বিড়ালকে পটি ট্রেনিং করাব কীভাবে
বিড়াল পুষতে হলে তোমাকে আগে থেকেই ভেবে রাখতে হবে বেশ কিছু বিষয়। বিড়াল তোমার খেলার সঙ্গী হতে পারে, তবে বিড়াল কিন্তু খেলনা নয়। ওরও তোমার মতো খেতে হয়, ঘুমাতে হয়, পি-পটি করতে হয়। ওকেও নিতে হয় চিকিৎসকের কাছে। নিয়মমাফিক দিতে হয় টিকা। তাতে সুস্থ থাকে বিড়াল। আর পি-পটির ব্যবস্থা ঠিকঠাকভাবে করতে না পারলে প্রায়ই ঘর নোংরা করে ফেলতে পারে বিড়ালটি। আর এমন হলে বিড়াল ও তোমার—দুজনের কপালেই জুটতে পারে বকুনি।
ওকে তোমারই শেখাতে হবে, কোথায় পি-পটি করা উচিত। এই শেখানোর নামই পটি ট্রেনিং। তবে ব্যাপারটা তো আর এমন নয় যে তুমি বলবে বা জায়গাটা দেখিয়ে দেবে, আর বিড়াল অমনি তা শিখে নেবে। বরং একটু ধৈর্য ধরে সঠিক নিয়মে ওকে দিতে হবে এই ট্রেনিং। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের ফারমিলিয়ন ভেটেরিনারি ক্লিনিকের প্রাণিচিকিৎসক ডা. ফাতিহা ইমনূর।
লিটার বক্স রেখো ঠিকঠাক
লিটার বক্স হলো এমন একটা বাক্স, যেখানে বিড়াল পি-পটি করবে। এটার মাপ ঠিক হওয়া জরুরি। বিড়ালের আকারের মোটামুটি দেড় গুণ আকারের বাক্স বেছে নেওয়া ভালো (ছোট বিড়াল যখন বড় হবে, তখন ওর জন্য হিসাবমাফিক আরেকটু বড় বাক্স লাগবে)। খুব ছোট বা খুব বড় আকারের বাক্স বিড়ালের জন্য অস্বস্তিকর। বাক্সের গভীরতা হতে হবে চার-পাঁচ ইঞ্চির মতো। তবে বাক্সের প্রান্তগুলো যেন বিড়ালের জন্য খুব উঁচু বা খুব নিচু না হয়, সেদিকেও খেয়াল রেখো।
লিটার বক্স হিসেবে প্লাস্টিকের বাক্স বেছে নিতে পারো। বাসায় যত বিড়াল থাকবে, তার চেয়ে অন্তত একটা বেশি বক্স রাখা ভালো। মানে ধরো, কারও যদি একটা বিড়াল থাকে, তার প্রয়োজন দুইটা বক্স। তিনটা বিড়াল থাকলে চারটা বক্স। সব বক্স থাকতে হবে আলাদা জায়গায়।
লিটার বক্স এমন জায়গায় রাখবে, যাতে তা বিড়ালের জন্য সুবিধাজনক হয়। বাসার যেখানেই থাকুক না কেন, সহজেই যেন একটা লিটার বক্স খুঁজে পায় বিড়াল। একেবারে লুকিয়ে রাখা জায়গায় কিংবা একেবারে সবার সামনে খোলা জায়গায় এই বক্স রাখতে নেই। বরং ঘরের একটা পাশে রাখা যায়, যেখানে আলো থাকে সব সময়। মনে রেখো, বেশির ভাগ বিড়ালই পুরোপুরি বদ্ধ লিটার বক্স পছন্দ করে না।
লিটার আর স্কুপও চাই
প্রাকৃতিক পরিবেশে বিড়াল মাটি কিংবা বালুতে পি-পটি করে ঢেকে দেয়। লিটার হলো ক্ষুদ্র দানার মতো জিনিস, যা এই বালু বা মাটির আধুনিক বিকল্প। চাইলে বালু বা কাঠের গুঁড়িও ব্যবহার করা যায় লিটার বক্সে। তাতে খরচ কম পড়ে। তবে এগুলো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে সহজে। ফলে ঘর নোংরা হয়ে যেতে পারে। আর এগুলোর শোষণক্ষমতা লিটারের মতো ভালো নয়। ৮-১০ সপ্তাহ পর্যন্ত বয়সের বিড়ালের প্রয়োজন নন-ক্লাম্পিং লিটার (যা দলা পাকিয়ে যায় না)। এই বয়সী বা তার চেয়ে বেশি বয়সী বিড়ালের প্রয়োজন ক্লাম্পিং লিটার (এই লিটারে বিড়াল পি-পটি করলে ওই অংশটুকু দলা পাকিয়ে যায়)। বক্সে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে লিটার বিছিয়ে রাখতে হয়। স্কুপ হলো একটা চামচের মতো জিনিস, যার সাহায্যে লিটার বক্সের ময়লাটা তুলে নেওয়া যায় সহজে। যতবার নোংরা হবে, ততবারই ময়লা তুলে ফেলা ভালো। আর যেখান থেকে ময়লা তোলা হলো, সেখানটা পূর্ণ করে দিতে আবার কিছুটা লিটার ঢেলে দিতে হবে।
ট্রেনিং পর্ব
বিড়ালের বয়স চার সপ্তাহ পেরোলে তখন লিটার বক্স দিতে হবে ওর জন্য। তবে প্রথমে বিড়াল নিজে থেকে লিটার বক্সে না-ই যেতে পারে। যতবার বিড়াল খাবার বা পানি খাবে কিংবা ঘুম থেকে উঠবে, তোমার দায়িত্ব হলো তাকে সেই বক্সে আলতোভাবে নিয়ে যাওয়া। এভাবেই ও বুঝে ফেলবে ব্যাপারটা।
তবে না বুঝলে কিংবা বোঝার পরও অন্য জায়গায় পি-পটি করলে ওকে বকাঝকা কোরো না যেন। খেয়াল করে দেখো, লিটার বক্স রাখার ক্ষেত্রে সব নিয়ম তুমি মেনেছ কি না এবং বক্স প্রায়ই পরিষ্কার করা হচ্ছে কি না। এগুলো সব ঠিক থাকলে লিটারের ফ্লেভার বা ব্র্যান্ড বদলে দেখতে পারো। তাতে কাজ না হলে কাছের কোনো প্রাণিচিকিৎসকের সহায়তা নাও।