‘বিপন্ন’ থেকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পান্ডা

পৃথিবীর সবচেয়ে আদুরে প্রাণীদের মধ্যে একটি পান্ডা। এদের তুলতুলে চেহারা আর শান্ত স্বভাবের জন্যই এরা সবার কাছে এত প্রিয়। সুন্দর এই প্রাণী সম্পর্কে বিস্ময়কর ও অজানা কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১. পান্ডারাও ভালুক

পান্ডা অন্যান্য ভালুক, যেমন গ্রিজলি বা কালো ভালুক থেকে দেখতে বেশ আলাদা। তবে পান্ডারা কিন্তু ভালুক পরিবারেরই একটি অংশ। ভালুকের আটটি প্রজাতির মধ্যে পান্ডা একটি। এদের তুলতুলে চেহারা আর কালো-সাদা লোমের কারণে অনেকে এদের আলাদা প্রাণী মনে করে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এরা ভালুক বংশ। উরসিডাই পরিবারের সদস্য এরা। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ‘আইলুরোপোডা মেলানোলিউকা’। এর অর্থ কালো ও সাদা বিড়ালপদী ভালুক। জেনেটিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, পান্ডারা দক্ষিণ আমেরিকার স্পেক্টাকলড ভালুকের সবচেয়ে নিকটাত্মীয়।

২. পান্ডার বাঁশ খুব পছন্দ

পান্ডারা এদের খাবারের জন্য অত্যন্ত খুঁতখুঁতে। তবে মূল খাবার হলো বাঁশ। এই প্রাণীগুলো প্রতিদিন প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে বাঁশ খেয়ে পেট ভরায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এদের দৈনন্দিন খাদ্যের ৯৯ শতাংশ জুড়ে থাকে শুধু বাঁশ। আর বেঁচে থাকার জন্য এদের কমপক্ষে দুই ধরনের ভিন্ন ভিন্ন বাঁশ খাওয়া প্রয়োজন। যদিও পান্ডারা মাংসাশী প্রাণী, তবু এদের খাদ্যাভ্যাস বাঁশে এসে ঠেকেছে। মাঝেমধ্যে এরা অন্যান্য গাছপালা বা খুব ছোট প্রাণীও খেয়ে থাকে।

৩. জন্মের সময় পান্ডা কিন্তু সাদা-কালো থাকে না

পান্ডারা জন্মগতভাবে গোলাপি রঙের হয়, সাদা–কালো নয়। জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর এদের পরিচিত কালো ও সাদা লোম গজায়। তবে সব পান্ডা সাদা–কালো হয় না, কিছু পান্ডা সাদা রঙের সঙ্গে বাদামিও হতে পারে। জন্মের সময় এরা প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, যা একটি পেনসিলের আকারের সমান। এরা জন্মের সময় অন্ধ থাকে। জন্মের প্রায় ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর চোখ খোলে। এত ছোট ও অসহায় অবস্থায় জন্ম নেওয়ার কারণে এরা পুরোপুরি মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে।

আরও পড়ুন

৪. গাছে উঠতে পটু

পান্ডাদের তুলতুলে চেহারার জন্য মনে হতে পারে এরা বুঝি অলস। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এরা দারুণ পটু গাছে ওঠার ক্ষেত্রে। নিজেদের শিকারির হাত থেকে বাঁচাতে অথবা কেবল বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এরা অনায়াসে গাছে উঠতে পারে। অনেক পান্ডাই গাছের শাখায় শুয়ে বা বসে থাকতে পছন্দ করে। এমনকি সেখানে এরা ঘুমিয়েও পড়ে। এই দক্ষতা ছোট থেকে শেখে এরা। এদের শক্ত থাবা ও ধারালো নখ গাছ বেয়ে ওপরে উঠতে সাহায্য করে।

৫. শীতনিদ্রার দরকার হয় না

অন্যান্য বেশির ভাগ ভালুকের মতো জায়ান্ট পান্ডারা শীতনিদ্রায় যায় না। শীতকাল এলে এরা এদের উঁচু পাহাড়ের বাসস্থান থেকে তুলনামূলক উষ্ণ নিচু এলাকায় নেমে আসে, যেখানে এরা পুরো শীতকাল ধরে বাঁশ খায়। পান্ডাদের শীতনিদ্রায় না ঘুমানোর কারণ হলো এদের প্রধান খাদ্য বাঁশ। বাঁশে পুষ্টির পরিমাণ খুবই কম। তাই এটি থেকে শরীরের জন্য পর্যাপ্ত চর্বি তৈরি হয় না। ফলে শীতকালে টিকে থাকার জন্য এদের নিয়মিত খাওয়া চালিয়ে যেতে হয়। এ জন্য এরা ঘুমিয়ে থাকতে পারে না শীতকালে।

আরও পড়ুন
পান্ডা
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

৬. পান্ডা চীনের জাতীয় সম্পদ

পান্ডা চীনের একটি স্থানীয় প্রাণী। এদের দেখা মেলে শুধু মধ্য চীনের কয়েকটি পর্বতমালায়। বিশেষ করে সিচুয়ান প্রদেশে। এই কারণে পান্ডাকে চীনের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান ও কূটনীতিতে এটি প্রায়ই একটি জাতীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কূটনৈতিক বিনিময়ের অংশ হিসেবে চীন অন্যান্য দেশকে পান্ডা উপহার দেয়। তবে উপহার পুরোপুরি দিয়ে দেয় না। সাধারণত ১০ বছরের জন্য ধার দেয়। ফলে বিদেশে জন্ম নেওয়া পান্ডাশাবকও চীনের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হয়। চীনে পান্ডা সংরক্ষণ বর্তমানে সফল হয়েছে। এখন এটিকে ‘বিপন্ন’ থেকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে চীন সরকার।

৭. দিনে ১০০ বারের বেশি মলত্যাগ করে

জায়ান্ট পান্ডা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২ দশমিক ৫ কেজি বাঁশ খায়। যেহেতু এদের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং পুষ্টিগুণ কম থাকে, তাই এটি সহজে হজম হয় না। এ কারণে পান্ডাদের শরীর থেকে খাবারের বর্জ্য দ্রুত বের হয়ে যায়। এ জন্য এরা দিনে ১০০ বারের বেশি মলত্যাগ করে। এটি এদের খাদ্যাভ্যাসের একটি স্বাভাবিক অংশ।

আরও পড়ুন
ছবি: রয়টার্স

৮. পান্ডারা একসময় মাংসাশী ছিল

লাখ লাখ বছর আগে অন্যান্য ভালুকের মতোই পান্ডারাও ছিল মাংসাশী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। এখন এরা বাঁশের ওপর নির্ভর করে। মজার বিষয় হলো, এদের হজমতন্ত্র এখনো মাংসাশী প্রাণীর মতোই রয়ে গেছে। বাঁশে পুষ্টির পরিমাণ কম। এতে এদের হজমতন্ত্র মাংসের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় পর্যাপ্ত পুষ্টি পেতে এদের সারা দিন ধরে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ খেতে হয়।

ছবি: রয়টার্স

৯. সাদা–কালো পশম ছদ্মবেশের মতো কাজ করে

পান্ডার কালো সাদা পশম শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এটি এদের বেঁচে থাকার জন্য একধরনের ছদ্মবেশ। এদের শরীরের কালো দাগগুলো ঘন বাঁশবন ও পাথুরে পাহাড়ের ছায়ায় লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। অন্যদিকে সাদা পশম এদের তুষারময় পাহাড়ে অদৃশ্য হতে সাহায্য করে। এই রঙের কারণে পান্ডারা শিকারিদের চোখ এড়াতে পারে।

আরও পড়ুন
ঘাসের ওপর রাখা হয়েছে ২০১৫ সালে এ পর্যন্ত জন্ম নেওয়া পান্ডা শাবকগুলো
ছবি: রয়টার্স

১০. পান্ডার আঙুল কয়টি

পান্ডাদের সামনের থাবায় ছয়টি আঙুল আছে বলে মনে হলেও ষষ্ঠ আঙুলটি আসলে কবজির হাড়। এই অতিরিক্ত হাড় এদের বুড়ো আঙুলের মতো কাজ করে। এটা দিয়ে এরা বাঁশ শক্ত করে ধরে রাখতে ও সহজে খেতে পারে, যা শুধু পান্ডাদের মধ্যে দেখা যায়।

সূত্র: বিবিসি, ফান কিডস, অর্থ অর্গ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিডস

আরও পড়ুন