ইতালি কীভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পেল

বিশ্বকাপে ইতালি! কথাটা শুনেই চোখের সামনে কি ভাসছে ফুটবল পায়ে ছুটে যাওয়া ১১ জন ফুটবলারের কথা? জিয়ানলুইজি বুফন, ফ্রান্সেস্কো টট্টিদের নিয়ে গড়া দলটার কথা? তাহলে ভুল করছ। ফুটবলকে ধ্যান-জ্ঞান করা ইতালি ফুটবল বিশ্বকাপে নেই প্রায় ১২ বছর হতে চলল। আর সেখানে তাদের ক্রিকেট দল জায়গা করে নিল আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। হ্যাঁ, ফুটবলের দেশ ইতালিকে দেখা যাবে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে!

ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের আবেদন বিশ্বজুড়ে আছে বহুদিন ধরেই। টি-টোয়েন্টির জগতে পথচলা আছে কমবেশি প্রতিটি দেশেরই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাই নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। তারই ফসল ইতালি। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে আয়োজিত ২০২৬ বিশ্বকাপে সুযোগ পাবে মোট ২০ দল। এর মধ্যে সরাসরি সুযোগ পেয়েছে ১২ দল। বাকি আট দল উঠে আসবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোয়ালিফায়ার খেলে। আমেরিকা অঞ্চল থেকে কানাডা জায়গা করে নিয়েছে। ইউরোপিয়ান কোয়ালিফায়ার শেষ হলো ১২ জুলাই। আর সেখান থেকেই বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করেছে ইতালি ও নেদারল্যান্ডস। স্কটল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে ইতালি উঠে এসেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেও নেট রান রেটের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ইতালি।

আরও পড়ুন
ইতালিকে দেখা যাবে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে

ফুটবলের জন্য সমাদৃত ইতালিতে ক্রিকেটের সূচনা হয়েছে বহু বছর আগে। ইতালির জনপ্রিয় ক্লাব এসি মিলান ফুটবলের সঙ্গে খেলত ক্রিকেটও। কিন্তু ভালো খেলোয়াড়ের অভাবে ইতালির বেড়ে ওঠা হচ্ছিল না। আর সেই সমীকরণ বদলে যায় অজি ক্রিকেটার জো বার্নসের অন্তর্ভুক্তির পর। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা জো বার্নস তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর পর যোগ দেন ইতালি জাতীয় দলে। মায়ের দিক থেকে তিনি ইতালিতে খেলার যোগ্য ছিলেন শুরু থেকেই। ভাইয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে পরিণত হন পুরোদস্তুর ইতালিয়ান খেলোয়াড়ে। ইতালির স্বর্ণযুগ শুরু হয় সেখান থেকেই।

আঞ্চলিক বাছাইপর্ব জিতে ইতালি উঠে আসে ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বে। ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বে মুখোমুখি হয়েছিল পাঁচ দল। গত বিশ্বকাপে খেলা নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ড। আর তিনটি কোয়ালিফায়ার থেকে উঠে আসা ইতালি, জার্সি ও গার্নসি।

ইতালি শুধু করে গার্নসিকে হারিয়ে। ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে টুর্নামেন্টের শুভসূচনা করে তারা। কিন্তু জার্সির বিপক্ষে ম্যাচ ভেসা যায় বৃষ্টিতে। ফলে ইতালির শেষ দুই ম্যাচ বাকি ছিল পুরো গ্রুপের শক্তিশালী দুই দলের বিপক্ষে। স্কটল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডস। ইতালি খুব ভালোভাবেই জানত, এদের একজনকে সরাতে পারলেই বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত। তাই তো প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে ছুড়ে দিল ১৬৮ রানের টার্গেট। সেই টার্গেট পুরো ২০ ওভার খেলেও পৌঁছতে পারল না স্কটল্যান্ড। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই যেন বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আজ্জুরিদের। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। আর সামান্য একটা ভয়।

আরও পড়ুন

কোয়ালিফায়ারের শেষ দিনটা ছিল কোনো থ্রিলারের মতো! ইতালি, নেদারল্যান্ডস আর জার্সি—তিন দল যেন রোলার কোস্টারে চড়েছিল বিশ্বকাপের দুটি মাত্র জায়গার জন্য। দিনের শুরুতে জার্সি অঘটনই ঘটিয়ে ফেলল, টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো হারিয়ে দিল স্কটল্যান্ডকে। একেবারে শেষ বলে ১ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে জার্সি। ব্যস, চাপ এসে পড়ল ইতালির ঘাড়ে, শেষ ম্যাচে তাদের লড়তে হবে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। ম্যাচে নামার আগে সমান সমান হয়ে গেছে ইতালি আর জার্সির পয়েন্ট। ইতালি অবশ্য এগিয়ে আছে নেট রান রেটে। সেটাই বজায় রাখতে হবে। বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারলে কমে যাবে রান রেট, তাদের ছাড়িয়ে যাবে জার্সি। ছিটকে যাবে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট। আবার নেদারল্যান্ডসকে হারাতে পারলে ইতালির সঙ্গী হবে জার্সি। ফলে ডু অর ডাই ম্যাচ খেলতে মাঠে নামল ইতালি।

প্রথমে ব্যাট করে ইতালি করেছিল মাত্র ১৩৪ রান

প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে করতে পারল মাত্র ১৩৪ রান। এই রান যদি ১৪ ওভারের মধ্যে টপকে যেতে পারে, তবেই বিশ্বকাপ থেকে টা টা বাই বাই। চাপের মধ্যে ভেঙে পড়ল ইতালি। হারিয়ে ফেলল বলের গতি, লাইন-লেংথ। কিন্তু উইকেট তুলতে না পারলেও রান ঠিকই আটকে রেখেছিল। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের কাছে ছিল না ম্যাচ জেতার তাড়া। ম্যাচ জিতলেই প্রথম স্থানে থেকে বিশ্বকাপে সুযোগ পাবে ডাচ দল। তাই তো কোনো তাড়াহুড়া নেই, রিস্কি শট নেই। নিজের মনে খেলে গেছে তারা। মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ১৬ ওভার ২ বলে ১৩৫ রান করে নেদারল্যান্ডস। আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ইতালির বিশ্বকাপযাত্রা।

আরও পড়ুন
বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটের জন্য সবুজ সংকেতই বটে

নেদারল্যান্ডসের স্পোর্টপার্ক ওয়েস্টভিয়েটের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছিল, এ শুধু এক জয় নয়, এ এক স্বপ্নের শুরু মাত্র! অস্ট্রেলিয়া থেকে পাড়ি দিয়ে আসা জো বার্নস, ইতালিতে অভিবাসী হয়ে আসা লঙ্কান, পাকিস্তানি, ভারতীয় খেলোয়াড়দের অর্জন। আবেগাপ্লুত অধিনায়ক জো বার্নস বললেন, ‘এই দলটার জন্য আমি অসম্ভব গর্বিত। স্কটল্যান্ডের মতো দারুণ একটা দলকে হারানো, আর নেদারল্যান্ডসের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে চাপের মধ্যে মাথা ঠান্ডা রাখা, এটা প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। বিশ্বকাপের পৌঁছে গেছি, এটা এখনো আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে! আশা করি, ইতালিয়ান ক্রিকেটের জন্য এটা কেবল শুরু।’

আজ্জুরিদের বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটের জন্য সবুজ সংকেতই বটে। আইসিসি যখন চাইছে ক্রিকেটকে গুটিয়ে নিতে, তখন ইতালির মতো দেশ জানান দিচ্ছে, আসুন। ক্রিকেটের পরিধি বাড়ান। কে জানে, হয়তো ইতালির পথ ধরে একদিন ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনাও খেলবে বিশ্বমঞ্চে।

আরও পড়ুন