আহমেদ খান হীরকের গল্প—গ্লিচ
পার্সেলটা দেখতে বিশ্রি। কালো এবড়োখেবড়ো গোল অদ্ভুত বস্তু। হাতে নিতেই নাহিরার মনে হলো, এই আজব জিনিস কে পাঠাতে পারে? প্রেরকের নামটাম অবশ্য লেখা নেই। দেশের বাইরে থেকে আসছে, এটুকুই শুধু জানা। ফারজানা অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। সে পাঠাতে পারে। কিন্তু ফেসবুকেও সেদিন কথা হলো ওর সাথে, কিচ্ছু বলেনি সে। তাহলে? মা টিভি দেখছিল। নাহিরার হাতের জিনিসটা দেখে আঁতকে উঠল বলা যায়—কী ওইটা?
‘আম্মু, মুভিখোরদের মতন হুদাই রিঅ্যাক্ট কইরো না তো!’
‘এই মুভিখোর আবার কী রে?’
‘যে সারা দিন মুভি দেখে আর তোমার মতন চিল্লাফাল্লা করে, সে–ই মুভিখোর!’
‘কপাল ভালো তোদের…যে আমরা তেমন বাপ-মা না, আমার মা হইলে এখনই তোরে জুতা দিয়া পিটাইত!’
হেসে দেয় নাহিরা। আম্মুর সঙ্গে তার এই রকম বন্ধু-বন্ধুভাবের রিলেশন। তার মধ্যে এ ধরনের কথাবার্তা আসলে একটা গ্লিচ। মানে মা-মেয়ের শুদ্ধ সম্পর্ক হতে হতে হয়নি তাদের…এই গ্লিচে একটু বন্ধুত্ব আছে, একটু বাডিনেস আছে, আবার একটু মন–কষাকষি টানাপোড়েনও আছে।
‘কে পাঠাইছে তোরে এইটা?’
‘আমার বয়ফ্রেন্ড! খুশি তুমি?’
‘শোন, তোর যে ঠোঁটকাটা স্বভাব, বয়ফ্রেন্ড ক্যান সাধাসিধা কোনো ফ্রেন্ড জুটবে না কপালে। আমিই তোর আম্মু, আমিই তোর ফ্রেন্ড… এইখানেই দ্য এন্ড!’
‘বলছে তোমারে! বড় হইয়া নিই। তোমার চোখের সামনে সাতটা–আটটা বয়ফ্রেন্ড বানায়ে দেখাব।’
আম্মু এবার ঝাপটা দেয় হাতের। দেওয়ারই কথা। নাহিরা তৈরিই ছিল। মাথাটা সরিয়ে নেয়। দুজনেই হাসে। আরেকটা ঝাপটা দেয় আম্মু। এটাতে অবশ্য তৈরি ছিল না নাহিরা। শেষ মুহূর্তে ঝুঁকতে গিয়ে হাতের পার্সেলটা পড়ে যায়। গড়িয়ে চলে যায় অনেকটা। একেবারে কোনার সোফার নিচ দিয়ে অন্ধকারে। নাহিরা বলে, ‘এইটা কী করলা আম্মু!’ আম্মুর হাসি আরও বাড়ে, ‘ঠিক করছি। উচিত শাস্তি হইছে। এইবার নিচ থেকে বাইর করে নিয়ে আয়!’
নাহিরা যায়ও পার্সেলটা বের করতে। কিন্তু সোফার নিচে ঝুঁকতেই তার মনে হয়, গত পরশুই এখানে একটা বিরাট টিকটিকি সে দেখেছে। টিকটিকি নাহিরা এমনিতে ভয় পায় না। কিন্তু সেই টিকটিকিটা ছিল প্রায় গুইসাপের সমান। অন্তত নাহিরার সেটাই মনে হয়েছিল! নাহিরা তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘আব্বু আসলে আব্বু বের করবে…আমি ওই অন্ধকারে হাতই দেব না!’
২
রাত ৩:৪৭। মোবাইলের ঘড়ি।
নাহিরার ঘুম ভেঙে গেছে। আর গেলেই আজকাল যা করে, তা–ই করেছে। মোবাইল ওপেন করেছে। এক হলকা আগুনের মতো আলো তার চোখের ওপর আছড়ে পড়েছে। তাতে বিস্ময় নিয়ে দেখছে, মোবাইলের ওয়ালপেপার বদলে গেছে। সেখানে একটা গুইসাপের ছবি। পৃথিবীতে দুইটা জিনিস ঘৃণা করে নাহিরা। এক কেমিস্ট্রির সূত্র, দুই এই গুইসাপ। সাপের এই অদ্ভুত সরীসৃপ হয়ে যাওয়াটার কী কারণ, কী ব্যাখ্যা, কিছুই বুঝতে পারে না সে। বুঝতে যে চায়ও খুব, তা–ও না; বরং থাকতে চায় তফাতে। চার বছর বয়সে গ্রামের বাড়ি ছুটিতে গিয়ে প্রথমবার দেখেছিল এই কুৎসিত জিনিসটাকে। তার পর থেকে স্রেফ ঘৃণা করে। মাথায় চিন্তা এলেও মুখে থুতু চলে আসে। সেই জিনিসের ছবি নিজের ফোনের ওয়ালে দেখে প্রথমেই যা করে নাহিরা তা হলো, ফোনটাকে ছুড়ে ফেলে দূরে।
ফোন মেঝেতে আছড়ে পড়ে। ভাঙে না, বন্ধও হয় না। ওয়ালপেপারের গুইসাপটা নাহিরার দিকে তাকিয়ে থাকে জুলজুল চোখে। তিন গোয়েন্দা পড়া মেয়ে নাহিরা। ফলে এ রকম সময়ে কীভাবে কী করতে হয়, একটু হলেও জানা আছে তার। নিজেকে কিশোরের জায়গায় দাঁড় করিয়ে ফেলে চট করে। পরক্ষণেই বন্ধ করে নেয় চোখ। বোঝার চেষ্টা করে আসলে কী থেকে কী হয়েছে…মাথা ঠান্ডা রাখতে বড় করে শ্বাস নেয়…
ঠিক আছে…ওকে! বুঝতে পেরেছে…নাহিরা আসলে স্বপ্ন দেখছে। অবশ্যই স্বপ্ন। আসলে তার ঘুম ভাঙেনি। আসলে ফোন হাতে নেয়নি সে এবং তার ফোনের ওয়ালপেপারে তার যে ছবি…রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে খুব দারুণ একটা লাইটে তুলেছিল, সেখানেই দুই আঙুল উঁচিয়ে ভি ইশারা করে রেখেছিল, সেটিই আছে। আর ফোনটি সে ছুড়ে মারেনি মেঝেতে। এসবই ঘটেছে তার স্বপ্নের ভেতর। ফলে এখন বালিশের তলায় হাত দিলেই সে তার ফোনটা পেয়ে যাবে। ঠিক এইভাবে…
নাহিরা ধীরে ধীরে তার হাতটা নিয়ে যায় বালিশের তলায়। প্রথমেই হাতে আসে ছোট্ট একটুকরা প্লাস্টিক। ভালো করে হাতড়ে বুঝতে পারে, এটা তার মাথার ক্লিপ। শোবার আগেও খুঁজেছিল, পায়নি। ক্লিপটা সে সরিয়ে রাখে এক পাশে। চোখ বন্ধই রাখে। কারণ, স্বপ্নটাকে আর সে ফিরে আসতে দিতে চায় না। হাতটা আরেকটু ঢুকিয়ে দেয় বালিশের ভেতর। এখানেই পাবে ফোনটা। আর একটু হাত এগোলেই…আর একটু হাত যেই না এগিয়েছে নাহিরা অমনি, সঙ্গে সঙ্গে হাতের ভেতর শীতল কিছু একটা খেলে যায়। দ্রুত, খুব দ্রুত হাত থেকে পিছলে বেরিয়েও যায় সেটা…ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে নাহিরা। কী ছিল ওটা? কী ছিল ওইটা? ওইটা কী ছিল রে?
হাত কাঁপছে নাহিরার। থরথর করে কাঁপছে আসলে সমস্ত শরীর। তার বালিশের তলায় কী ছিল? কী ছিল ওইটা?
৩
সকালের নাশতাটা ভালো হয় না নাহিরার। এমনিতেই ঘুম হয়নি রাতে। স্বপ্ন নাকি বাস্তব—কিসের ভেতর দিয়ে যে গেছে, এখনো ঠাহর করতে পারছে না। তবে স্বপ্নই যে তা সে খুব বেশি কনফিডেন্সের সঙ্গে বলতেও পারছে না। কারণ, ভোরেও সে দেখেছে, মেঝের ওপর পড়ে আছে ফোন এবং তাতে আশ্চর্যজনকভাবে গুইসাপের ওয়ালপেপার। রুটি আর ভাজি একসঙ্গে নিয়ে রোল করে দিয়েছে আম্মু। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দেখে নিচ্ছে নাহিরাকে। আব্বুর ততক্ষণে নাশতা শেষ। ফোনে কথা বলতে বলতে হুড়মুড় করে বেরিয়ে যেতে যতক্ষণ, নাহিরার মনে পড়ে কালকের পার্সেলটার কথা। আব্বু বলে ডাকতে গিয়েও থমকেই যেতে হয় তাকে। আম্মু হাসে। বলে, তোর পার্সেলটা তো? ওইটা রাতেই বের করে রাখছে তোর আব্বু…!
‘কই রাখছে?’
‘কই যেন রাখল…দেখ তো!’
এরপর নাহিরা এরুম–ওরুম খোঁজে বেশ কিছুক্ষণ। কিন্তু সেই কিম্ভূত পার্সেলটা দেখতেই পাওয়া গেল না। আম্মু বলে, আরে কী মুশকিল! কত হইচই করে রাতেই বের করল তোর আব্বু…আচ্ছা, একটু পর ফোন দে…তারপর জেনে নে কই রাখছে! নাহিরার কেন যেন পুরো ব্যাপারটাই আর ভালো লাগে না। তার সঙ্গে গত রাতে যা ঘটেছে, তা কয়েকবার বলার চেষ্টাও সে করে আম্মুকে। কিন্তু ঠিক কী বলবে, কী বললে আম্মু হাসাহাসি না করে ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নেবে, তা বুঝে পায় না সে। শেষ পর্যন্ত আব্বুকেই ফোন দেয়—আব্বু, তুমি আমার পার্সেলটা বের করছ?
‘কোন পার্সেল?’
‘আব্বু, ওই যে সোফার নিচে…আম্মু বলল, তুমিই নাকি বের করছ রাতের বেলা…’
‘ও ওইটা! কী জঘন্য প্যাকিং! ওইটা তো আমি তোর বিছানায়…মানে তোর বালিশের নিচে রেখে এসেছিলাম…গত রাতেই!’
কোনো কারণ ছাড়াই ধক্ করে ওঠে নাহিরার বুক। কী জানি বলবে, কী জানি জানতে চাইবে ভেবেও কোনো কিছু বলা হয় না তার। আব্বু কিছুক্ষণ বলে যায় এটা–ওটা কথা, কিন্তু নাহিরা শোনে না। আজব একটা ভয় তাকে ঘিরে ধরে। বালিশের তলায় তাহলে ওই পার্সেল ছিল? যেটা সে রাতের বেলা মোবাইল ভেবে ধরেছিল? কিন্তু পার্সেলটাকে ওই রকম পিচ্ছিল শীতল বস্তু কেন মনে হবে? হাতে পড়তেই কেন তার গা গুলিয়ে উঠবে? ভয়ে হাত-পা কেন কাঁপতে থাকবে? কী আছে ওই পার্সেলের ভেতর? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, পার্সেলটা এখন তাহলে কোথায়? বালিশের নিচে তো নেই! কোথায় আছে সেটা? একা একা কোথাও চলে গেছে পার্সেলটা? পার্সেলটা কি তাহলে জীবন্ত কিছু? এমন কিছু, যা পিচ্ছিল এবং শীতল?
পার্সেলটা কি তাহলে গুইসাপ?
গুইসাপ!
মাথা খারাপ! কেউ কেন তাকে পার্সেল করে গুইসাপ পাঠাবে? তার চেয়ে বড় কথা, ওই রকম একটা গোল পার্সেলের ভেতর গুইসাপ থাকবেই–বা কীভাবে? তারও চেয়ে বড় কথা হলো, গুইসাপ ওর ভেতর বাঁচবেই–বা কীভাবে? নাহ্! নাহিরা আর ভাবতে পারে না। তার শরীর কাঁপতে থাকে। কাঁপতে কাঁপতেই কখন যেন সোফায় গা এলিয়ে পড়ে যায়।
৪
অনেক দূর থেকে কেউ যেন ডাকছে…নাহি…নাহি…এই নাহি…নাহিরা তাকায় চোখ মেলে। আতঙ্কিত মুখ ঝুঁকে আছে তার দিকে। দুইটা। আম্মু আর আব্বু…
আম্মু বলে, কী হয়েছেটা কী তোর? এইভাবে সোফায় শুয়ে আছিস কেন? আব্বু বলে, তোর আম্মু তো ভয়েই কাবু। আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে অস্থির! অফিসে পৌঁছেই আবার ফিরে এলাম। কী হয়েছে মা? নাহিরা কী বলবে, কিছুক্ষণ ভেবে পায় না। শেষ পর্যন্ত বলেই বসে, ওই পার্সেলটা আব্বু… ওইটা একটা গুইসাপ!
আব্বু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সবিস্ময়ে। তারপর হো হো করে হেসে ওঠে। বলে, পাগল নাকি? ওই বদখত জিনিসটা গুইসাপ হতে যাবে কেন? আমি তো খুলে দেখেছি। একটা ইয়ো ইয়ো ধরনের জিনিস। এই যে দেখ…
আব্বু চট করে নাহিরার রুমে যায়। ফিরেও আসে ঝটকায়—এই যে দেখ…
পার্সেলটা খোলা। আব্বুই খুলে রেখেছে আগে থেকে। ভেতরে গোল একটা ধাতব বস্তু। সেটার দুইটা চোখের মতো খুদে লাইট। একটা লাল, একটা সবুজ! দুটিই জ্বলছে। নাহিরা জিনিসটা হাতে নেয়। নাহ! রাতে যেমন হাতে লেগেছিল, পিচ্ছিল আর শীতল…এই ইয়ো ইয়ো টাইপের জিনিসটা তেমন নয় একদমই; বরং একটু গরম–গরম ভাব লাগে হাতে। আব্বু বলে, কে পাঠিয়েছে, এটা বের কর। আমার তো মনে হয় তোর পুরোনো কোনো বন্ধুই পাঠিয়েছে…যার সঙ্গে ছোটবেলায় ইয়ো ইয়ো খেলতি। বেচারা স্মৃতিকাতর হয়ে…আব্বুর কথা শেষ করতে দেয় না নাহিরা। বলে, আমি কোনো দিন ইয়ো ইয়ো খেলিনি আব্বু। খুবই বাজে একটা খেলা। এইটা আমি পছন্দই করতাম না!
আম্মু বলে, বিদেশ থেকে আসছে না…ফারজানা পাঠাইছে?
কয়টা বাজছে, অস্ট্রেলিয়ায় এখন কেমন সময়, সেসবের তোয়াক্কা একেবারেই না করে নাহিরা ভিডিও কল দেয় ফারজানাকে। ফারজানা তখন রাস্তায়। হাঁটছে। এটা–সেটা কথার মধ্যেই নাহিরা জানতে চায় ফারজানা কি তাকে কোনো পার্সেল পাঠিয়েছে? ফারজানা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে, তার মানে তুইও পেয়েছিস? রাফিয়াতও পাইছে… তিন দিন আগে সে-ও ফোন দিছিল!
‘কী পাইছে রাফিয়াত?’
‘তুই আর আমি যা পাইছি…সেইটাই! একটা ইয়ো ইয়ো! যেইটার দুইটা লাইট…’
‘এইটা কী জিনিস?’
‘জানি না। কিন্তু গতকাল আমি একটা টেক্সট পাইছি…সেইখানে লেখা আছে…এটা একটা গ্লিচটয়। কেউ যেন এটাকে অন না করে।’
‘কিন্তু আমার এইটা তো অন করাই!’
‘আমিও অন করছিলাম। তারপর ম্যালা ভেজাল হইছে…’
‘কী ভেজাল?’
ভিডিও কলের সিগন্যালে ঝামেলা শুরু হয়। কথা কেটে যেতে শুরু করে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ড্রপ করে কলটা। এরপর আর কোনোভাবেই কল দেওয়া যায় না ফারজানাকে। আব্বু কোনো কথা বলে না আর…নাহিরার হাত থেকে ইয়ো ইয়ো টাইপের জিনিসটা নিয়ে উঠে যায় ছাদে। তারপর সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুড়ে মারে একদিকে! অনেক পর ঝন করে একটা আওয়াজ শুনতে পায় কি পায় না আব্বু…
৫
গভীর রাত। ঘুমিয়ে আছে নাহিরা। সড়সড় করে একটা শব্দ হয় বারান্দায়। তারপর আর কোনো শব্দ নেই। অনেকক্ষণ। এরপর বারান্দার জানালার পর্দাটা দুলে ওঠে। রুমের হালকা আলোয় দেখা যায় জানালার গ্লাস সরিয়ে একটা অদ্ভুত মাথা বেরিয়ে আসে। এরপর ধীরে ধীরে পুরো শরীরটা। একটা গুইসাপ। অতিকায়। গুইসাপটা কিছুক্ষণ ঝুলে থাকে জানালায়। তারপর থ্যাপ করে পড়ে যায় মেঝেতে। পিচ্ছিল তার লেজ। লেজ কি, পুরো শরীরটাই কেমন অদ্ভুত চর্বির মতো পদার্থে ভরা। শুয়ে থাকা নাহিরার দিকে তাকিয়ে গুইটা জিব বের করে। শসসসসস ধরনের শব্দ হয়। গুইসাপটার দুই ভাগ হওয়া জিব রুমের আলোয় কেমন যেন ঝিলিক দিয়ে ওঠে।
এগিয়ে যায় গুইসাপটা। উঠে যায় নাহিরার বিছানায়। নাহিরা যেখানে শুয়ে আছে, ঠিক সেখানেই, তার মুখের সামনে সাপটা দাঁড়ায়। চোখ যেন জ্বলছে। একটা লাল একটা সবুজ। ঝুঁকে যায় সাপটা নাহিরার মুখের দিকে। কপালের ওপর গরম নিশ্বাস পড়তেই ধ্ক করে চোখ খোলে নাহিরা। মুখের সামনে অতিকায় গুইসাপটাকে দেখে সে চিৎকার করতে পারে না। প্রবল বিস্ময়ে বিস্ফোরিত চোখে শুধু সে তাকিয়ে থাকে।
পুনশ্চ: এ রকম সময়ে জাপানের এক অখ্যাত অনলাইনে একটি খবর প্রকাশিত হয়। যেখানে লেখা হয়, তাদের দেশের বিখ্যাত এক টয় কোম্পানি এক আজব টয় বানিয়েছে। যে খেলনাটা আসলে কাজ করে মানুষের ভয় নিয়ে। ছেলে-মেয়েরা যে বস্তুটাকে ভয় পায়, টয়টা তার মতোই হয়ে যায় এবং ছেলেমেয়েদের ভয় দেখিয়ে আনন্দ দেয়। কিন্তু বানানোর পর তারা খেয়াল করেছে, টয়টাতে রয়েছে গ্লিচ। ভয় দেখিয়ে টয়টা আনন্দ দেয় না, ভয় দূরও করে না; বরং সেই ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়ে ছেলেমেয়েদের টেনে নিয়ে যায় অন্য রকম দুনিয়ায়। সমস্যা বোঝার পরপরই প্রায় এক কোটি গ্লিচটয় আটকে রেখেছিল বিখ্যাত কোম্পানি। কিন্তু কিছুদিন আগে সেই কোম্পানিরই কোনো এক অসাধু লেবার পৃথিবীব্যাপী টয়টাকে ছড়িয়ে দিয়েছে।
অখ্যাত পত্রিকা হওয়ায় খবরটাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। কেউ খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েও না। সবাই ব্যস্ত পৃথিবীর যুদ্ধ ও শান্তির খবরে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারত, পৃথিবীর সমস্ত শিশু–কিশোরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এক ভয়াবহ গ্লিচ। যার পরিণতি কী, তা কেউ জানে না!