সস এল কোথা থেকে

এখন আমরা সস খাই। খুব মজা করেই খাই। যদিও সস খাবারের মূল উপাদান নয়, তারপরেও সস ছাড়া খাবারের টেবিল এখন কল্পনা করা মুশকিল। বিশেষ করে যখন সেটি হয় ভাজা, মসলাদার, নাশতা বা স্ন্যাকস–জাতীয় খাবার।

সস

সসের ইতিহাস

সসের ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতোই পুরোনো। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা আবিষ্কার করেছেন পৃথিবীর প্রথম সসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এখন থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে।

এই সস বানানো হতো ফল, সবজি বা কোনো প্রাণীর মাংস অথবা ফল বা শস্যের বীজ থেকে।

মায়া ও ইনকা সভ্যতায় সেখানকার নাগরিকেরা প্রথম বীজ থেকে সস–জাতীয় খাবার আবিষ্কার করেন। একই সময়ে অ্যাজটেকরাও সসের ব্যবহার করা শুরু করেন।

আরও পড়ুন

সসের ধরন

পৃথিবীতে যে কত ধরনের সস আছে সেটি গুণে শেষ করা যাবে না। খাদ্যরসিকেরা একে নানান ভাগে ভাগ করেছেন। কেউ কেউ প্রস্তুতপ্রণালি, কেউ কেউ সসের উপাদান, কেউ এর স্বাদ ইত্যাদি দিয়ে সসকে আলাদা করেছেন। সবচেয়ে সাধারণ সস হচ্ছে মসলা ও মাছ দিয়ে বানানো সস। আভাগোলেমেনো হচ্ছে ডিম ও লেবুর সস। এ ছাড়া রয়েছে অ্যাভাকাডো সস, বারবিকিউ সস, ব্রেড সস, চিজ সস, সামুদ্রিক মাছ দিয়ে বানানো ককটেল সস, কফি সস, ডাক সস বা হাঁসের সস, এগুসি হচ্ছে আফ্রিকার সস, ফ্রাই বা ভাজা সস হচ্ছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্য বানানো বিশেষ সস। আরও রয়েছে মিন্ট বা পুদিনা সস, মাশরুম কেচাপ, মিগোনোনেত্তা সস যা বানানো হয় ঝিনুক দিয়ে। আছে রেইনবো সস, সালসা (মেক্সিকোর রান্নায় ব্যবহার করা সস) সস, আর্জেন্টিনার চিমিচুরি সস। পান সস কিন্তু পান দিয়ে বানানো সস নয়, সস বানানোর পদ্ধতি। আবার যেসব কোম্পানি সারা বিশ্বের নাগরিকদের হাতে সস হাতে তুলে দেয় তাদের নামের সস বেশ জনপ্রিয়, যেমন আমাদের দেশে প্রাণ বা রাঁধুনির সস, তেমনি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে ম্যাগি সস, এ ছাড়া আছে ড্যাডিস সস, যা দেখতে বাদামি রঙের, আছে ম্যাকডোনাল্ডের সস। এইচপি সস মূলত তেঁতুল দিয়ে বানানো ব্রিটিশ সস। ওকে সস হচ্ছে বাদামি সস। প্রেগো হচ্ছে এমন এক সস যা কেবল পাস্তায় ব্যবহার করা হয়। ঝাল সসের জন্য বিখ্যাত ব্র্যান্ড হচ্ছে ট্যাবাস্কো।

পৃথিবীতে যত রকমের সস আছে, তার মাত্র কয়েকটির নাম এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হলো। প্রায় সব ধরনের খাবার দিয়ে সস বানানো যায়। আর সেগুলো বিভিন্ন দেশের রান্নার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও বটে।

আরও পড়ুন

সস নামটা এল কীভাবে

এখন আমরা স্ন্যাকসে নানান ধরণের সস খাই। তবে অনেক লবণ আছে এমন সস খুব কম খাই, তারপর সসের মধ্যে লবণ আছে! কীভাবে? কারণ, সস নামটা এসেছে লাতিন শব্দ সালসুস থেকে; যার মানে লবণ দিয়ে মাখিয়ে ফেলা।

গন্ধ তাড়াতে সস

প্রাচীন রোমান সভ্যতার নাগরিকেরাও একধরনের সস আবিষ্কার করেছিল। এটা ছিল মাছ দিয়ে তৈরি সস। তবে এটিকে খাবারের উপাদান হিসেবে নয়, খাবারের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য তারা ব্যবহার করতেন। রোমানরা আবিষ্কার করে, খাবার যত পুরোনো হয়, তত সেটা গন্ধ ছড়ায়। তবে মাছ দিয়ে বানানো সস খাবারে দিলে খাবারে সেই গন্ধ অনেকটাই দূর হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

কেচাপ ও সসের মধ্যে পার্থক্য কী

পার্থক্য হচ্ছে নামে। ইংরেজিতে যাকে সস বলে সেটাই আসলে কেচাপ। সসের নাম কেচাপ হলো কীভাবে সেটা নিয়ে গবেষকদের তিনটি মত রয়েছে। চীনের শিয়াওমেন অঞ্চলে ‘কেজাপ’ নামের একটি শব্দ থেকে নাকি কেচাপ কথাটি এসেছে। সেখানে টমেটোকে বিলাতি বেগুন নামে ডাকা হতো। আর কেজাপ মানে হচ্ছে বিলাতি বেগুনের সস। মালয়েশিয়ার ভাষার নাম ‘বাহাসা মালয়’-এ একটি শব্দ হচ্ছে কিচাপ। আর এর মানেই নাকি সয়া সস। আবার ইন্দোনেশিয়ার ভাষা যার নাম বাহাসা ইন্দোনেশিয়া সেই ভাষায় কেচাপ মানে সুগন্ধি সয়া সস।

আরও পড়ুন

সকল সসের ভিত্তি

সাধারণত স্বাদের গুণাগুণের ভিত্তিতে সসকে আলাদা করা হয় যেমন ঝাল, টক, মিষ্টি ইত্যাদি। তবে সাধারণত পাঁচটি সসকে সকল সসের ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এগুলোর নাম বেসমেল, ভেলুতে, এসপানল। টমেটো সস ও হলান্দুস। ফরাসি রন্ধনশিল্পী মারিয়া এতোনেত কারেম এই পাঁচ প্রকার সসকে বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তাই এদের বলা হয় মাদার অব সস।

সয়া সস

রান্নায় এখন সয়া সস ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে চায়নিজ রান্নায় এই সসের ব্যবহার খুব প্রচলিত। এই সয়া সসের বয়সও কম নয়। গবেষকদের মতে, এখন থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বছর আগে চীনে প্রথম সয়া সস প্রস্তুত করা হয়। চীনের পশ্চিমে ছিল হান রাজবংশ। সেখানে সয়াবিন ও গম দিয়ে প্রথম সয়া সস তৈরি করা হয়। তবে চীনে নাকি প্রথমে সয়া সস লবণ তৈরির এক উপাদান হিসেবে ব্যবহার হতো।

আরও পড়ুন