের জন্য এক প্রশান্তি। ডিজনি প্লাসে এটি দেখা যাচ্ছে।

তাহলে আর দেরি কেন? ছুটির দিনে বসে পড়ো আর হারিয়ে যাও ২০২৫ সালের সেরা কোনো কল্পবিজ্ঞানের দুনিয়ায়!

সূত্র: স্পেস ডটকম

আরও পড়ুন