পোষা কুকুর পরিচিত মানুষকে দেখলে লেজ নাড়িয়ে ছোটাছুটি করে কেন

পোষা কুকুর পরিচিত মানুষকে দেখলে আনন্দিত হয়।ছবি: রয়টার্স

অফিসের কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন আবদুল ইলা। বাসার গলিতে ঢুকতে না ঢুকতেই পথের চেনা কুকুরগুলো লেজ নাড়িয়ে হাজির হলো। কেউ মুখ বাড়িয়ে আদর চাইছে, কেউ বা আনন্দে গায়ে উঠে পড়তে চাইছে। আবদুল ইলা ওদের আদর করেন। নিয়মিত খাবার দেন। মুখে ওদের বললেন, ‘এখন না, পরে।’ ওরা কতটা বুঝল, বোঝা গেল না।

আবদুল ইলা বাসায় ঢুকে হাত–মুখ ধুয়ে কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে বের হলেন। খাবার দেখে সব কটা কুকুর আনন্দে ছোটাছুটি শুরু করল। তুমি নিশ্চয়ই এমন ঘটনার সঙ্গে পরিচিত। পোষা কুকুর বা যে কুকুরকে তুমি খাবার দাও, তোমাকে দেখতে পেলেই সেগুলো ছোটাছুটি শুরু করে। কেন এমন করে কুকুরগুলো?

অনেক সময়ই ঘটনাটি দেখা যায়। পোষা কুকুর হঠাৎ করেই ছোটাছুটি শুরু করে, লাফাতে থাকে ও লেজ নাড়াতে থাকে। এ ধরনের আচরণকে বিজ্ঞানের ভাষায় জুমিজ বা র‍্যান্ডম অ্যাকটিভিটি পিরিয়ড (এফআরপিএস) বলা হয়। এটা আসলে কুকুরের ভেতর জমে থাকা অতিরিক্ত চাপা শক্তি বা উত্তেজনা প্রকাশের একটি স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর উপায়। তাই এমনটা দেখলে তোমার কুকুরের জন্য চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোয় অবস্থিত একটি পশুচিকিৎসা কেন্দ্রের আচরণবিশেষজ্ঞ অ্যালিসন গার্কেন জানান, কুকুরের এমন উত্তেজিত আচরণের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কুকুর তোমার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আবেগ অনুভব করে। তুমি যখন বাড়ি ফেরো বা ওর সঙ্গে খেলা করো, তখন এদের এই তীব্র আনন্দ ও উত্তেজনা জুমিজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তোমার সঙ্গে এদের যে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। কুকুর জানে, আসলেই ভালো কিছু ঘটবে। তাই এরা এই বিশেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে। আর যখন তুমি বাসায় যাও কিংবা তোমার সঙ্গে দেখা হয়, ওরা তখনই সেই আনন্দ প্রকাশ করে।

এ ছাড়া কুকুরের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বা নিউরোবায়োলজিও এর জন্য দায়ী। আনন্দ বা উত্তেজনার মতো অনুভূতিগুলো এদের মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যা এদের এমন আচরণ করতে উৎসাহিত করে। সুতরাং যখন তোমার কুকুর এমন উন্মত্ত আচরণ করে, তখন বুঝবে, এটা ওদের আনন্দ প্রকাশ করার একটি স্বাভাবিক পদ্ধতি।

আরও পড়ুন

গবেষণায় দেখা গেছে যাঁরা কুকুরের যত্ন নেন, তাঁদের সঙ্গে কুকুর একধরনের বন্ধন বা সম্পর্ক তৈরি করে যা কিছুটা মানবশিশুরা মা–বাবার সঙ্গে যেমন করে, তেমনই। পশুচিকিৎসক গার্কেন বলেন, ‘এ কারণেই আমরা প্রায়ই আমাদের কুকুরকে “পিচ্চি” বলে ডাকি।’

কুকুরের দুই ধরনের স্মৃতিশক্তি থাকে। এর একটি হলো সহযোগী স্মৃতি, যার মাধ্যমে এরা দুটি ভিন্ন জিনিসের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে ও মনে রাখতে পারে। যেমন তোমার গায়ের গন্ধের সঙ্গে খেলার সময় বা আদরের সম্পর্ক। অন্যটি হলো এপিসোডিক স্মৃতি, যা দিয়ে এরা নির্দিষ্ট ঘটনা বা অভিজ্ঞতা মনে রাখে, যেমন কোনো সুস্বাদু খাবার রাখার জায়গাটা মনে রাখা। কুকুর মানুষের ভালো ও খারাপ আচরণের মধ্যেও পার্থক্য করতে পারে। পশুবিশেষজ্ঞদের মতে একটি কুকুর প্রথমে তোমার গন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয়। এদের ঘ্রাণশক্তি অসম্ভব বেশি। অনেক দূর থেকে এরা ঘ্রাণ পায়।

আরও পড়ুন
কুকুরের দুই ধরনের স্মৃতিশক্তি থাকে
ছবি: ওয়ান্সফ্রির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

কুকুররা পরিচিত ও অপরিচিত মুখের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। যদিও এদের দৃষ্টিশক্তি এদের ঘ্রাণ বা শ্রবণের মতো তীব্র নয়। কুকুরের এই সব অনুভূতি আছে বলেই পোষা কুকুর যখন তোমাকে দেখে, তখন আনন্দ অনুভব করে। ভালো স্মৃতিগুলো মনে করে। তখনই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জুমিজ শুরু হয়। আনন্দে কুকুর লাফালাফি করে।

সূত্র: পপুলার সায়েন্স

আরও পড়ুন