জানা–অজানা রকিব হাসান
১৯৮৫ সালে রকিব হাসান যখন কিশোরদের জন্য ‘তিন গোয়েন্দা’ু লিখতে শুরু করেন, তখন আমি কিশোর নই, কলেজে পড়ি। তবে রকিব হাসানের লেখা সব বই তত দিনে পড়ে ফেলেছি এবং তাঁর ভক্ত হয়ে গেছি। বিশেষ করে তাঁর ড্রাকুলার অনুবাদ এবং শিকারকাহিনিগুলো আমার দারুণ লাগত। স্কুলজীবনে বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে তাঁর ড্রাকুলা পড়ে এতটাই ভয় পেয়েছিলাম, রাতে একা একা বাসায় ফিরতে ভীষণ ভয় লাগছিল। অনেকেই পরবর্তী সময়ে ড্রাকুলা অনুবাদ করেছেন; কিন্তু রকিব হাসানের অনুবাদের ধারেকাছে পৌঁছার ক্ষমতা কারও ছিল না। রকিব হাসানের তিমির প্রেম বইটিও আমাকে দারুণ টেনেছে। আর তাঁর অনূদিত টম সয়্যার পড়ে এতটাই মুগ্ধ হই, আমারও মনে ইচ্ছা জাগে ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করব। আমার প্রয়াত মেজ ভাই ছিল সেবা প্রকাশনীর বইয়ের বিরাট ভক্ত। মূলত সে-ই সেবার নতুন নতুন বই ভাড়া করে আনত এবং আমি সেই সুযোগে বইগুলো পড়ে ফেলতাম। স্কুল ও কলেজজীবনে থাকতেই সেবা প্রকাশনীর সব বই আমার পড়া সারা। ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, রহস্য উপন্যাস, কিশোর ক্ল্যাসিক, ওয়েস্টার্ন, শিকারকাহিনি, জুলভার্ন এবং অবশ্যই ‘তিন গোয়েন্দা’ ও ‘টারজান’ সিরিজের বই। সেবার লেখকদের মানুষ মনে হতো না, মনে হতো দেবতা! ইচ্ছা জাগত তাঁদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করব। তাঁরা তাঁদের লেখনী দিয়ে এতটাই মুগ্ধ করে রেখেছিলেন আমাকে! অবশ্য তখন সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না একদিন আমি নিজেই সেবার লেখক হয়ে যাব এবং পূজনীয় লেখকদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ ও সৌভাগ্য হবে।
রকিব হাসানের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৯১ সালের শরতের এক ঝলমলে বিকেলে। সেদিন ছিল শনিবার। আমি দুটো লেখা নিয়ে গিয়েছিলাম শেখ আবদুল হাকিম ও নিয়াজ মোর্শেদের জন্য। একটি গল্প, অপরটি ফিচার। রকিব হাসানের পাশাপাশি এই দুই লেখকের প্রতিও আমার ছিল পরম শ্রদ্ধা। হাকিম ভাইয়ের কামিনী এবং গডফাদার-এর অনুবাদ পড়ে আমি তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্ত। আর নিয়াজ ভাইয়ের ক্ল্যাসিক অনুবাদগুলো তো ছিল অনবদ্য। রহস্য পত্রিকার গল্প–উপন্যাস বিভাগের দায়িত্ব ছিল হাকিম ভাইয়ের। নিয়াজ ভাই এবং রকিব ভাই মিলে ফিচার বিভাগ সামলাতেন। আমি রকিব ভাইয়ের জন্য ওই সময় কোনো লেখা নিয়ে যাইনি, বাড়তি কোনো ফিচার অনুবাদ করা ছিল না বলে।
তিন সুপারস্টার লেখকের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন রহস্য পত্রিকার সমন্বয়কারী শেখ মহিউদ্দিন ভাই। রোগা, শ্যামলা হাকিম ভাই আমার লেখা গল্পটির এক পাতা পড়ে মন্তব্য করলেন, ‘দেখে তো মনে হচ্ছে ভালোই। রেখে যান। তিন মাস পরে খোঁজ নিয়েন লেখাটা ছাপা হলো কি না।’ স্বল্পভাষী নিয়াজ ভাই শুধু মাথা ঝাঁকালেন, যার অর্থ হতে পারে—রেখে যাও। পরে দেখব। তবে যাঁর সঙ্গে আমার কথা বলার সবচেয়ে বেশি ইচ্ছা হচ্ছিল, আমার কিশোরবেলার হিরো, সেই রকিব হাসান আমাকে পাত্তাই দিলেন না। আমার আদাবের জবাবে সামান্য মাথা দুলিয়ে লেখা সম্পাদনার কাজে ফিরে গেলেন। আমি তাঁর সামনে চুপচাপ বসে রইলাম। তিনি লেখাটি পড়া শেষ করলেন এবং ‘কিচ্ছু হয় নাই’ বলে ওটা ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাঁর পাশে বসা হাকিম ভাইয়ের সঙ্গে গপ্পো জুড়ে দিলেন।
কোনো কোনো সংখ্যায় ১৩-১৪টি লেখাও ছাপা হয়েছে আমার। একবার রকিব ভাই হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘এবারের রহস্য পত্রিকায় লিখে অনীশ আমাদের বেতনের চেয়েও বেশি বিল নিয়ে গেল!’ সেই সময় রহস্য পত্রিকার সহকারী সম্পাদকদের বেতন ছিল ২৭৫০ টাকা।
টকটকে ফরসা গায়ের রঙের রকিব হাসান উচ্চ স্বরে কথা বলতেন। অন্যরা তাঁর কথা শুনছে কি না, সেদিকে খেয়ালও করতেন না। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে প্রথম দর্শনেই তাঁকে আমার অপছন্দ হয়ে গেল। মনে হলো অত্যন্ত অহংকারী একজন মানুষ, যিনি নিজের মতামতকেই একমাত্র প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তখন অবশ্য কল্পনাতেও ছিল না এই মানুষটি একদিন হয়ে উঠবেন আমার বন্ধুর মতো এবং আমরা একসঙ্গে চলব অনেকটা পথ।
আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে রকিব হাসান জনপ্রিয়তার স্বাদ পেতে শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকে সেই জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়ে যায়। তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা’ প্রতি মাসে সাত হাজার কপি ছাপা হতো। কোনো কোনো বইয়ের এডিশন তিন দিনেও শেষ হয়ে গেছে। কাজী আনোয়ার হোসেনের ‘মাসুদ রানা’র পর তাঁর বই-ই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হতো সেবা প্রকাশনীতে। তবে রকিব ভাইয়ের কাছ থেকে জেনেছি, ‘তিন গোয়েন্দা’র চেয়েও তাঁর সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বই ছিল ড্রাকুলা। ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ধ্বংসপাহাড়-এর পর ড্রাকুলা ছিল সেবা প্রকাশনীর সর্বাধিক এডিশনের বই। নব্বই দশকের শুরুতে তিনি ত্রৈমাসিক রয়্যালটি পেতেন নব্বই হাজার টাকার বেশি। দুই হাতে লিখতেন। সঙ্গী ছিল টাইপরাইটার। পরে কম্পিউটার। তিনি আমাকে একদিন বলেছিলেন, ‘সারা জীবন টাইপরাইটার আর কম্পিউটারে লিখতে লিখতে হাতে লিখতে ভুলেই গেছি। এমনকি ব্যাংকের চেক বইতে সই করতে গেলেও আঁকাবাঁকা হয়ে যায় সই।’
রকিব ভাই ছোট-বড় মিলিয়ে মাসে ছয়টি বই লিখেছেন এমন রেকর্ডও আছে। আমি তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এত লেখার স্ট্যামিনা কোথায় পান?’ তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘এ জগতে টিকে থাকতে হলে নিয়মিত লিখতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। লেখায় ছাড় দিয়েছেন কি আপনি শেষ। একবার বিরতিতে গেলে আর কোনো দিনই আগের মতো করে ফিরে আসতে পারবেন না।’
রকিব হাসান কোনো এক অভিমানে সেবা প্রকাশনী ছেড়ে চলে যান সম্ভবত ২০০৩ বা ২০০৪-এ। তারপর তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগটা ছিল মূলত টেলিফোনে। মাঝেমধ্যে জরুরি প্রয়োজনে আমার সঙ্গে দেখাও করতেন।
রহস্য পত্রিকার অন্যতম সহকারী সম্পাদক ছিলেন রকিব হাসান। তাঁর এবং হাকিম ভাইয়ের কাছ থেকে লেখা সম্পাদনার অনেক কিছুই শিখেছি। রকিব ভাই শুরুতে আমাকে কোনো কাজ দেননি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষ। লেখা দিয়ে তাঁর মন জয় করা খুবই কঠিন ছিল। তিনি আমাকে লেখা অনুবাদ করতে দেওয়ার আগে হাকিম ভাই ও নিয়াজ ভাইয়ের কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন, আমার ওপরে ভরসা করা চলে কি না। সবুজসংকেত পাওয়ার পর আমাকে রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকা থেকে একটি ফিচার অনুবাদ করতে দিয়েছিলেন। পরে আমার ওই লেখা দিয়েই তিনি সেবারের রহস্য পত্রিকার কভার তৈরি করান। এরপরে আমাকে দিয়ে অসংখ্য লেখা লিখিয়েছেন রকিব ভাই। ধারাবাহিকভাবে দুটো বইও অনুবাদ করিয়েছিলেন। একটি ছিল জিম করবেটের বনের গল্প, অপরটি জেরাল্ড ডুরেলের মানবজন্তু। যে রকিব ভাই একদা আমাকে তেমন পাত্তা দেননি, একসময় সেই আমি হয়ে উঠেছিলাম তাঁর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অনুবাদক। রহস্য পত্রিকার সিংহভাগ ফিচার আমাকে দিয়ে অনুবাদ করাতেন তিনি। আমি তখন অর্ক দাসগুপ্ত, আনন্দ সিদ্ধার্থসহ অসংখ্য ছদ্মনাম ব্যবহার করতাম। কোনো কোনো সংখ্যায় ১৩-১৪টি লেখাও ছাপা হয়েছে আমার। একবার রকিব ভাই হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘এবারের রহস্য পত্রিকায় লিখে অনীশ আমাদের বেতনের চেয়েও বেশি বিল নিয়ে গেল!’ সেই সময় রহস্য পত্রিকার সহকারী সম্পাদকদের বেতন ছিল ২৭৫০ টাকা। তাঁরা সপ্তাহে তিন দিন অফিস করতেন। বিকেলে। তুমুল আড্ডা হতো। বেশির ভাগ সময় কথা বলতেন রকিব ভাই। আড্ডা জমিয়ে তুলতে পারতেন অবলীলায়। সবচেয়ে কম কথা বলতেন নিয়াজ মোর্শেদ। আপনমনে নিজের কাজ করে যেতেন। অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি, আমি তাঁকে কোনো দিন হাসতে দেখিনি। এমন নয় যে তিনি ছিলেন গোমড়ামুখো। তবে খুব গম্ভীর থাকতেন। তরল স্বভাবের ছিলেন হাকিম ভাই। তবে আড্ডার মধ্যমণি হিসেবে সব সময়ই দেখেছি রকিব হাসানকে। ঘর ফাটিয়ে ঠা ঠা করে হাসতেন। একবার কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই বাসযাত্রার বর্ণনা দিতে গিয়ে বললেন, ‘ঢাকা থেকে কক্সবাজার–যাত্রার এই ভ্রমণকাহিনি নিয়েই দুটো “তিন গোয়েন্দা” লিখে ফেলা যায়।’ লিখেওছিলেন।
রকিব ভাই সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না তিনি গোস্টরাইটার হিসেবে প্রচুর বই লিখেছেন। সেবা থেকে তাঁর প্রথম বই ড্রাকুলা বের হলেও তিনি শুরু করেছিলেন ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের কুউউ! দিয়ে। কাজীদাকে আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, রকিব ভাইয়ের লেখা তাঁর কেমন লাগে। তিনি বলেছিলেন, ‘ও তো পুরোটাই আমার হাতে গড়া লেখক। শুরুতে রকিব অনেক ভুলভাল লিখত। দুই ভাইকে লিখত “দোনো ভাই”। আঞ্চলিকতার একটা ছাপ চলে আসত ওর লেখার মধ্যে। আমি ওকে বলতাম, “আপনি তো গল্প বলেন চমত্কার। এ রকম সাবলীলভাবে গল্প বলার ঢঙে লিখলেই হয়।” ও পেরেছে, তাই সেবার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হয়েছে। আসলে ন্যাক থাকা চাই। নইলে শত ধাক্কাধাক্কিতেও লাভ হবে না।’
কাজীদাকে রকিব হাসান গুরু মানতেন। তিনি কাজীদার ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের বেশ কয়েকটি বই লিখে দিয়েছিলেন ছায়ালেখক হিসেবে। কুউউ! ছাড়াও লেনিনগ্রাদ, বুশ পাইলট, অমানুষ ইত্যাদি তাঁর লেখা। (আমি তাঁকে জেমস হেডলি চেজের অনেকগুলো বই দিয়েছিলাম রহস্য উপন্যাস লেখার জন্য। তত দিনে তিনি সেবা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাবাজারে লেখার চেষ্টা করছেন) সেবা থেকে প্রকাশিত আমার অত্যন্ত প্রিয় রহস্য উপন্যাস দাঁড়াও, পথিক কাজীদার নামে বের হলেও ওটার মূল লেখক রকিব হাসান। আমি একদিন বইটির খুব প্রশংসা করছিলাম দেখে তিনি মিটিমিটি হাসছিলেন। তারপর বললেন, ‘ওটা আমার লেখা বই। জেমস হেডলি চেজের কাম ইজি, গো ইজি অবলম্বনে লেখা।’
রকিব হাসান কোনো এক অভিমানে সেবা প্রকাশনী ছেড়ে চলে যান সম্ভবত ২০০৩ বা ২০০৪-এ। তারপর তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগটা ছিল মূলত টেলিফোনে। মাঝেমধ্যে জরুরি প্রয়োজনে আমার সঙ্গে দেখাও করতেন। ২০০৭ সালে আমি সিলেটবাজার নামে একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। অফিসটা ছিল নয়াপল্টনে। ওখানে আসতেন রকিব ভাই। রকিব ভাইয়ের মতো লেখক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন দেখে আমার কলিগরা থ হয়ে যেত।
রকিব ভাই বাংলাবাজারে লেখার তোড়জোড় করছিলেন। প্রায়ই আমাকে ফোন করতেন বাংলাবাজারের প্রকাশকদের হালহকিকত জানার জন্য। ওখানকার প্রকাশকেরা সেবা প্রকাশনীর মতো নিয়মিত রয়্যালটি দেন না শুনে তিনি বেশ হতাশই হয়েছিলেন। তাঁকে পরামর্শ দিই এককালীন পেমেন্ট নিতে, যেটা আমি একদম শুরু থেকে করে আসছি। তাতে ঠকার চান্স থাকে কম। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তা–ই করবেন।
সেবা থেকে চলে আসার পর রকিব হাসানের মতো জনপ্রিয় লেখকেরও নতুন পরিবেশে চলার পথটি খুব একটা মসৃণ ছিল না। আমি তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাঁর হতাশা, রাগ, ক্ষোভ সব লক্ষ করেছি। তবে হাল ছাড়ার পাত্র তিনি ছিলেন না। অহংকারী মানুষ ছিলেন। তবে আত্মবিশ্বাসেরও কোনো ঘাটতি ছিল না। তিনি বলতেন, ‘এই খারাপ সময়টা আমি ঠিকই কাটিয়ে উঠব।’ তা তিনি পেরেছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে স্বমহিমায় আবার আবির্ভাব ঘটে রকিব হাসানের। নতুন পাণ্ডুলিপির জন্য বাংলাবাজারের প্রকাশকেরা লাইন দিয়ে যেতে শুরু করেন তাঁর বাসাবোর বাসায়। তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা’ নিয়ে টিভিতে সিরিয়ালও হয়েছে। তবে সেই নাটক দেখে খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন রকিব ভাই। বলেছিলেন, ‘আমার “তিন গোয়েন্দা”কে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আর কোনো দিন কাউকে “তিন গোয়েন্দা” দিয়ে টিভি নাটক বানানোর অনুমতি দেব না।’
রকিব হাসান তাঁর জীবদ্দশায় লেখক হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। অর্থ-যশ-খ্যাতি লাভ করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও হুমায়ূন আহমেদের মতোই। কিন্তু প্রচণ্ড অসুস্থতায় আর যখন লিখতে পারছিলেন না, তাঁর কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল হাহাকার, ‘আমি আর লিখতে পারছি না, অনীশ। সারাক্ষণ আমার হাত কাঁপে। কি–বোর্ডে আঙুল স্থির থাকে না। অথচ এখনো কত লেখা বাকি রয়ে গেছে। আরও কত কিছু দেওয়ার ছিল আমার পাঠকদের!’
২০২২ বা ২০২৩ সালের দিকে টেলিফোনে রকিব ভাইয়ের সেই আকুতি আমি যেন এখনো শুনতে পাই। আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। তাঁর সঙ্গে আমার আর কথা হয়নি। ওনাকে কয়েকবার ফোন করেছিলাম। উনি ধরেননি। অথবা ধরতে পারেননি। দুটো কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছিল তাঁর। স্মৃতিশক্তিও লোপ পেয়ে যাচ্ছিল। নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে গর্ব করতেন রকিব ভাই। বলতেন, কোনো কিছুই ভোলেন না তিনি। নানা আইডিয়া সারাক্ষণ গিজগিজ করত মাথায়। ১৯৮৪ সালে রহস্য পত্রিকা নতুন করে চালু করা কিংবা ১৯৮৫ সালে ওয়েস্টার্ন বই বের করার আইডিয়া তাঁরই ছিল। এই মানুষটি এখন আর নেই, তবে ‘তিন গোয়েন্দা’সহ অসাধারণ সব বইয়ের লেখক-অনুবাদক হিসেবে পাঠকমনে চিরজাগরূক হয়ে রইবেন রকিব হাসান!