চেরনোবিলের কুকুরগুলো কেন নীল হয়ে গেছে

চেরনোবিলের নীল কুকুরইউএ নিউজ

ইউক্রেনের চেরনোবিল জায়গাটার কথা তো নিশ্চয়ই শুনেছ। সেই বিখ্যাত পারমাণবিক চুল্লির বিস্ফোরণের পর ১৯৮৬ সাল থেকে ওই এলাকাটা মানবশূন্য। কিন্তু মানুষ না থাকলেও বন্য প্রাণী আর কুকুর-বিড়ালদের জন্য জায়গাটা এখন নিজস্ব রাজ্য।

সম্প্রতি সেই চেরনোবিল এলাকার একটি ঘটনা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বেশ অবাক হয়েছেন। হঠাৎই কিছু কুকুরের গায়ের রং বদলে গেছে! শুনতে অদ্ভুত লাগছে, তাই না? কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি। ক্লিন ফিউচার্স ফান্ড নামের একটা দাতব্য সংস্থা তাদের ইনস্টাগ্রামে ছবি আর ভিডিও দিয়ে দেখিয়েছে, তিনটা কুকুর যেন রাতারাতি নীল হয়ে গেছে। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, এটা নিশ্চয়ই তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব! কিন্তু আসল কারণটা শুনলে হয়তো একটু হাসিই পাবে।

আরও পড়ুন

নীল কুকুরের রহস্য

ক্লিন ফিউচারস ফান্ড নামের দাতব্য সংস্থাটি চেরনোবিলের এই প্রাণীগুলোকে দেখাশোনা করে। সংস্থাটি প্রথমে কারণটা বুঝতে পারেনি। তারা বলেছিল, ‘আমরা জানি না কেন এমন হয়েছে। কুকুরগুলোকে ধরতে পারলে আসল কারণটা জানা যেত।’

কিন্তু এই ঘটনার পর একটা বড় জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি এত বছর ধরে তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে থাকার ফলে কুকুরগুলোর গায়ের রং বদলে গেছে? আসলে তেমন কিছুই হয়নি। বিজ্ঞানী ও পশুচিকিৎসকেরা বলছেন, এটা একটা সাধারণ ঘটনা। তেজস্ক্রিয়তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে কুকুরগুলো হয়তো কাছাকাছি থাকা কোনো পোর্টেবল টয়লেট থেকে বেরিয়ে আসা নীলচে তরলে গড়াগড়ি খেয়েছে।

জানোই তো, কুকুরের স্বভাব রাস্তায় ধুলোর মধ্যে গড়াগড়ি খাওয়া। হয়তো কোনো রাসায়নিকযুক্ত নীলচে তরল ওদের গায়ে লেগে এমন রং হয়েছে।

আরও পড়ুন
পোষা প্রাণীদের বংশধররা এখন সেখানে বন্য হয়ে বাস করে
নিউজউইক

কিন্তু চেরনোবিলের কুকুরগুলো আসলে কেমন আছে? কারণ, ১৯৮৬ সাল থেকে ওখানে মানুষ বাস করে না। সে বছর ইউক্রেনের প্রিপিয়াত শহরের কাছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে প্রচুর তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। পুরো প্রিপিয়াত শহর আর তার আশপাশের বিশাল এলাকা খালি করে দেওয়া হয়। এখনো সরকারি অনুমতি ছাড়া সেখানে যাওয়া নিষেধ।

কিন্তু এতে একটা করুণ ঘটনা ঘটে। মানুষ যখন ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে এসেছিল, তখন অনেকেই তাদের পোষা প্রাণীগুলোকে সঙ্গে নিতে পারেনি। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেছে। সেই পোষা প্রাণীদের বংশধররা এখন সেখানে বন্য হয়ে বাস করে। আর অবাক করা ব্যাপার হলো ওরা সেখানে বেশ ভালোভাবেই বেঁচে আছে।

২০১৭ সাল থেকে ক্লিন ফিউচারস ফান্ড সংস্থাটি এই প্রাণীগুলোকে খাবার দেয়, ওদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। তারা প্রাণীগুলোকে ধরে জীবাণুমুক্ত করে দেয়, যাতে বন্য প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কাজ করতে গিয়েই অক্টোবরের শুরুতে তারা এই তিনটা নীল কুকুর দেখতে পায়।

চেরনোবিলের প্রাণীগুলো এখন নিজের মতো করে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে নিয়েছে। যদি ওই কুকুরগুলো চেরনোবিলের না হয়ে স্বাভাবিক কোনো জায়গার হতো, থাহলে ব্যাপারটা এতটা আলোচনায় আসত না। তাই হঠাৎ কোনো অদ্ভুত খবর শুনলে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্তে না পৌঁছে প্রথমে যুক্তি দিয়ে ভাবা উচিত। হয়তো আসল ব্যাখ্যাটা খুবই সাধারণ, ঠিক এই নীল কুকুরগুলোর মতোই।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

আরও পড়ুন