আইনস্টাইনের ওপর নজর রেখেছিল এফবিআই
পৃথিবীর সেরা একজন বিজ্ঞানীর নাম বললে সবার আগে আসবে আলবার্ট আইনস্টাইনের নাম। এমনকি পৃথিবীর সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের নামের তালিকা করলেও অনেকে সেই তালিকায় এক নম্বরে রাখবেন তাঁকে। জিনিয়াস শব্দের অপর নাম আইনস্টাইন। ‘রিলেটিভিটি’ ও ম্যাস এনার্জি অ্যাকুইভেলেন্স নামের দুটি তত্ত্বের জন্য তিনি পৃথিবীবিখ্যাত। তিনি স্ট্যাটাস্টিকাল ও কোয়ান্টাম মেকানিকস নিয়ে কাজ করেছেন এবং ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্টের ব্যাখ্যার জন্য ১৯২১ সালে নোবেল পুরস্কার পান। খামখেয়ালিপূর্ণ স্বভাবের জন্য বিখ্যাত হলেও আইনস্টাইনের এমন কিছু দিক আছে যা আমাদের অনেকের হয়তো অজানা। নিচে এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ না করা
আইনস্টাইন জাতিতে ছিলেন জার্মান ও ইহুদি। যখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে, তখন জার্মানিতে নাৎসি পার্টির জয়জয়কার শুরু হলো। নাৎসি দলের নেতা হিটলার ঘোষণা করলেন যে ইহুদিরা জার্মানির শত্রু। এর ফলে জার্মানিজুড়ে শুরু হয় ইহুদিদের বিরুদ্ধে নির্যাতন। সে সময় আইনস্টাইন আমেরিকা মানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে একদল ইহুদি ফিলিস্তিন নামের দেশটাকে কৌশলে দখল করে সেটার নাম দেয় ইসরায়েল। তারা ঘোষণা করে যে দেশটি হবে ইহুদিদের বাসভূমি। ১৯৫২ সালে ইসরায়েল দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেয় আইনস্টাইনকে। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আইনস্টাইনকে এই প্রস্তাব প্রদান করা হয়। যদিও আইনস্টাইন সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ আবিষ্কার
আইনস্টাইন কেবল বিজ্ঞানী ছিলেন না, সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন উদ্ভাবকও। ১৯২০–এর দশকে আইনস্টাইন ও লিও সিজলার্ড মিলে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য পরিবেশবান্ধব ফ্রিজের ধারণা তৈরি করেন যেটিতে ফ্রেয়নের বদলে নিরাপদ গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ ছিল। এতে বিদ্যুৎও লাগত কম।
আমেরিকার একজন সিভিল রাইটস কর্মী
আইনস্টাইন কেবল সামরিকতন্ত্র বিলোপ বা যুদ্ধের বদলে শান্তির জন্য লড়াই করেননি, একই সঙ্গে তিনি বৈষম্যের বিরুদ্ধেও লড়াই করে গেছেন। তিনি একবার এমন একদল কিশোরদের জন্য লড়াই করেছিলেন, যাদের ভুলবশত অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
এফবিআই আইনস্টাইনকে কমিউনিস্ট হিসেবে সন্দেহ করত
যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর আইনস্টাইন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের নজরে পড়ে যান। এর কারণ ছিল, তিনি সব সময় সামাজিক বৈষম্য ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। সেসময় তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধ, রচনা ও বক্তৃতায় এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। এ কারণে এফবিআই আইনস্টাইনকে কমিউনিস্ট হিসেবে সন্দেহ করত। তাঁর ওপর নজর রেখেছিলো।
বর্ণবাদী হিসেবে অভিযুক্ত
আইনস্টাইনের ভ্রমণবিষয়ক একটি ডায়েরি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে, যদিও ভ্রমণের শুরুর সময় ছিল ১৯২২ সাল। অনেক আগে লেখা হলেও এটা প্রকাশিত হয় অনেক অনেক পরে। আর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনস্টাইনকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কারণ, এই ডায়েরিতে তিনি এশিয়ার বিভিন্ন জাতি নিয়ে বেশ বাজে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি চীন জাতি সম্বন্ধে তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, এরা খুব নোংরা এবং অস্থির। শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের নিয়ে লিখেছিলেন, এদের চাওয়া খুব কম, আর এরা কাজ করেও খুব কম। জাপানীদের বুদ্ধিবৃত্তিক চাওয়া নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন।
আইনস্টাইনের প্রথম সন্তান নিয়ে রহস্য থেকেই গেছে
আইনস্টাইনের তিনটি সন্তান ছিল। এর মধ্যে দুটি ছিল পুত্রসন্তান, যার একজন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক হয়েছিলেন। অন্য সন্তান সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সন্তানটি মানসিক সমস্যায় ভুগতেন। তবে আইনস্টাইনের জীবনের এক রহস্যময় অধ্যায় হচ্ছে তাঁর মেয়ে। তাঁর প্রথম স্ত্রীর এক চিঠিতে জানা যায়, ১৯০২ সালে আইনস্টাইনের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। যার নাম ছিল লেসরেয়েল। শুধু জানা যায়, এক বছর বয়সে সেই ছোট্ট মেয়ের স্কারলেট ফিভার নামে এক অসুখ হয়েছিল।