মানুষের কেন দুবার দাঁত ওঠে
তোমার মুখে এখন যে দাঁতগুলো আছে, সেগুলো কিন্তু তোমার জন্মের আগেই তৈরি হতে শুরু করেছিল। অবাক লাগছে না? আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, তোমার মাড়ির ভেতরে লুকিয়ে আছে আরেক সেট দাঁত, সেগুলো একসময় বেরিয়ে আসবে। অবশ্য তোমার বয়স যদি এখন ৬ থেকে ১২ বছর হয়, তাহলেই এ কথাগুলো প্রযোজ্য। কারণ, সাধারণত প্রথম দুধদাঁত ওঠে ৬ মাস বয়সে। ব্যক্তিভেদে তা কমবেশি হতে পারে। অনেকের ১ বছর বয়সেও প্রথম দুধদাঁত উঠতে দেখা যায়। ৩ বছর শেষ হতে না হতেই সাধারণত ২০টি দুধদাঁত পুরো মুখে জায়গা করে নেয়।
তারপর আসে দ্বিতীয় দফায় স্থায়ী দাঁত। ছয় বছরের দিকে দুধদাঁতের নিচে লুকিয়ে থাকা নতুন দাঁতগুলো জেগে ওঠে। ধীরে ধীরে এরা পুরোনোদের ঠেলে বেরিয়ে আসে। এই পালাবদল চলে প্রায় ১২ বা ১৩ বছর বছর পর্যন্ত। এ সময় মুখে প্রায় ২৮টি দাঁত থাকে। ধরে নিচ্ছি, তোমাদের এখন এই বয়স চলছে।
তবে আরেক সেট দাঁতের কথা যে বলেছি, তা মাড়ির। সাধারণত ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সে এই দাঁত ওঠে। একে বলে আক্কেলদাঁত। তবে সবার কিন্তু আক্কেলদাঁত ওঠে না। অবশ্য এ নচ্ছার দাঁত না উঠলেও কোনো ক্ষতি নেই।
যাহোক, আবার প্রসঙ্গে ফিরি। মানুষ হলো বিশেষ প্রাণী! অনেক প্রাণীর দাঁত নিয়ে কোনো সমস্যাই নেই। যেমন হাঙরের কথাই ধরো। ওদের একটা দাঁত পড়ে গেলে আরেকটা গজায়। সারা জীবন এভাবেই চলতে থাকে। কুমিরও তা–ই। এদের অসীমসংখ্যক দাঁত গজানোর ক্ষমতা আছে।
আবার ইঁদুর বা বিভারের মতো প্রাণীদের দাঁত সব সময় বাড়তেই থাকে। ওরা সারাক্ষণ কিছু না কিছু কুটকুট করে কাটে। না হলে দাঁত এত লম্বা হয়ে যাবে যে নিজেদেরই সমস্যা হবে।
কিন্তু আমরা পাই মাত্র দুই সেট দাঁত। প্রথমটা দুধদাঁত, এরপর স্থায়ী দাঁত। বিজ্ঞানীরা এর একটা সুন্দর নাম দিয়েছেন। দুধদাঁতকে বলে পর্ণমোচী দাঁত। বিজ্ঞানের ভাষায় ডেসিডুয়াস। শরৎকালে যেমন কিছু গাছের পাতা ঝরে পড়ে, তেমনি এই দাঁতগুলোও একসময় ঝরে পড়ে।
দুবার দাঁত ওঠা কেন জরুরি
তুমি যখন ছোট্ট ছিলে, তখন তোমার মুখও ছোট ছিল। সেই ছোট মুখে বড় দাঁত কীভাবে ধরবে? তাই প্রথমে আসে ছোট্ট ছোট্ট দুধদাঁত। তা–ও আবার মাত্র ২০টি। যখন তুমি বড় হতে থাকো, মুখও বড় হয়। তখন মুখে জায়গা বেশি হয় এবং দাঁতও বাড়ে। এরপর অনেকের আবার মাড়ির দুই পাশে দুটি করে চারটি আক্কেলদাঁত গজায়।
আমাদের সামনের দাঁতগুলো খাবার কামড়ে ধরতে পারদর্শী। পেছনের দাঁতগুলো চিবিয়ে খাবার গুঁড়া করে দেয়। প্রতিটি দাঁতের নিজস্ব কাজ আছে।
দুধদাঁত তো পড়ে যায়, যত্ন নেওয়ার দরকার কী
অনেকেই ভাবে, দুধদাঁত যেহেতু পড়েই যাবে, তাহলে যেমন খুশি থাকুক; যত্ন নেওয়ার দরকার নেই। এটা বড় ভুল ধারণা। আমাদের দাঁত হাঙরের মতো হলে কোনো কথা ছিল না। দাঁতে পোকা লাগলেও সমস্যা নেই, কারণ নতুন দাঁত গজাবে। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ নেই। আমাদের যেহেতু মাত্র দুই সেট দাঁত, তাই প্রতিটি দাঁতই মূল্যবান।
দুধদাঁতের যত্ন না নিলে দাঁতে পোকা লাগে। দাঁত পচে যায়। সময়ের আগেই তুলে ফেলতে হয়। তখন হয় সমস্যা। যেখানে দুধদাঁত ছিল, সেই ফাঁকা জায়গায় আশপাশের দাঁতগুলো সরে আসে। তারপর যখন নতুন স্থায়ী দাঁত বের হতে চায়, তার জন্য জায়গা পায় না। নতুন ওঠা দাঁত যায় বেঁকে। জায়গার অভাবে অনেকের দাঁত মাড়ির ভেতরেই আটকে থাকে। তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়, ব্রেস বসাতে হয়।
দাঁতের ভবিষ্যৎ
হাত-পা ভাঙলে জোড়া লাগে। হাড় নিজে নিজেই জোড়া লাগার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু দাঁত? দাঁত ভাঙলে আর জোড়া লাগে না। কারণ, দাঁত কোনো হাড় নয়। কেন দাঁত হাড় নয়, সে বিষয়ে অন্য একদিন লিখব।
বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, কীভাবে নতুন দাঁত গজানো যায়। এ বিষয়ের নাম রিজেনারেটিভ ডেন্টিস্ট্রি। হয়তো একদিন আমরা নতুন করে দাঁত গজাতে পারব। কিন্তু এখনো সেই দিন আসেনি। তাই দাঁতের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এখন নকল দাঁত লাগানো যায়। চাইলে কেউ নকল দাঁত ব্যবহার করতেই পারো। অনেকে আবার মাড়ির সঙ্গে স্ক্রু করে দাঁত লাগিয়ে নেন। কিন্তু এসব কখনোই আসল দাঁতের মতো না। সময় থাকতে দাঁতের যত্ন নিলে এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে।
দ্বিতীয় দফায় যে দাঁত ওঠে, ওটা নিয়েই তোমাকে সারা জীবন কাটাতে হবে। অনেকে ৭০ থেকে ৮০ বছর বাঁচেন। এত লম্বা সময় দাঁত টিকিয়ে রাখতে হলে এখন থেকেই যত্ন নেওয়া জরুরি। প্রতিদিন দুবার ব্রাশ করা ভালো। ফ্লুরাইড থাকে—এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। দিনে একবার দাঁতের ফাঁকে সুতা বা ফ্লস করা উচিত। মিষ্টি আর আঠালো খাবার কম খাওয়া দাঁতের জন্য উপকারী। আর প্রয়োজন না হলেও নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। হয়তো তুমি দাঁতে কোনো সমস্যা দেখছ না, কিন্তু দাঁতের গভীরে সমস্যা শুরু হয়েছে। হয়তো তুমি আরও তিন বছর পরে সেই সমস্যা টের পাবে। তত দিনে দাঁতের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। এমন সময় ডেন্টিস্টের কাছে গেলে খুব বেশি লাভ হবে না। কিন্তু তুমি যদি তিন বছর আগেই ডেন্টিস্ট দেখাতে, তাহলে তখনই সমস্যা সমাধান হয়ে যেত।
সূত্র: কিউরিয়াস কিডস অবলম্বনে