বোতলজাত পানি খেলে শরীরে ঢোকে ৯০ হাজার অতিরিক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক

প্লাস্টিকের বোতলে পানি খেলে শরীরের বড় ক্ষতি হতে পারে।ছবি: পেক্সেলস

থাইল্যান্ডের ফি ফি দ্বীপের কথা হয়তো শুনে থাকবে। ছবির মতো সুন্দর এক জায়গা। সেই দ্বীপেই ঘুরতে গিয়েছিলেন সারা সাজেদি। আন্দামান সাগরের নীল জল আর অপূর্ব দৃশ্য দেখে তিনি মুগ্ধ। কিন্তু যেই না তিনি নিজের পায়ের দিকে তাকালেন, ওমনি চমকে উঠলেন! ওমা! এ কী!

সাদা বালুকাময় সৈকতটা ঢেকে আছে প্লাস্টিকের আবর্জনায়। আর তার বেশির ভাগই হলো প্লাস্টিকের বোতল। সারা সাজেদি তখন পরিবেশবিষয়ক একটি সফটওয়্যার কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কিন্তু সৈকতের এই দৃশ্য তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। তিনি বুঝলেন, বর্জ্য কমানো নিয়ে তিনি অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন বটে, কিন্তু আসল সমস্যাটা হলো আমাদের ভোগবিলাসে। আমরা ব্যবহার করছি বলেই আবর্জনা তৈরি হচ্ছে। এই ভাবনা থেকেই তিনি হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর গবেষক।

কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল স্টুডেন্ট হিসেবে সারা প্রায় ১৪০টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলেন। উদ্দেশ্য, প্লাস্টিকের বোতল মানুষের শরীরে আসলে কী প্রভাব ফেলে, তা বের করা। আর সেখান থেকেই বেরিয়ে এল এক ভয়ানক তথ্য।

আরও পড়ুন

গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ খাবার ও পানির মাধ্যমে বছরে গড়ে ৩৯ থেকে ৫২ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা নিজের অজান্তেই খেয়ে ফেলছে। কিন্তু যারা প্রতিদিন বোতলজাত পানি পান করে, তাদের অবস্থা আরও খারাপ। তারা বছরে আরও প্রায় ৯০ হাজার অতিরিক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা নিজেদের শরীরে ঢোকাচ্ছে!

সারা সাজেদি বলেন, ‘খুব বিপদে পড়লে প্লাস্টিকের বোতলে পানি খাওয়া ঠিক আছে, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে এটাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলা একদম উচিত নয়। হয়তো এখনই তুমি এর কোনো ক্ষতি টের পাবে না, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা তোমার শরীরের বড় ক্ষতি করতে পারে।’

মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে তো ভয়ের কথা হলো, কিন্তু জিনিসটা আসলে কী? সহজ করে বললে, মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা, যার আকার ১ মাইক্রোমিটার থেকে ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আর ন্যানোপ্লাস্টিক তো আরও ছোট! এগুলো খালি চোখে দেখাই যায় না। বোতল তৈরি, সংরক্ষণ ও পরিবহনের সময় এগুলো তৈরি হতে থাকে। বিশেষ করে রোদের তাপে বা তাপমাত্রার পরিবর্তনে নিম্নমানের প্লাস্টিক বোতল থেকে এসব কণা পানিতে মিশে যায়। আর পানি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো সোজা চলে যায় তোমার পেটে।

আরও পড়ুন

একবার শরীরে ঢুকে পড়লে এই অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলো রক্তে মিশে যেতে পারে এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোয় পৌঁছে যেতে পারে। ফলে শরীরে হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ। হরমোনের সমস্যা, প্রজননক্ষমতার ক্ষতি এবং স্নায়ুতন্ত্রের ওপরও এটি প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের সঙ্গেও এর যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ বা স্ট্র নিয়ে অনেক কড়াকড়ি থাকলেও প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে তেমন কোনো শক্ত নিয়মকানুন নেই। অথচ এটাই স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকি।

নিরাপদ পানি পাওয়া মানুষের অধিকার, এটা ঠিক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের প্লাস্টিকের বোতলের ওপরই নির্ভর করতে হবে। সারা সাজেদির এই গবেষণা আমাদের সেই অদৃশ্য বিপদই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

তাই এর পর থেকে তৃষ্ণা পেলে প্লাস্টিকের বোতল কেনার আগে দুবার ভেবো। পরিবেশের জন্য তো বটেই, নিজের শরীরের জন্যও প্লাস্টিক এড়িয়ে চলা জরুরি!

সূত্র: ওয়্যার্ড ডটকম

আরও পড়ুন