লং কোভিডে ভুগছে কিশোরেরা, বাড়ছে হতাশা
যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডের ডোরসেট এলাকা বাসিন্দা এক কিশোর ভুগছে করোনার উপসর্গ নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই উপসর্গ বহন করছে সে। এখন ভুগছে হতাশায়। তার মনে হচ্ছে, সবকিছু থেকে যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে সে। এই হতাশা তার জন্য একেবারে অস্বাভাবিক নয়। কারণ, সে বাড়িতে থাকছে, স্কুলে যেতে পারছে না।
শুধু এই কিশোর নয় যুক্তরাজ্যের অনেক কিশোরই এখন এই লং কোভিড বা দীর্ঘদিন ধরে করোনার উপসর্গ নিয়ে দিন পার করছে। যেমন ওয়েমাউথের ১৬ বছর বয়সী মলির কথাই বলা যেতে পারে। ১২ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে লং-কোভিডের উপসর্গ রয়েছে তার শরীরে।
মলি জানায়, লং-কোভিড শনাক্ত হওয়ার আগে সে বেশ চটপটে ছিল। খেলাধুলা করতে পছন্দ করত। মলি বলে, ‘আমি এখন এমন কিছু উপসর্গ নিয়ে বেঁচে আছি যার কারণে অন্য কিশোর-কিশোরীদের মতো অনেক কিছু করতে পারি না।’
মলির এই কোভিড আক্রান্ত হওয়া এবং এই রোগ বয়ে বেড়ানোর যাত্রাটা বেশ বেদনাদায়ক। তাকে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এর করণে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। সে বলে, ‘আমি প্রায়শই নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে করি। কারণ আমার বন্ধুরা এগিয়ে গেছে, আর আমি তাদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারি না।’
মলি মনে করে, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লং-কোভিড নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করা উচিত। সে বলে, ‘আমার মতো শিশুরা প্রায়ই নিজেদের সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন ও ব্যর্থ মনে করে। আমাদের সংগ্রামগুলোকে তুচ্ছ করে দেখা হয় এবং আমাদের এই সমস্যাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।’ মলি বলে, ‘আমি চাই মানুষ বুঝুক এই পরিস্থিতি তরুণদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে… এবং যেন ভবিষ্যতে আমার মতো শিশুরা আর অবহেলার শিকার না হয়।’
যুক্তরাজ্যে ওয়েমাউথ এলাকায় লং-কোভিড নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান লং কোভিড কিডস। এই সংস্থার সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্যামি ম্যাকফারল্যান্ড বলেন, এই বিষয়ে সরকারের ‘দৃঢ় এবং বাস্তবসম্মত’ পদক্ষেপ দরকার। এমনকি যেসব শিশুরা লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর অবহেলার শিকার হয়েছে তাদের কাছে সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেন মনে করেন তিনি।
করোনার মহামারি যখন শুরু হয় তখন লানার বয়স ছিল ১৪ বছর। সেই সময় তার মা স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছিল। অন্যান্য অসুখ থাকায় তার মা করোনায় আক্রান্ত হলে বড় ক্ষতি হতে পারে—এ কারণে লানাকে দুই বছর ধরে ঘরে থাকতে হয়েছে। লং কোভিড নিয়ে যে সমীক্ষা হচ্ছে সেই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে। এতে সে তুলে ধরেছে, বাসায় থাকার কারণে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুদের থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের ‘ক্লিনিক্যালি ভালনারেবল ফ্যামিলিজ’ নামের এক সংগঠনের সদস্য সারা স্টিভেন বলেন, এই শিশু ও পরিবারগুলোর ওপর লং কোভিডের প্রভাব এখনো আছে এবং এর কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি নিয়ে ঠিকঠাক মতো সমীক্ষা বা তদন্ত হওয়া উচিত এবং এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
বিবিসি থেকে অনুবাদ: মোজাহিদুল ইসলাম মণ্ডল