দিনে কয়টা আম খাওয়া নিরাপদ
বাজার এখন পাকা আমে ভরে গেছে। দোকানে গেলেই দেখা যায় নানা জাতের আম। কোনোটা লম্বা, কোনোটা আবার গোলাকার। স্বাদেও আছে ভিন্নতা। আম্রপালি, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, ল্যাংড়াসহ নানা জাতের আম। খেতেও ভারি মজা। সঙ্গে নানা উপকারিতা তো আছেই।
আমে আছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে। আমের গ্লুটামিক অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আরও আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো আমাদের শরীরে সৈনিকের মতো কাজ করে। ফলে অসুখবিসুখ থেকে বাঁচা যায়। পাশাপাশি আমের ফাইবার হজমে সাহায্য করে। এতে পেট থাকে পরিষ্কার। আর পেট ঠিক থাকলে যে সব ঠিক থাকে, তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই।
কিন্তু আম কি যত ইচ্ছা খাবে? উপকারের পাশাপাশি খেতে মজা বলে পেটপুরে আম খাওয়া যাবে না। কারণ, বেশি আম খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমের ভালো গুণগুলোই উল্টো খারাপ হয়ে যাবে।
তাহলে দিনে কয়টা আম খাওয়া নিরাপদ? পুষ্টিবিদদের মতে, তোমাদের মতো অল্পবয়সীরা দিনে একটি বা দুটি মাঝারি ধরনের আম খেতে পারো।
তবে যাঁদের বয়স ১৮ বছরের বেশি, তাঁরা চাইলে ৩টি মাঝারি ধরনের বা ২টি বড় আম খেতে পারেন।
মোদ্দাকথা, ৩০০-৪০০ গ্রাম আম এক দিনে খাওয়া ভালো। এতে প্রায় ১২৫-১৫০ ক্যালরি থাকে। এর চেয়ে বেশি আম খাওয়া ঠিক নয়।
কিন্তু কেন এর চেয়ে বেশি আম খাওয়া যাবে না? কারণ, আমে থাকে চিনি। বেশি আম খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত আম সমস্যা হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, আম খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। ডায়াবেটিসেও আম খাওয়া যাবে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। পরিমাণে কম বা অন্য শর্করা বাদ দিয়ে, সঙ্গে খেতে হবে প্রোটিন।
আগেই বলেছি, আম হজমে সাহায্য করে; কিন্তু বেশি আম খেলে সেই হজমেই সমস্যা হবে। আমের ফাইবার অন্ত্রের জন্য ভালো হলেও বেশি ফাইবারের কারণে পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি ও ডায়রিয়া হতে পারে।
দুটি বড় আমে প্রায় ১৫০ ক্যালরি থাকে। তাই বেশি আম খেয়ে ব্যায়াম না করলে বেড়ে যেতে পারে ওজন। পাশাপাশি যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য বেশি আম খাওয়া ঝুঁকি।
আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। রক্তে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমা হলে হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে। এতে ধীরে ধীরে শরীর ক্লান্ত লাগতে শুরু করে। পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, হাত-পায়ে ঝিমঝিম বা খিঁচুনি দেখা দেয়। মনে হয়, শরীর যেন কিছুতেই কাজ করছে না ঠিকমতো। সবচেয়ে বড় চিন্তার কথা হলো, হার্ট তখন ঠিকমতো স্পন্দন করতে চায় না। অনেকের বুকে ধড়ফড় শুরু হয়। হার্টবিট খুব ধীরে বা হঠাৎ থেমে যাওয়ার মতো অবস্থাও তৈরি হতে পারে।
তাই আম খাওয়া যেমন ভালো, তেমনি বেশি খাওয়াও ক্ষতিকর। এ জন্য আম খেতে হবে পরিমিতভাবে। আম যতই ভালো লাগুক না কেন, দিনে সর্বোচ্চ তিনটির বেশি আম খাওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ এই গরমে ফলের রাজা আম খাও বুদ্ধিমানের মতো, মেপে মেপে।
সূত্র: হেলথলাইন ও সিএনবিসি