পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ১০ কয়েন 

তোমার পকেটে বা মানিব্যাগে থাকা কয়েনগুলো কতটা দামি? আসলে আমাদের কাছে থাকা কয়েনগুলোর দাম নির্দিষ্ট। মানে এক টাকার কয়েনের মূল্য ১ টাকাই। আবার পাঁচ টাকার কয়েনের দাম ৫ টাকা। পাঁচ টাকার কয়েনের পরিবর্তে কেউ তোমাকে দশ টাকা দেবে না। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু মুদ্রা আছে, যেগুলোর একটার দামেই কিনে ফেলা যায় মস্ত বড় বিলাসবহুল বাড়ি কিংবা আস্ত একটি ব্যক্তিগত জেট? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি।

এসব মুদ্রার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। এগুলো একেকটি ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। সেজন্যই দামটাও আকাশ ছোঁয়া। কোনোটা হয়তো রাজরাজাড়াদের আমলে তৈরি, কোনোটা আবার তৈরির সময় সামান্য ভুলের কারণে হয়ে উঠেছে অমূল্য। সেরকম ১০টি কয়েন নিয়েই আজকের লেখা। 

তবে এর আগে একটু জানিয়ে রাখি, কেন একটি সাধারণ মুদ্রা হয়ে ওঠে অসাধারণ? যেকোনো মুদ্রার দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার পেছনে মূলত তিনটি কারণ কাজ করে। প্রথমত, কয়েন কতটা দুর্লভ। যে মুদ্রা যত কম তৈরি হয়েছে বা টিকে আছে, তার দাম তত বেশি। দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক গুরুত্ব। যদি কোনো মুদ্রা বড় কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে সংগ্রাহকদের কাছে তার কদর বেড়ে যায়। আর তৃতীয়ত, অনেক সময় সরকারি টাঁকশালে মুদ্রা তৈরির সময় কিছু ভুল হয়ে যায়। হয়তো ভুল ধাতু ব্যবহার বা নকশায় গড়মিল হয়। এই ভুলগুলোই মুদ্রাটিকে অনন্য এবং মূল্যবান করে তোলে। এবার আসল কথায় আসা যাক। সবচেয়ে দামী মুদ্রা কোনগুলো?

আরও পড়ুন

১০. ১৯৪৩ সালের ব্রোঞ্জ লিঙ্কন সেন্ট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা তামার সংকট মেটাতে ইস্পাতের পয়সা তৈরি শুরু করে। কিন্তু ভুলবশত কয়েকটি পয়সা তামার চাকতিতে তৈরি হয়ে যায়। এই ‘ভুল’ পয়সাটিই আজ সংগ্রাহকদের কাছে এক অমূল্য রত্ন। এর দাম প্রায় ২০ কোটি টাকা। যুদ্ধের সময়ের একটি ঐতিহাসিক ভুল এই মুদ্রাকে দুর্লভ করে তুলেছে।

৯. ১৭৮৭ সালের ফিউজিও সেন্ট 

এটি আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম সরকারি মুদ্রা। এর নকশা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। মুদ্রার গায়ে লেখা আছে Mind Your Business, মানে নিজের চরকায় তেল দাও। কথাটা সে সময়ের মার্কিনিদের মনোভাবের প্রতীক। এটি আমেরিকার প্রথম মুদ্রা বলে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। তাই দামটাও আকাশছোঁয়া, প্রায় সাড়ে ২০ কোটি টাকা।

৮. ১৯০৭ সালের সেন্ট-গডেন্স ডাবল ঈগল 

এই স্বর্ণের মুদ্রাটিকে অনেকেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মুদ্রা বলে মনে করেন। এর নকশা এত নিখুঁত ছিল যে বেশি পরিমাণে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে এর সংখ্যা খুব কম। এর দাম প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। অসাধারণ শৈল্পিক নকশার কারণেই এটি সংগ্রাহকদের কাছে এত আকর্ষণীয়।

আরও পড়ুন

৭. ১৮০৪ সালের ড্রেপড বাস্ট সিলভার ডলার 

এই মুদ্রার গায়ে ১৮০৪ সাল লেখা থাকলেও এটি তৈরি হয়েছিল ১৮৩০ সালের পর। মূলত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য তোৈরি হয়েছিল এই মুদ্রা। তাই একে আমেরিকান মুদ্রার রাজা বলা হয়। এর দাম প্রায় প্রায় ৩৯ কোটি টাকা। এর ইতিহাস ও দুর্লভ ডিজাইন একে মূল্যবান করেছে।

৬. ৭২৩ খ্রিস্টাব্দের উমাইয়া গোল্ড দিনার 

ইসলামি ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মুদ্রাটি খলিফার নিজের সোনার খনি থেকে আনা সোনা দিয়ে তৈরি হয়েছিল। মুদ্রার গায়ে খলিফার নাম ও ধর্মীয় বাণী খোদাই করা আছে। ফলে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এর দাম প্রায় প্রায় ৫৯ কোটি টাকা।

৫. ১৯১৩ সালের লিবার্টি হেড নিকেল 

এই মুদ্রাটি সরকারি অনুমতি ছাড়াই তৈরি করা হয়েছিল এবং পৃথিবীতে এর মাত্র পাঁচটি কপি টিকে আছে। অনেক বছর ধরে এর একটি মুদ্রা হারিয়ে গিয়েছিল বলে মনে করা হতো। অবশ্য  পরে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর রহস্যময় ইতিহাস এবং চরম দুর্লভ হওয়ার কারণে এর দাম প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

৪. ১৩৪৪ সালের এডওয়ার্ড তৃতীয় ফ্লোরিন 

মধ্যযুগের এই ব্রিটিশ সোনার মুদ্রার আরেক নাম ‘ডাবল লিওপার্ড’। পৃথিবীতে এর মাত্র তিনটি কপি খুঁজে পাওয়া গেছে। মধ্যযুগের রাজতন্ত্রের সঙ্গে সংযোগ এবং চরম দুর্লভ হওয়ার কারণে এর বর্তমান মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা ধরা হয়।

৩. ১৭৮৭ সালের ব্র্যাশার ডাবলুন 

আমেরিকার স্বাধীনতার পর অ্যাফ্রেইম ব্র্যাশার নামে একজন স্বর্ণকার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই সোনার মুদ্রাটি তৈরি করেন। এটি আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। আমেরিকার প্রথমদিকের স্বর্ণের মুদ্রাগুলোর মধ্যে অন্যতম হওয়ায় এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য অনেক। এর দাম প্রায় ১১০ কোটি টাকা।

২. ১৭৯৪ সালের ফ্লোয়িং হেয়ার সিলভার ডলার 

আমেরিকার টাঁকশাল থেকে তৈরি প্রথম রুপার ডলার এটি। মুদ্রাটি শুধু ঐতিহাসিক কারণেই নয়, এর অসাধারণ নিখুঁত অবস্থার জন্যও বিখ্যাত। প্রথম তৈরি মুদ্রাগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভালো অবস্থায় টিকে আছে। এর দাম প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা।

১. ১৯৩৩ সালের সেন্ট-গডেন্স ডাবল ঈগল 

তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা এই সোনার মুদ্রাটির গল্প অসাধারণ। ১৯৩৩ সালে আমেরিকা স্বর্ণের মুদ্রা ব্যবহার বন্ধ করে দেয় এবং টাঁকশালে তৈরি সব মুদ্রা গলিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনোভাবে কয়েকটি মুদ্রা বাইরে চলে আসে। আইনগতভাবে এর মালিকানা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর এই রহস্যই একে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মুদ্রায় পরিণত করেছে। এর দাম প্রায় ২২২ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন