বিড়ালের জন্য তৈরি করা হয়েছে মেট্রোস্টেশন

নিজের বিড়ালের জন্য মেট্রোস্টেশনটি বানিয়েছেন চীনের জিং ঝিলেইছবি: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি বিড়াল নিরিবিলি এক সাবওয়ের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। যেন মেট্রোরেলের অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর একটি ট্রেন আসে। বিড়ালটি তাতে চড়ে বসে। স্টেশনে এস্কেলেটর থেকে শুরু করে সবকিছুই আছে। সবকিছু এত নিখুঁতভাবে তৈরি যে অনেকেই এটিকে কম্পিউটার গ্রাফিকসের (সিজিআই) ভিডিও মনে করেছেন। কিন্তু আসল ঘটনা ভিন্ন। মূলত মেট্রোস্টেশনটি আসল। তবে মানুষের জন্য তৈরি মেট্রো নয়। বরং এক চীনা ইউটিউবারের নিজের হাতে বানানো তাঁর বিড়ালের জন্য একটি মিনি মেট্রোস্টেশন।

নিজের বিড়ালের জন্য মেট্রোস্টেশনটি বানিয়েছেন চীনের জিং ঝিলেই। পোষা প্রাণীর জন্য ছোট আকৃতির জিনিসপত্র তৈরির জন্য জনপ্রিয় চীনা ইউটিউবার তিনি। জিং ঝিলেই তাঁর বিড়ালদের জন্য একটি আস্ত মেট্রো সাবওয়ে তৈরি করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ১৭ আগস্ট। তাঁর চ্যানেলের নাম ‘জিংস ওয়ার্ল্ড (Xing's World)’ এ একটি ২ মিনিটের ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে তাঁকে মেট্রো স্টেশনের ভেতরে বসতে দেখা যায়। তিনি দেখান, কীভাবে একটি চলন্ত ট্রেনসহ আস্ত স্টেশনটি তিনি তৈরি করেছেন। ভিডিওটিতে তাঁর বিড়ালগুলোকে সেই চলন্ত ট্রেনে ভ্রমণ করতেও দেখা যায়।

আরও পড়ুন
সাবস্ক্রাইবারদের অনুরোধে তিনি বিড়ালদের জন্য একটি সম্পূর্ণ মেট্রো সিস্টেম তৈরি করেন।
ছবি: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং

নিজের বিড়ালদের জন্য মেট্রো সাবওয়ে তৈরির আগে থেকেই ইউটিউবার জিং বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি এর আগেও বিড়ালের জন্য একটি আস্ত ছোট আকৃতির মিনি ক্যাট হাউস, সুপারমার্কেট, সিনেমা থিয়েটার এবং একটি গ্যারেজ তৈরি করে বেশ আলোচনায় আসেন। এই ধরনের ব্যতিক্রমী কনটেন্ট তৈরি করার পর তাঁর সাবস্ক্রাইবারদের অনুরোধে তিনি বিড়ালদের জন্য একটি সম্পূর্ণ মেট্রো সিস্টেম তৈরি করেন।

বিড়ালের জন্য ছোট আকৃতির বিভিন্ন জিনিস তৈরি শুরু করেছিলেন দুই বছর আগে। যখন তিনি প্রথম ‘দ্য ক্যাট হাউস’ তৈরি করেছিলেন। জিং ঝিলেই পোষা প্রাণীর জন্য নিজে হাতে জিনিসপত্র তৈরির (DIY) প্রজেক্টগুলোকে সম্পূর্ণ নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আসল মেট্রো সিস্টেমের মতোই একটি চলন্ত ট্রেন, সঙ্গে স্লাইডিং দরজা, বসার জায়গা, প্ল্যাটফর্ম, এস্কেলেটর স্টেশনে রয়েছে। পুরো প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে জিং-এর সময় লেগেছে চার মাস।

আরও পড়ুন
নিজের বানানো মেট্রো সিস্টেম তৈরির পেছনের বেশ কিছু মজার ঘটনা শেয়ার করেছেন জিং ঝিলেই
ছবি: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং

জিং ঝিলেইয়ের এই অসাধারণ কাজ দেখে সবাই বিস্মিত। সবাই এটির বেশ প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই কমেন্ট শেয়ার করেছেন। একজন ব্যবহারকারী মজা করে লিখেছেন, ‘চীনের বিড়ালেরা আমেরিকার মানুষের তুলনায় ভালো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাচ্ছে।’ অন্যদিকে একজন লিখেছেন, ‘আমি অবাক হয়েছি এর অবিশ্বাস্য আকার দেখে।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘এটি আমার দেখা সবচেয়ে দুর্দান্ত জিনিস। আমি কল্পনাও করতে পারছি না যে এতে কতটা পরিশ্রম, প্রচেষ্টা লেগেছে, অবিশ্বাস্য!’

নিজের বানানো মেট্রো সিস্টেম তৈরির পেছনের বেশ কিছু মজার ঘটনা শেয়ার করেছেন জিং ঝিলেই। তিনি জানান, ‘বিড়ালদের জন্য মেট্রো ব্যবস্থাটি তৈরি করতে গিয়ে প্রথম দুটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। প্রথমত, কীভাবে ট্রেনটি স্টেশনে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিজে নিজে দরজা খুলবে। আর দ্বিতীয়ত একটি চলন্ত এস্কেলেটর কীভাবে বানানো যায়। এই দুটি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে। এরপর শুধু ভাবনা বন্ধ করে একে একে প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে কাজ করা শুরু করি।’

আরও পড়ুন

জিং ঝিলেই আরও জানান, মেট্রো সিস্টেমটি তৈরি করার পর সবচেয়ে বেশি ঝামেলার ছিল এটি পরিষ্কার করা। ছোট জায়গা হওয়ায় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও জায়গাটা নিচু হওয়ায় আমি ও আমার দলের সদস্যরা বারবার মাথায় আঘাত পেয়েছি। এতবার আঘাত লেগেছে যে পুরো মাথা ব্যথা হয়ে গিয়েছিল। তবু কাজটি শেষ করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছিল।

তাঁর তৈরি সাবওয়ে রেল মূলত তাঁর পোষা প্রাণীদের জন্য তৈরি করা ‘মিনি ওয়ার্ল্ড’-এর অংশ। বছরের পর বছর ধরে তিনি এই দুনিয়া আরও বড় করেছেন। বিড়াল, কুকুর এমনকি হ্যামস্টারদের জন্যও নতুন নতুন জিনিস তৈরি করেছেন। এটা শুধু খেলার জন্য তৈরি করা হয়নি। তিনি এই প্রজেক্টগুলো পোষা প্রাণীদের আশ্রয়ের জন্য তৈরি করেন। তিনি একবার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিড়ালদের জন্য ১০০টি থাকার জায়গা বানিয়েছিলেন।

সূত্র: স্ট্রেইটস টাইমস, ফ্রি প্রেস জার্নাল, ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং

ছবি: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং

আরও পড়ুন