গায়ে কেন কাঁটা দেয়?

হেলথ ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক

ভৌতিক সিনেমা দেখার সময়, রাগ উঠলে বা কোনো আবেগময় গান শুনতে শুনতে কখন যে শরীরটা শিউরে উঠেছে, আমরা টেরই পাই না। চোখের পলকে ত্বকের ওপর ছোট ছোট গুটি ফুটে ওঠে, যেন গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। আমরা একে বলি গায়ে কাঁটা দেওয়া। বেশির ভাগ সময় বিষয়টা খুব স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। ভয় পেয়েছি, আবেগে আপ্লুত হয়েছি, বা ঠান্ডা লেগেছে, এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু কখনো কি ভেবেছ, এই গায়ে কাঁটা দেওয়ার পেছনের আসল কারণটা কী? এটি হলে শরীরের ভেতরে ঠিক কী ঘটে? কেনই-বা আবেগ, ভয় কিংবা ঠান্ডার প্রতিক্রিয়া এসে পড়ে সরাসরি ত্বকের ওপর? চলো জানি, গায়ে কেন কাঁটা দেয়?

ঠান্ডা অনুভূতি হলে

শরীর যখন খুব ঠান্ডা অনুভব করে, তখন মস্তিষ্ক শরীরকে গরম রাখার সংকেত পাঠায়। গুজবাম্পস বা গায়ে কাঁটা দেওয়া সেই সংকেতের প্রতিক্রিয়া। এর মাধ্যমে ত্বকের কাছাকাছি গরম বাতাস আটকে রেখে শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়।

ঠান্ডার কারণে যদি গায়ে কাঁটা দেয়, তাহলে এর সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন—

·       কাঁপুনি হতে পারে

·       নিজেকে আকড়ে ধরার প্রবণতা থাকতে পারে

·       ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে

আরও পড়ুন

শরীর গরম হয়ে গেলে সাধারণত গায়ে কাঁটা দেওয়া নিজে থেকেই দূর হয়ে যায়। তবে যদি অতিরিক্ত ঘুম ভাব আসে, কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। কারণ, এগুলো হাইপোথার্মিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।

তীব্র আবেগের অনুভূতি হলে

ভয়, বিস্ময়, মুগ্ধতা কিংবা অন্য কোনো তীব্র আবেগের মুহূর্তে শরীর হঠাৎ করে কিছু নির্দিষ্ট হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনগুলো ত্বকের নিচে থাকা ছোট ছোট পেশিকে সংকুচিত করে, ফলে লোম খাড়া হয়ে যায় এবং ত্বকের ওপর দেখা দেয় গুজবাম্পস বা গায়ে কাঁটা দেওয়া।

এই প্রতিক্রিয়াটি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মজার বিষয় হলো সব লোমশ প্রাণীর মধ্যেই এটি দেখা যায়। বিপদের সময় লোম খাড়া হয়ে গেলে প্রাণীরা আকারে তুলনামূলক বড় ও ভয়ংকর দেখায়, এটা তাদের আত্মরক্ষায় সহায়তা করে। মানুষের শরীরে লোমের পরিমাণ কম হওয়ায়, এখানে মূলত ত্বকে ছোট ছোট দানা ওঠাই চোখে পড়ে।

তীব্র আবেগের কারণে যদি গায়ে কাঁটা দেয়, তাহলে এর সঙ্গে আরও কিছু শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। যেমন—

·       শরীর হঠাৎ শীতল হয়ে আসা বা কাঁপুনি

·       হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হওয়া

·       দ্রুত বা গভীর শ্বাস নেওয়া

·       চোখে পানি চলে আসা

এই লক্ষণগুলো সাধারণত সাময়িক। আবেগের তীব্রতা কমে গেলে গায়ে কাঁটা দেওয়া নিজে থেকেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

লোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে

আমাদের ত্বকে কেরাটিন নামে একটি শক্ত প্রোটিন থাকে, যা ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিন্তু শরীরে যদি অতিরিক্ত কেরাটিন তৈরি হয়, তাহলে কেরাটোসিস পিলারিস নামে একটি অবস্থা দেখা দিতে পারে। এতে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় এবং ত্বকের ওপর ছোট ছোট দানা তৈরি হয়।

যদি এ সমস্যার কারণে আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে, যেমন, গাল, বাহুর ওপরের অংশ, ঊরুতে খসখসে ছোট ছোট ফুসকুড়ি হতে পারে। ত্বকের কিছু জায়গা শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।

কেরাটোসিস পিলারিস সাধারণত ক্ষতিকর কোনো সমস্যা নয়। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি নিজে থেকেই কমে যায়।

খিঁচুনি হলে

কিছু ক্ষেত্রে খিঁচুনির সময়ও গায়ে কাঁটা দেওয়া দেখা যেতে পারে। তবে এটি তুলনামূলকভাবে বিরল। এই লক্ষণটি বেশি দেখা যায় টেম্পোরাল লোব এপিলেপসিতে। এ ধরনের এপিলেপসি বা মৃগীরোগে খিঁচুনি শুরু হয় মস্তিষ্কের সেই অংশ থেকে, যা আবেগ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ অবস্থায় খিঁচুনির সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন, হঠাৎ বিভ্রান্ত লাগা, একদৃষ্টিতে ফাঁকা দিকে তাকিয়ে থাকা, বারবার ঢোঁক গিলতে থাকা, চিবোনোর মতো নড়াচড়া করা ইত্যাদি

এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 

সূত্র: ওয়েব এমডি

আরও পড়ুন