অ্যানিমে সুপারহিরোর নামে নতুন প্রজাতির মাছের নাম
বিজ্ঞানীরা যখন নতুন কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের খোঁজ পান, আগে চিন্তা করেন নাম নিয়ে। সাধারণত যিনি প্রথম সেটা আবিষ্কার করেন, তাঁর নাম অনুসারেই নতুন আবিষ্কৃত জীবটির নাম রাখা হয়। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা সেই নিয়ম মানলেন না। তাঁরা বিশ্বের জনপ্রিয় অ্যানিমে ‘ড্রাগন বল জেড’–এর সুপারহিরোর নামে একটি নতুন মাছের প্রজাতির নামকরণ করেছেন। কিন্তু এত নাম থাকতে কেন একটি কাল্পনিক চরিত্রকে বেছে নেওয়া হলো?
সাতটি জাদুর ড্রাগন বল খোঁজার গল্প নিয়ে লেখা ‘ড্রাগন বল’ মাঙ্গাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। প্রকাশের পরপরই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় এটি। ১৯৮৬ সালে ‘ড্রাগন বল’ টিভি সিরিজ মুক্তি পায়। সেই সময় থেকে কমিকস ও অ্যানিমে জগতের সুপারহিরো গোকুর জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে। এবার সেই গোকুর নামেই বিজ্ঞানীরা এই নতুন মাছের প্রজাতির নাম দিয়েছেন।
জাপানের ওকিনাওয়ার ইশিগাকি-জিমা দ্বীপের কাছে প্রায় ২১০ মিটার গভীর পানিতে এই ছোট মাছের খোঁজ মেলে। বিজ্ঞানীরা এর বৈজ্ঞানিক নাম রেখেছেন ভ্যান্ডারহোর্স্টিয়া সুপারসাইয়ান (Vanderhorstia Supersaiyan)। নামের প্রথম অংশ ‘ভ্যান্ডারহোর্স্টিয়া’ হলো এই মাছের গণ (Genus) এবং শেষ অংশ ‘সুপারসাইয়ান’ হলো এর প্রজাতি (Species)।
জাপানের নিশিহারায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব দ্য রিউকিয়াসের অধ্যাপক কেইটা কোয়েদা ও তাঁর গবেষক দল মাছটির খোঁজ পান। তারা সাগরের এমন গভীর অংশে কাজ করছিল, যেখানে খুব কম সূর্যের আলো পৌঁছায়। সেখানেই কাজ করার সময় স্নাতকের ছাত্র হিরোশি হিরাসাকা সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির এই গোবি মাছ ধরতে সক্ষম হন। মাছটিকে নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার পরে জাপানের ইকথিওলজিক্যাল সোসাইটির ‘ইকথিওলজিক্যাল রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়।
এখন হয়তো অনেকে বলতে পারো, গোবি (Goby) মাছ তো সারা বিশ্বেই দেখা যায়। তাহলে আর নতুন কী? আসলে গোবি মাছ সাধারণত দেখতে তেমন আকর্ষণীয় হয় না। এদের রং হয় বাদামি, ধূসর বা সবুজাভ আর মুখ কিছুটা ফোলা। কিন্তু এই নতুন গোবি মাছ সম্পূর্ণ আলাদা। এর পাখনা ও মুখজুড়ে রয়েছে অস্বাভাবিক উজ্জ্বল হলুদ রঙের রেখা।
মাছটির অস্বাভাবিক উজ্জ্বল রঙের কারণেই বৈজ্ঞানিক নামের শেষে ‘সুপার সাইয়ান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রাগন বল জেড অ্যানিমেতে গোকু যখন নিজেকে সুপার সাইয়ান অবস্থায় নিয়ে যায়, তখন তার শরীরের শক্তি অনেক বেড়ে যায়। সেই সময় গোকুর চুল উজ্জ্বল সোনালি বা হলুদ রং ধারণ করে। আর শরীর থেকে বের হয় সোনালি আভা। নতুন আবিষ্কৃত মাছটির গায়েও সোনালি রঙের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই বিজ্ঞানীরা এই নাম রেখেছেন।
নতুন প্রজাতির মাছটি লম্বায় মাত্র ৭৭ মিলিমিটার। কিন্তু দেখতে খুবই সুন্দর। এই ভ্যান্ডারহোর্স্টিয়া সুপারসাইয়ানের পিঠের দিকের পাখনা, নিচের দিকের পাখনা ও লেজের পাখনাজুড়ে উজ্জ্বল হলুদ রঙের ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। এ ছাড়া মাছটির মাথায় হালকা হলুদ রঙের ছোপ ও সারা শরীরে হীরার মতো নকশা রয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ভ্যান্ডারহোর্স্টিয়া সুপারসাইয়ান হলো একমাত্র মাছ, যার গায়ে একসঙ্গে এমন অনন্য রং ও নকশার মিশ্রণ দেখা যায়। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যই মাছটি জলজ প্রাণীজগতে স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
গবেষকেরা আরও জানান, অ্যানিমে ও মাঙ্গা মূলত জাপানের সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও নতুন আবিষ্কারের প্রতি আগ্রহী করতে এবং তাদের যুক্ত করতেই এ ধরনের জনপ্রিয় নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে কাল্পনিক চরিত্রের নামে বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়ার ঘটনা এ–ই প্রথম নয়। এর আগেও এমন অনেকবার হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কিট প্রেন্ডারগাস্ট একবার শয়তানের মতো শিংযুক্ত দেখতে একটি নতুন মৌমাছির প্রজাতি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি জনপ্রিয় নেটফ্লিক্স শো লুসিফারের নামানুসারে সেই মৌমাছির নাম রেখেছিলেন ‘লুসিফার’।
সূত্র: ইয়াহু এন্টারটেইনমেন্ট, সোরা নিউজ ২৪, ইয়াহু জাপান