বিশ্বে প্রথম রোবট লড়েছে রোবটের বিরুদ্ধে
ইউটিউবে স্ট্রিমিং দেখে মনে হচ্ছিল ২০১১ সালের সায়েন্স ফিকশন মুভি ‘রিয়েল স্টিল’-এর কথা। সেই সিনেমায় বক্সিং রিংয়ে থাকত নামকরা সব রোবট বক্সার। আর এখন দেখি সেই আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে চীনের হাংচৌতে আয়োজন করা হলো বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট বক্সিং টুর্নামেন্ট।
বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রোবটদের মধ্যে এই বক্সিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে মানুষের মতো দেখতে রোবটরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছে। চীনের চারটি দল তাঁদের তৈরি উন্নত ফাইটিং রোবট নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল।
চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) আয়োজন করে ‘ওয়ার্ল্ড রোবট টুর্নামেন্ট-মেচা কমব্যাট এরিনা’ নামের এই প্রতিযোগিতা। গত ২৫শে মে চীনের হাংচৌতে এটি অনুষ্ঠিত হয়। চীনের সরকারি টিভির বিজ্ঞান বিষয়ক চ্যানেল সিসিটিভি-১০ এটি পুরো দেশে সরাসরি দেখায়। এই প্রতিযোগিতায় মানুষ প্রথমবারের মতো ইউনিট্রির জি১ নামের মানুষের মতো দেখতে রোবটদের লড়াই দেখায়। রোবটগুলো বক্সিং টুর্নামেন্ট মতো বক্সিং রিংয়ে একে অপরকে ঘুষি, লাথি মারে। এমনকি রিংয়ে নিজেদের বাঁচাতে প্রতিপক্ষের আক্রমণগুলো ঠেকাতে পারে।
ইউনিট্রি কোম্পানি জি১ রোবটকে যুদ্ধের জন্য তৈরি করতে এআই রিইনফোর্সমেন্ট নামের একটা বিশেষ ট্রেনিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে রোবটকে প্রচুর ডেটা বা তথ্য দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় মোট চারটি দল ছিল। কালো, গোলাপি, সবুজ আর লাল। প্রতিটি দলই তাঁদের রোবটকে চালানোর জন্য নিজেদের মতো করে আলাদা কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। সবুজ দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হু ইউনকিয়ান। তিনি প্রতিপক্ষ রোবটকে হারাতে ধীরে ধীরে আঘাতের চাপ বাড়িয়ে এক ইঞ্চি করে এগিয়ে যাওয়া কৌশলটা কাজে লাগায়।
বক্সিং ম্যাচের সময় সবুজ দল তাঁদের রোবটকে গেম প্যাড দিয়ে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাঁরা জানান, এটা বেছে নেওয়ার কারণ গেম প্যাড ব্যবহার করলে রোবটকে নির্দেশ দেওয়ার পর তা কাজ করতে খুব কম সময় নেয়। মানে লেটেন্সি কম হয়। যদি তাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা ভয়েস কন্ট্রোল ব্যবহার করত, তাহলে রোবটের সাড়া দিতে আরও বেশি সময় লাগত।
অন্যদিকে, গোলাপি দলের নেতা জিয়াও তিয়ানকি একটি দারুণ চাল খেলেন। তিনি তাঁর কৌশলকে নাম দেন ‘পেশি স্মৃতি নির্ভুলতা’। এর মূল কাজ ছিল খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানো। শুধু আক্রমণের গতি দিয়েই প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করা।
জি১ হিউম্যানয়েড রোবটটি অনেক দিক থেকে খুব নিখুঁতভাবে নড়াচড়া করতে পারে। এটি কাঁধের জোড় ব্যবহার করে ঘুষি মারতে পারে। প্রতিপক্ষকে লাথি মারার জন্য এর কোমর ও হাঁটুও ব্যবহার করতে পারে। জি১ রোবটের বাহুতে সাতটি ডিগ্রি আব ফ্রিডম সেন্সর রয়েছে। এটি অন্যান্য রোবটের চেয়ে বেশি। যা কিছুটা মানুষের হাতের মতোই কাজ করে।
প্রতিযোগিতায় মোট চারটি দল ছিল। কালো, গোলাপি, সবুজ আর লাল। প্রতিটি দলই তাঁদের রোবটকে চালানোর জন্য নিজেদের মতো করে আলাদা কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে।
জি১ রোবট তৈরি করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন তাঁরা এমন রোবট বানাতে পেরেছেন, যা ঘুষি মারার সময়, আক্রমণ থেকে বাঁচার সময়, এমনকি লাথি মারার সময়ও সোজা থাকতে পারে। পড়ে যায় না। এই রোবটগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে যুদ্ধের সময় আসা তীব্র চাপ সহজেই সহ্য করতে পারে।
ইউনিট্রি কোম্পানি জি১ রোবটকে যুদ্ধের জন্য তৈরি করতে এআই রিইনফোর্সমেন্ট নামের একটা বিশেষ ট্রেনিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে রোবটকে প্রচুর ডেটা বা তথ্য দেওয়া হয়। যাতে সে নিজে নিজেই শিখতে পারে। কীভাবে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করতে হয় ও নিজের ভারসাম্য ধরে রাখতে হয়। এই ট্রেনিং থেকে তৈরি হওয়া প্রোগ্রামটা রিয়েল-টাইম ব্যালেন্স সেন্সরের সঙ্গে কাজ করে। এর ফলে জি১ রোবট নিজে নিজেই সোজা থাকতে পারে। এমনকি মানুষ কন্ট্রোল না করলেও।