যে ১০ ঐতিহাসিক জাদুঘরে জীবনে একবার হলেও যাওয়া উচিত
স্কুলে ইতিহাসের ক্লাসটা হয়তো তোমার কাছে খুব ভালো লাগে না। তারিখ আর নাম মনে রাখতে রাখতে মাথা গরম হয়ে যায়। কিন্তু যদি তুমি ইতিহাস নিয়ে আর বোরিং না হতে চাও, তাহলে যেতে পারো জাদুঘরে। সেখানে ঢুকলে মনে হয় যেন টাইম ট্রাভেলের এক দরজা দিয়ে অন্য এক আশ্চর্য দুনিয়ায় প্রবেশ করছ। চলো, জেনে নিই বিশ্বের এমন সেরা ১০টি জাদুঘরের কথা, যেখানে জীবনে একবার না গেলে তোমার জীবনের একটা বিরাট অ্যাডভেঞ্চার মিস হয়ে যাবে।
১. ব্রিটিশ মিউজিয়াম
প্রতিবছর ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ ভিড় করে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত এই ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। কারণ, ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সেরা ইতিহাস জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৭৫৩ সালে নির্মিত এটি ছিল বিশ্বের প্রথম জাতীয় পাবলিক জাদুঘর। বর্তমানে এর সংগ্রহে পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশ থেকে আনা ৮০ লাখেরও বেশি জিনিসপত্র রয়েছে। প্রাচীন মিসর থেকে শুরু করে ভারতের বহু মূল্যবান নিদর্শন পর্যন্ত এই জাদুঘরের সংগ্রহে আছে।
২. জার্মানির পেরগামন মিউজিয়াম
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের এই পেরগামন জাদুঘরকে বলা হয় মুকুটের রত্ন। কারণ, এটি এমন এক বিরল জাদুঘর, যেখানে বিশাল সব প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভের পূর্ণাঙ্গ মডেল তৈরি করে বা পুনর্নির্মাণ করে রাখা আছে। যা দেখতে লাখ লাখ মানুষ সেখানে যান। ১৯৩০ সালে খোলার পর থেকেই দর্শনার্থীরা এখানে ব্যাবিলন, গ্রিস ও রোমের মতো প্রাচীন সভ্যতার বিশাল স্থাপত্য ও বিখ্যাত গেট এগুলো নিজের চোখে দেখতে পান। এখান সেখানে এর বড় ধরনের সংস্কারকাজ চলছে। যা চলবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।
৩. গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম, কায়রো
পিরামিডের পাশেই অবস্থিত এই গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। এখানে তুতেনখামেনের সমাধির মূল্যবান ধনসম্পদসহ প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ রয়েছে। ফারাও রাজাদের সময়ের সব রহস্য জানতে এটি একটি অবিশ্বাস্য স্থান। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন চলতি বছরের শেষের দিকে হওয়ার কথা রয়েছে।
৪. তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘর, ইস্তাম্বুল
তুরস্কের জাদুঘরটি একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ও সুলতানদের প্রধান বাসস্থান ছিল। এটি শুধু পুরোনো জিনিস দেখার জন্য না। বরং এখানে সুলতানদের মূল্যবান রত্ন, গয়না এবং পবিত্র নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই প্রাসাদ জাদুঘরে ঢুকলে মনে হবে যেন অতীতের রাজকীয় দরবারে দাঁড়িয়ে আছ।
৫. ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব অ্যানথ্রোপোলজি, মেক্সিকো সিটি
এটি হলো মেক্সিকোর সবচেয়ে বিখ্যাত জাদুঘর, যা দেশের আদিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এখানে আজটেক, মায়া ও ওলমেক সভ্যতার মতো প্রাচীন মেক্সিকান সংস্কৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রাখা আছে। বিশেষ করে আজটেক সূর্য পাথরের বিশাল ভাস্কর্যটি খুবই আকর্ষণীয়।
৬. অ্যাক্রোপলিস মিউজিয়াম, এথেন্স
আধুনিক স্থাপত্যের এই সুন্দর জাদুঘরটি বিশেষভাবে অ্যাক্রোপলিসের প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসগুলো দেখানোর জন্য তৈরি। পারথেনন মন্দিরের ভাস্কর্য ও প্রাচীন গ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো এখানে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে যা দেখতে দর্শনার্থীরা বারবার ছুটে যান যেখানে।
৭. টেরাকোটা ওয়ারিয়র্স মিউজিয়াম
চীনে অবস্থিত এই জাদুঘরে মাটির নিচে চাপা থাকা হাজার হাজার প্রমাণ আকারের টেরাকোটা যোদ্ধা, ঘোড়া দেখতে পাওয়া যায়। এই বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংকে মৃত্যুর পরও পাহারা দেওয়ার জন্য। এটি ইতিহাসের এমন এক বিশাল অর্জন, যা হঠাৎ আবিষ্কার হওয়ার পর গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। এই যোদ্ধাদের বিশাল সারি দেখলে সত্যি অবাক হতে হয়। যা দেখলে মনে হয় যেন পুরো একটি সেনাবাহিনী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাথরে পরিণত হয়েছে।
৮. ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব কোরিয়া
কোরিয়ার ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে জানতে এই জাদুঘর তৈরি হয়েছে। প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব থেকে আধুনিক শিল্প পর্যন্ত কোরীয় ঐতিহ্য এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কোরীয় সভ্যতার দীর্ঘ পথচলা এই জাদুঘরে খুব সহজভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৯. ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আফ্রিকান-আমেরিকান হিস্টোরি অ্যান্ড কালচার
২০১৬ সাল থেকে চালু হওয়া এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম জাতীয় জাদুঘর, যা আফ্রিকান-আমেরিকানদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জীবনে তাদের অবদানকে বিশেষভাবে তুলে ধরে। আমেরিকান ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং সমাজে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের সংগ্রাম ও অর্জন এই জাদুঘরে দেখা যায়।
১০. ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইন্ডিয়া
নয়াদিল্লিতে অবস্থিত এই ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইন্ডিয়া হলো ভারতের ইতিহাসের এক বিশাল জাদুঘর। জাদুঘরটি ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। এখানে হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শন থেকে শুরু করে মোগল আমলের অমূল্য রত্ন এবং শিল্পকলা দেখতে পাওয়া যায়। ভারতের মতো বিশাল দেশের পুরো ইতিহাসকে এক ছাদের নিচে জানতে হলে এই জাদুঘরে একবার যাওয়া খুবই জরুরি।
সূত্র: দ্য কালেক্টর