আইসল্যান্ডেও মশা দেখা গেছে, বিষয়টি কেন ‘দুঃখজনক’
মশাবিহীন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করা অসম্ভবই বটে। তবে একটা দেশ আছে, যেখানে কোনো মশা নেই। দেশটির নাম আইসল্যান্ড। একটিও মশা নেই ইউরোপের এই দেশে…
এতক্ষণ যেটুকু পড়লে, তা ২০২৩ সালে কিশোর আলোয় প্রকাশিত একটি লেখার অংশবিশেষ। অর্থাৎ তখন আইসল্যান্ডে একটি মশাও ছিল না। কিন্তু এখন আর জোর দিয়ে এ কথা বলার জো নেই। কারণ, আইসল্যান্ডেও মশার সন্ধান পাওয়া গেছে।
এত দিন পৃথিবীতে মশাহীন জায়গা ছিল মাত্র দুটি। বরফের দেশ অ্যান্টার্কটিকা আর আইসল্যান্ড। এখন মশাহীন জায়গা রইল শুধু অ্যান্টার্কটিকা। তবে মশা নেই, এমন দেশ কিন্তু আর রইল না।
কিন্তু আইসল্যান্ডে মশা খুঁজে পেল কীভাবে? কে এই মশা খুঁজে বের করল? গত সপ্তাহে বিয়র্ন জালটাসন নামের এক লোক পোকা দেখতে বেরিয়েছিলেন। তিনি পোকা খুব ভালোবাসেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, দড়ির ওপর বসে আছে এক ‘অদ্ভুত মাছি’! সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে লিখলেন, ‘আমি দেখেই বুঝেছিলাম, এটা আগে কখনো দেখিনি।’
বিয়র্ন মাছিগুলোকে ধরে পাঠিয়ে দিলেন বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বললেন, এটা মাছি নয়, মশা! এই মশা শীতকালেও বেঁচে থাকতে পারে। খবরটা শুনে বিয়র্ন খুব দুঃখ পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে মশাদের হাত থেকে বাঁচার শেষ দুর্গটিও ভেঙে পড়ল।’
আইসল্যান্ডে এই মশা কোথা থেকে এল, তা জানার আগে জেনে নিই, দেশটিতে কেন মশা ছিল না? দেশটিতে মশা না থাকার কারণ হলো ওখানকার প্রচণ্ড ঠান্ডা। মশা জন্মানোর জন্য যে হালকা গরম আর জমে থাকা পানি দরকার, তা সেখানে ছিল না। তবে চলতি বছর দেশটিতে যা গরম পড়েছে, তা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে!
সাধারণত মে মাসে আইসল্যান্ডের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে না। থাকলেও মাত্র দুই-তিন দিন। কিন্তু এ বছর টানা ১০ দিন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির বেশি ছিল। এমনকি এক দিন তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল। আইসল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে গরম দিন ছিল ওটাই। এই গরমে মশাদের বেঁচে থাকা সহজ হয়ে গেছে।
ভাবতে পারো, আইসল্যান্ডে মশাগুলো পৌঁছাল কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীরা ঠিক জানেন না। তবে বিয়র্ন মনে করেন, মশাগুলো জাহাজে চড়ে ওখানে গেছে! তাঁর বাড়ি থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে একটি বড় বন্দর আছে। তিনি জানান, প্রায়ই জাহাজ আর কনটেইনারের সঙ্গে অনেক কিছু দেশে ঢুকে পড়ে। হয়তো সেভাবেই মশা এসেছে। তিনি তার বাগানে তিনটি মশা পেয়েছেন। তার মানে, আশপাশে সম্ভবত আরও অনেক মশা আছে।
তবে বিজ্ঞানীরা এখন তাড়াহুড়া না করে অপেক্ষা করছেন। আগামী বসন্তে তাঁরা আবার পরীক্ষা করে দেখবেন, মশাগুলো কি আইসল্যান্ডে সত্যিই ঘরবাড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করেছে, নাকি এবার শীতেই সব মরে যাবে।
সূত্র: বিবিসি