সিনেমা বানাতে খেলা ছাড়লেন ইউরোপা লিগ জেতা গোলরক্ষক
বয়স মাত্র ২৭। গোলরক্ষকদের জন্য বয়সটা তেমন কিছুই না। গোলরক্ষকেরা তো নিজেদের নামই কামান ৩০ পার হওয়ার পর। সেখানে ২৭ বছর বয়সেই ফুটবল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ইংলিশ গোলরক্ষক। কোনো চোট বা অবসাদ নয়, বরং নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে খেলা থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ইংলিশ গোলরক্ষক আলফি হোয়াইটম্যান।
আলফি হোয়াইটম্যান ছিলেন টটেনহামের পাঁড় ভক্ত। বাড়ির একেবারে পাশে টটেনহাম ক্লাব। সেই সূত্রে ১০ বছর বয়সেই ভর্তি হন তাদের একাডেমিতে। এরপর একাডেমি, যুবদল পেরিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন ২০২০ সালে। টটেনহামের মূল দলের জার্সিতে অভিষেক হয় তাঁর। ছোটবেলা থেকে যে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন, যাদের সঙ্গে একত্রে হেসেছেন, গেয়েছেন, সেই ক্লাবের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার মতো আনন্দ আর কী হতে পারে। আলফির ক্যারিয়ারে সেটাই ছিল সবচেয়ে আনন্দের দিন। আনন্দের দিন বলতে হচ্ছে কারণ, আলফি ছিলেন গোলবারের নিচে স্পার্সের তৃতীয় পছন্দ। খুব দুর্দিন না এলে তাঁকে গোলবারের নিচে দেখার সম্ভাবনা একেবারের শূন্যের কাছাকাছি। আলফিকে তাই দুই বছরের জন্য ধারে পাঠানো হয়েছিল সুইডিশ ক্লাব দেজেফোর্সে।
দুই মৌসুমে ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। খুব যে খারাপ পারফর্ম করেছেন, তা নয়। কিন্তু মূল দলে নিজেকে থিতু করতে পারেননি। ইউটিলিটি খেলোয়াড় ছিলেন বলে টটেনহামও তাঁকে ছাড়েনি। নিজেদের ঘরের খেলোয়াড়, দলের সঙ্গে থাকতে পেরেই যেন খুশি তিনি।
ফুটবলের সঙ্গে তাঁর সখ্য, কিন্তু মনের মধ্যে খেলা করত সিনেমা। সিনেমার পাগল ছিলেন আলফি। সিনেমাভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া লেটারবক্সড-এ তাঁর আনাগোনা ছিল নিয়মিত। এমনও দেখা গিয়েছে, টটেনহামের খেলার আগের রাতে সিনেমা দেখছেন তিনি। সবাই যখন ঘুমে ব্যস্ত, তখন তিনি লেটারবক্সডে রিভিউ লিখছেন।
খেলোয়াড়ি জীবনের পূর্ণতা পেয়েছিলেন গত মৌসুমে, টটেনহামকে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতিয়ে। ১৬ বছরের শিরোপার অপেক্ষা পূর্ণ হয়েছিল স্পার্স–ভক্তদের। রিচার্লিসনকে কাঁধে নিয়ে দৌড়ে বেড়ানোর স্মৃতি অনেক স্পার্স–ভক্তের মনেই ঘুরে বেড়ায় এখনো। কিন্তু ইউরোপা জেতার পরই ক্লাবের সঙ্গে আর চুক্তি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শিরোপা জিতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সিনেমাতে পাকাপাকিভাবে মনোযোগ দেবেন তিনি।
সেই সিদ্ধান্ত এল পাঁচ মাস পর। ফুটবলকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানালেন আলফি। এখন তাঁকে দেখা যাবে লন্ডনভিত্তিক সুমসাচ প্রোডাকশন কোম্পানিতে। সেখানে পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি।
কিছু খেলোয়াড় থাকেন, যাঁরা নিয়মিত না খেলেও ভক্তদের অত্যন্ত পছন্দের। যাঁদের কথা, আচার-আচরণে ভক্তরা খুঁজে পান নিজেদের। আলফি হোয়াইটম্যান ছিলেন স্পার্সের তেমনই একজন। বছরের পর বছর ধরে শিরোপা–খরায় ভুগেও তিনি আনন্দ খুঁজে পেতেন খেলায়। বসে থাকলেও দলকে উজ্জীবিত করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করতেন না। নিজের সামর্থ্য জানতেন, খেলার সুযোগ না পেয়েও টটেনহামের জার্সিতে থাকতে পেরেই খুশি ছিলেন তিনি। ভক্তরাও তাই অবসরের পর অভিবাদন জানাতে ভুল করেননি।
বলাবাহুল্য আলফি হোয়াইটম্যান একসময় ছিলেন হামজা চৌধুরীর সতীর্থ। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৭ ও ১৯ দলের তাঁকে নিয়মিত দেখা গিয়েছে মাঠে। সে সময় হামজা চৌধুরীও ছিলেন দলের সঙ্গে। কিন্তু হামজার অভিষেক না হলেও বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন হোয়াইটম্যান। হোয়াইটম্যানের বাবা ছিলেন পাকিস্তানি। ২০২০ সালের দিকে একবার করাচিতে এসে ট্রায়ালও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো কারণে সেই চুক্তি আর এগোয়নি। নইলে হয়তো পাকিস্তানের জার্সিতে দেখা যেত তাঁকে।
ইউরোপা লিগের শিরোপা, চ্যাম্পিয়নস লিগের রানার্সআপ মেডেল নিয়ে আলফি হোয়াইটম্যান নাম লেখালেন সিনেমাজগতে। ক্যারিয়ারে মাত্র ৩৫ ম্যাচ খেলা আলফি তাঁর সিনেমাজগতে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন, সেই অপেক্ষাতেই স্পার্স–ভক্তরা।