কোন প্রাণী সবচেয়ে ভালো চোখে দেখে

শিকারি পাখি যেমন বাজ, ঈগল বা ফ্যালকনের চোখ এত তীক্ষ্ণগেটি ইমেজেস

কখনো কি ভেবে দেখেছো, পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো চোখ কার? যদি তুমি একটি বাজ পাখি হতে, তবে আকাশে উড়তে উড়তে নিচের মাটির দিকে তাকিয়ে খুঁজতে তোমার খাবার। অনেক নিচে, মাটির রঙের সঙ্গে মিশে থাকা একটি কাঠবিড়ালিকে তুমি সহজেই দেখতে পেতে। যেটা মানুষের চোখে প্রায় ধরা পড়েই না।

শিকারি পাখি যেমন বাজ, ঈগল বা ফ্যালকনের চোখ এত তীক্ষ্ণ, এরা অনেক দূর থেকেই শিকার দেখতে পায়। কিন্তু শুধু এদের চোখই যে প্রকৃতিতে সেরা, তা না। প্রকৃতিতে এমন অনেক প্রাণী আছে, যাদের দৃষ্টিশক্তি আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়।

ডিটেইল বা পুরোটা দেখার ক্ষমতার দিক থেকে শিকারি পাখিরা সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। বাজ বা ঈগলের চোখ মানুষের চোখের চেয়ে প্রায় তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী। ধরো, যদি তোমার চোখ ঈগলের মতো হতো, তাহলে পৃথিবীকে দূর থেকে দেখতে তোমার কাছে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখার মতো লাগত। এদের চোখ শরীরের তুলনায় বেশ বড় এবং চোখে থাকে বিপুল সংখ্যক ফটোরিসেপ্টর। এগুলো কোষকে আলো ধরতে সাহায্য করে। এই কারণে এরা অনেক উঁচু থেকে মাটিতে থাকা ছোট্ট শিকারও স্পষ্টভাবে দেখতে পায়।

আরও পড়ুন

রং দেখার দুনিয়ায় অন্য এক প্রাণী সবার ওপরে। ম্যান্টিস শ্রিম্প নামে একটি চিংড়ি আছে। দেখতে অনেকটা সাই-ফাই সিনেমার এলিয়েনের মতো। এই সামুদ্রিক প্রাণীটির চোখে আছে প্রায় ১২ ধরনের ফোটোরিসেপ্টর। মানুষের চোখে যেখানে মাত্র তিনটি রং শনাক্তকারী কোষ থাকে। লাল, নীল ও সবুজ, সেখানে ম্যান্টিস শ্রিম্প অতিবেগুনি বা আল্ট্রাভায়োলেট আলোও দেখতে পারে। ফলে এরা এমন সব রং দেখতে পায়, যেগুলোর কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। শুধু তাই নয়, আলো কীভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে, সেটাও এরা ধরতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, ম্যান্টিস শ্রিম্প রং আলাদা করে বিশ্লেষণ না করে রঙের প্যাটার্ন দেখে চিনে ফেলে। তাই এদের দেখা পৃথিবী আমাদের দুনিয়ার চেয়ে অনেক বেশি রঙিন ও ভিন্ন।

আর দ্রুত বা সবার আগে দেখার কথা হিসাব করলে, পোকামাকড়ের জুড়ি মেলা ভার। কখনো খেয়াল করেছো, মাছি ধরতে গেলেই কেন এরা মুহূর্তে হাত ফাঁকি উড়ে যায়? কারণ মাছির চোখ আমাদের চোখের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করে। মানুষ যেখানে এক সেকেন্ডে প্রায় ৬০টি ফ্রেম আলাদা করে দেখতে পারে, সেখানে পোকামাকড় এর চেয়ে বহুগুণ বেশি গতিতে দেখতে পারে। আমাদের কাছে যে আলো স্বাভাবিক মনে হয়, মাছির চোখে সেটা ডিস্কো লাইটের মতো ঝলমল করে। মজার কথা হলো, মাছি যদি সিনেমা দেখতে যেত, তাহলে এর কাছে পুরো সিনেমাটাই সুপার ফাস্ট স্লাইড শোর মতো লাগত। এদের শরীর ছোট হওয়ায় চোখ থেকে মস্তিষ্কে সিগন্যাল খুব দ্রুত পৌঁছে যায়, তাই আমাদের হাতের নড়াচড়া এরা আগেই বুঝে ফেলে।

আরও পড়ুন

তবে এত দারুণ দৃষ্টিশক্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। ম্যান্টিস শ্রিম্প ও পোকামাকড়দের চোখ মূলত কম্পাউন্ড চোখ, অর্থাৎ অনেক ছোট ছোট ইউনিট দিয়ে তৈরি। এর ফলে এদের দৃষ্টি অনেকটা পিক্সেল করা ছবির মতো হয়। দ্রুত বা রঙিন হলেও সব সময় খুব স্পষ্ট নয়।

এই তুলনায় মানুষের চোখে বেশ ভারসাম্য থাকে। আমরা হয়তো অতিবেগুনি আলো দেখতে পারি না বা চোখের পলকে সবকিছু ধরতেও পারি না, কিন্তু আমাদের দৃষ্টি পরিষ্কার, স্থির এবং দৈনন্দিন জীবনের জন্য খুব কার্যকর। এক বিজ্ঞানী মজা করে বলেছেন, ‘আমি ম্যান্টিস শ্রিম্প হতে চাই না। ওদের মস্তিষ্ক মটরের মতো ছোট। আমি আমার চোখ নিয়েই খুশি।’

প্রতিটি প্রাণীর চোখ এদের জীবনের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি। কেউ দূর থেকে শিকার খুঁজে পায়, কেউ অসংখ্য রঙের দুনিয়া দেখে, কেউ আবার চোখের পলকে বিপদ বুঝে ফেলে। প্রতিটি চোখই তাই আলাদা ও বিশেষ।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন