সাত লাখ বছর পর জেগে উঠছে ইরানের আগ্নেয়গিরি টাফতান, যেভাবে জানা গেল
ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান সীমান্তের কাছে আছে টাফতান নামের এক আগ্নেয়গিরি। যেটি ঘুমিয়ে আছে বলে এতদিন মনে করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা জানতেন, এটি প্রায় সাত লাখ দশ হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে আছে। কোনও বিস্ফোরণের লক্ষণ এই সময়ে দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, এই আগ্নেয়গিরির ভেতরে পরিবর্তন হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রায় দশ মাসে আগ্নেয়গিরির চূড়ার আশেপাশের মাটি ধীরে ধীরে প্রায় ৯ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে গেছে। এই মাটি ফুলে ওঠার ঘটনা থেকে জানা গেছে, আগ্নেয়গিরির গভীরে গ্যাস বা উত্তপ্ত পদার্থের চাপ জমছে।
টাফতান আগ্নেয়গিরি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,৯৪০ মিটার উঁচু। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের নিচের আরব মহাদেশীয় ভূত্বক ইউরেশীয় ভূখণ্ডের নিচে ঢুকে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। আগেও এখান থেকে গরম বাষ্প, ধোঁয়া ও সালফারের তীব্র গন্ধ পাওয়া যেত। কিন্তু কোনো বিস্ফোরণ দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা তাই এটিকে ‘নিষ্ক্রিয়’ বা ‘বিলুপ্ত’ আগ্নেয়গিরি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো দেখে তাঁরা বলছেন, এটিকে এখন ‘ঘুমন্ত’ আগ্নেয়গিরি বলা বেশি যুক্তিযুক্ত।
২০২০ সালে স্যাটেলাইটের ছবিতে টাফতানের কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি। তবে ২০২৩ সালে স্থানীয় মানুষজন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে শুরু করেন, আগ্নেয়গিরি থেকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ৫০ কিলোমিটার দূরের খাশ শহরে থেকেও এই গন্ধ টের পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানী মোহাম্মদ হোসেইন মোহাম্মদনিয়া ইউরোপের সেন্টিনেল-১ স্যাটেলাইটের নতুন ছবি পর্যবেক্ষণ করে আবিষ্কার করেন, আগ্নেয়গিরিটির চূড়ার নিচে জমে আছে নতুন চাপ। টাফতান দুর্গম এলাকায় হওয়ায় এখানে অন্য আগ্নেয়গিরির মতো আধুনিক জিপিএস মনিটরিং সিস্টেম নেই। তাই স্যাটেলাইট দিয়েই কাজ চালানো হয়েছে।
গবেষকদের ধারণা, হয়তো আগ্নেয়গিরির ভেতরে থাকা গরম পানি ও গ্যাসের পথ বদলে যাচ্ছে। সে কারণে গ্যাস বের হতে না পেরে পাথরের ফাঁকে আটকে যাচ্ছে। আরেকটি সম্ভাবনা হলো, গভীরের ম্যাগমা সামান্য ওপরে উঠে এসে গ্যাসকে ওপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, ফলে মাটি ধীরে ধীরে ফুলে উঠছে। তবে এই ম্যাগমার ভাণ্ডার অনেক নিচে। প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার গভীরে। তবে চাপের উৎস মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেছেন, এখনই বিস্ফোরণের ভয় নেই। আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। আগ্নেয়গিরি নিয়ে লাইভ সায়েন্সে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, এটি একটি সতর্কবার্তা। যে আগ্নেয়গিরিকে এতদিন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, সেটিকে এখন খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আইপিএনএ-সিএসআই ভলকানোলোজি গ্রুপের প্রধান, গবেষক পাবলো গনজালেস বলেছেন, আগ্নেয়গিরির ভেতরে চাপ জমছে। কোনো না কোনোভাবে ভবিষ্যতে একদিন এই চাপ মুক্ত হবে। শান্তভাবে হতে পারে, আবার বিস্ফোরণের মাধ্যমেও হতে পারে। তাই সময় থাকতে এটির দিকে নজর রাখা জরুরি।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স