এশিয়ান কাপের টিকিট পেতে কী দরকার বাংলাদেশের
হংকংয়ের সঙ্গে শেষ সেকেন্ডে গোল হজম করে নিশ্চিত পয়েন্ট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে এমন দৃশ্য বুকে পাথর দিয়ে মেনে নিতে হয়েছে সমর্থকদের। হামজা চৌধুরী, শমিত সোমের গোলে ফিরে আসার গল্প লিখেও যেন শেষ করতে পারল না বাংলাদেশ। ৭ গোলের ম্যাচে হারই শেষ সম্বল হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। এই হার দিয়ে বাংলাদেশের জন্য এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠল।
২০২৭ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরবে বসতে চলেছে এশিয়ান কাপের ১৯তম আসর। এবারের আসরে সুযোগ পাবে ২৪টি দল। বাংলাদেশ বর্তমানে আছে এশিয়া কাপের তৃতীয় বাছাইপর্বে। এই পর্যায়ে এসে বাংলাদেশের জন্য সমীকরণটা বেশ সহজ। চার দলের মধ্যে সর্বোচ্চ পয়েন্ট থাকবে যাদের ঝুলিতে, তারাই সুযোগ পাবে এশিয়ান কাপে। কাগজে–কলমে শক্তিমত্তায় পার্থক্য থাকলেও হংকং, সিঙ্গাপুর আর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলায় তেমন পার্থক্য ছিল না। যে কারণে এশিয়ান কাপের বিশাল আশা নিয়ে দলে যোগ দিয়েছিলেন পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়েরা। কিন্তু সেই আশা মিইয়ে গেছে প্রথম তিন ম্যাচের পারফরম্যান্সে।
প্রথম তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট মাত্র ১। সেটা এসেছিল একদম প্রথম ম্যাচে, ভারতের বিপক্ষে। ভারতের মাটিতে সেই ম্যাচে ০-০ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল হামজা চৌধুরীর। কিন্তু কে জানত, সেই ম্যাচটাই হয়ে রইবে বাংলাদেশের একমাত্র পয়েন্ট? দ্বিতীয় ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছিল ১-২ ব্যবধানে। ডিফেন্সের হাস্যকর ভুল, আর আক্রমণ ভাগ শাণিত না হওয়ার অভাব ভুগিয়েছিল বাংলাদেশকে। যে কারণে ভালো খেলেও নিজেদের মাটি থেকে কোনো পয়েন্ট পায়নি বাংলাদেশ।
হংকং ম্যাচের দগদগে স্মৃতি তো এখনো সবার মনে। প্রথমে এগিয়ে গিয়েও বাংলাদেশকে ম্যাচ শেষ করতে হয়েছে হার দিয়ে। আর সেই হারটাও এসেছে অসাধারণ এক কামব্যাকের পর। কামব্যাক করেও যেন তা ধরে রাখতে পারেনি ফুটবলাররা। আনন্দ উদ্যাপনের মধ্যে শেষ মুহূর্তের গোলে বাংলাদেশের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সব পয়েন্ট। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ এখন রয়েছে পয়েন্ট টেবিলে সবার নিচে।
পয়েন্ট টেবিলের অবস্থান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য সমীকরণ কতটা জটিল। গ্রুপের চার দলের কাছেই রয়েছে তিনটি করে ম্যাচ। এর মধ্যে দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে হংকং। বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচও তাদের বিপক্ষে, তাদেরই মাটিতে। বাংলাদেশকে যদি পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠতে হয়, তবে জয়ের কোনো বিকল্পই নেই। শুধু হংকং নয়, সিঙ্গাপুর আর ভারত, তিন দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশকে জিততে হবে। সেটাও একটা ভালো ব্যবধানে।
শুধু জিতলেই যে সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে তা নয়। বাংলাদেশ পরবর্তী তিন ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের পয়েন্ট হবে ১০। তাই নজর রাখতে হবে হংকংয়ের দিকেও। সিঙ্গাপুর আর ভারতের বিপক্ষে যাতে হংকং জিততে না পারে, সেই আশাও করতে হবে বাংলাদেশকে। ভারতকে হারাতে পারলে ভারতকে নিয়ে কোনো চিন্তা থাকবে না। কিন্তু সিঙ্গাপুরও হতে পারে মাথাব্যথার কারণ। তারাও যত কিছুই করুক না কেন, যাতে ১০ পয়েন্ট ছুঁতে না পারে, সেদিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
অর্থাৎ সমীকরণ অনুযায়ী বাংলাদেশকে জিততে হবে প্রতিটি ম্যাচে। হংকংকে হারতে হবে বাকি দুই ম্যাচের একটিতে। সিঙ্গাপুরকে হারতে বা ড্র করতে হবে বাকি দুই ম্যাচে। তবেই বাংলাদেশের জন্য এশিয়ান কাপ খেলার সূক্ষ্ম আশা বেঁচে থাকবে। তবে সবকিছুর আগে নিজেদের খেলার দিকে নজর দিতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ, বাকি তিন ম্যাচ না জিততে পারলে হাজারও সমীকরণ বাংলাদেশকে মূল পর্বে তুলতে পারবে না। এখন তাকিয়ে থাকা বাংলাদেশ দলের দিকে, প্রশ্নবিদ্ধ ট্যাক্টিকস বদলে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা দলকে সংঘবদ্ধ করতে পারেন কি না। নাকি বাংলাদেশকে আবারও আশাভঙ্গ হতে হয় বড় কোনো মঞ্চের স্বপ্নে।