ওপেনএআই ছাড়লেন গবেষক, সত্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ওপেনএআই। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এটি ওপেন সোর্স বা উন্মুক্ত গবেষণা করে, মানবকল্যাণের জন্য কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়া অন্তত দুইজন গবেষক দাবি করেছেন, নিজেদের প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক নিয়ে সত্য প্রকাশে আগ্রহী না ওপেনএআই।
মার্কিন প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ওয়ায়ার্ড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেনএআই এখন এমন গবেষণা প্রকাশে ‘রক্ষণশীল’ হয়ে উঠছে, যেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের কারণে অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে। বিশেষ করে চাকরি হারানো, কর্মসংস্থানের সংকট বা অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো সামনে আনতে প্রতিষ্ঠানটি আগ্রহী না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে অন্তত দুইজন গবেষক ওপেনএআইয়ের গবেষণা দল ছেড়েছেন।
এমন একজন টম কানিংহাম। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ। চাকরি ছাড়ার আগে সহকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, ওপেনএআইয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা দল ধীরে ধীরে প্রকৃত গবেষণার পথ ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার কাজ করছে। সত্য অনুসন্ধানের বদলে গবেষণাকে ব্যবহার করা হচ্ছে কোম্পানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির হাতিয়ার হিসেবে।
কানিংহামের বিদায়ের কিছুদিন পরই ওপেনএআইয়ের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার জেসন কওন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের একটি বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি লেখেন, প্রতিষ্ঠানটির শুধু ‘কঠিন বিষয়’ নিয়ে গবেষণা প্রকাশ করলেই হবে না, বরং ‘সমাধান তৈরি’ করাকে মূল লক্ষ্য বানানো উচিত।
সমালোচকদের মতে, এটি আসলে এমন গবেষণাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ওপেনএআইয়ের প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক ঢেকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই প্রবণতা ওপেনএআইয়ের দীর্ঘদিনের পরিচয়ের সঙ্গে মেলে না। প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে মানবকল্যাণে নিবেদিত, স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন হিসেবে তুলে ধরে।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় ওপেনএআই ওপেন-সোর্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মুক্ত গবেষণার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই চিত্র বদলেছে। এখন এই প্রতিষ্ঠানের উন্নত মডেলগুলো বেশিরভাগ উন্মুক্ত না। প্রতিষ্ঠানটি একটি লাভজনক ‘পাবলিক বেনিফিট করপোরেশন’ হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে ওপেনএআই শেয়ারবাজারে আসতে পারে। যেখানে এই প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন হতে পারে এক ট্রিলিয়ন ডলার।
যদিও কাগজে-কলমে ওপেনএআইয়ের অলাভজনক শাখাটি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। একদিকে তারা এআই চিপ নির্মাতাদের কাছ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আদায় করছে, অন্যদিকে মাইক্রোসফটের ক্লাউড সেবার জন্য ২৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ করার চুক্তি করছে।
এখন বিশ্বজুড়ে মানুষ আশঙ্কা করছে, এআই হয়তো লাখ লাখ চাকরি ধ্বংস করবে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছে, ভবিষ্যতে মানবজাতির অস্তিত্বের জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে এআই।
সূত্র: ফিউচারাম ডটকম