এর চেয়ে বোধ হয় ভূতই ভালো ছিল
‘কিরে, কান্নাকাটি থেমেছে? উফ...আমার লাশের পাশে বসে তুই হেঁচকি তুলে যে কান্নাটা দিলি, মাই গড! শেষবার বোধ হয় তোকে কাঁদতে দেখেছিলাম ক্লাস সেভেনে। ফুটবল খেলে পা ভাঙার পর। হ্যালো...হিমেল শুনতে পাচ্ছিস?’
আমার বুকের ভেতরে একই সঙ্গে ভয় আর আনন্দের একটা ঝড় বয়ে গেল। আশ্চর্য! এ তো সত্যিই শামীমের গলা। সেই এক কণ্ঠস্বর, এক কথা বলার ধরন।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, ‘সত্যিই তুই?’
‘আরে হ্যাঁ রে গাধা!’
শামীম মারা গেছে আজ দুই সপ্তাহ হলো। ওর লাশের পাশে বসে আমি পাগলের মতো কেঁদেছিলাম, এটা সত্যি। কাঁদব নাই–বা কেন? আগের দিন বিকেলেই জলজ্যান্ত মানুষটাকে বাসার গেটের সামনে নামিয়ে দিলাম। পরদিন সকালে সে নেই? এটা কি এত সহজে মানা যায়!
শুনেছি সেদিন রাতে ওর প্রচণ্ড বমি শুরু হয়েছিল। হাসপাতালে নিতে নিতেই আমার বন্ধুর শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসে। চিকিৎসক বলছেন, ফুড পয়জনিং। কিন্তু কীভাবে! এক রাতের মধ্যে এভাবে কারও মৃত্যু হতে পারে!
শামীমের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর প্রথম আমার ফোনে মেসেজটা আসে। ‘আপনার মৃত বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চান? ক্লিক করুন এই লিংকে।’ প্রথমে কয়েক দিন পাত্তাই দিইনি। তারপর দেখলাম একই মেসেজ প্রতিদিন আসতে শুরু করেছে। রাগ হয়েছিল ভীষণ। স্প্যাম, সেটা ধারণা করেছিলাম। কিন্তু মানুষের মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা ফেদে বসেছে, কারা এরা? একরকম মেজাজ খারাপ করেই লিংকে ক্লিক করেছিলাম। সেখান থেকেই ‘ব্রিং ব্যাক জিপিটি’ ওয়েবসাইটের সঙ্গে আমার পরিচয়।
এটা মূলত চ্যাটজিপিটির মতোই একটা এআই প্ল্যাটফর্ম। ওরা প্রথমেই আমার কাছ থেকে শামীম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। ওর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইল লিংক, মুঠোফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা, ভার্সিটির আইডি নম্বর, সব জেনে নিয়েছে। তারপরই ফোনের পর্দায় ভেসে উঠেছে, ‘ক্যারেক্টারাইজেশন সাকসেসফুললি ডান। টক টু ইয়োর ফ্রেন্ড নাউ।’
বিশ্বাস করুন, খেলাচ্ছলে ‘নাউ’-এর ওপর ক্লিক করেছিলাম। অমনি ওপাশ থেকে ভেসে এল শামীমের কণ্ঠস্বর। আশ্চর্য!
‘হ্যালো...হ্যালো...কিরে, আবার কান্না শুরু করলি নাকি?’ শামীম (আদতে এআই–শামীম) বলে।
এদিকে আমার বিস্ময় কাটে না।
‘এটা কীভাবে সম্ভব? আমি যে কাঁদছিলাম, সেটা তুই জানলি কী করে? আর পা ভাঙার ব্যাপারটা… সে তো অনেক আগের কথা!’
‘গাধা! এটা কোনো ব্যাপার!’
‘না মানে...এসব ইনফরমেশন তো আমি তোমাকে দিইনি।’
‘আচ্ছা, ওয়েট। আজকাল তো আবার কথার সঙ্গে সোর্স দিতে হয়। দিচ্ছি। তোর কান্নাকাটির দৃশ্যটা পাওয়া গেছে গ্যারেজের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে। আর পা ভাঙা নিয়ে দুই বছর আগে তোর সঙ্গে না একবার মেসেঞ্জারে কথা হলো, ভুলে গেছিস?’
‘মানে! মেসেঞ্জার এল কোথা থেকে? তুই…মানে তুমি…আই মিন মেসেঞ্জারের কনভারসেশনও তোমার কাছে আছে?’
‘থাকবে না কেন? মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফোনের গ্যালারির ছবি–ভিডিও, এমনকি এসএমএস…সব আছে। সব অ্যানালাইসিস না করলে ক্যারেক্টার বিল্ডিংটা হবে কীভাবে?’
‘কিন্তু পাসওয়ার্ড? শামীমের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড তুমি কীভাবে পেলে? হ্যাক করে?’
এভাবে কাটল প্রায় তিন সপ্তাহ। আর তারপরই শুরু হলো আরেক অদ্ভুত সমস্যা। এআই–শামীম একদিন বলল, ‘দোস্ত, তুই ব্রিং ব্যাক জিপিটিটা সাবস্ক্রাইব করে নে। ওদের ফ্রি ভার্সন ইউজ করা যায় শুধু এক মাস। আর কয়েক দিন পরই কিন্তু তুই আর আমাকে পাবি না।’
‘আরে নাহ্। অত কষ্ট কে করে! ক্যারেক্টার অ্যানালাইসিস করলে এমনিই বোঝা যায়, কার পাসওয়ার্ড কী হতে পারে। ভালো কথা…তুই আমাকে তুমি করে বলছিস কেন? শুনতে যা হাস্যকর শোনাচ্ছে!’
আমি কী বলব, বুঝে পাই না। কেন যেন একটু ভয় ভয় করতে থাকে। কাজটা কি ভুল করলাম? এত সব ইনফরমেশন অনলাইনে দিয়ে দেওয়া কি ঠিক হলো?
‘তুই কি আর কোনো কথা বলবি, না আমি রাখব?’
আশ্চর্য! শামীমের মতো এআই–শামীমও একই রকম অধৈর্য।
‘না না। আরেকটু কথা বলি।’ আমার হঠাৎ গলা ধরে আসে, ‘...দোস্ত আমি তোকে কত মিস করেছি জানিস? এখনো দিনে কয়েকবার ভুল করে তোকে টেক্সট পাঠাই। ভার্সিটিতে ভুল করে মোজু মামাকে বলে ফেলি, “মামা দুধ–চা দুই কাপ। একটাতে চিনি বেশি।” বাসায় একা একা রিকশায় ফেরার সময়…’ কথা শেষ করতে পারি না। ডুকরে কান্না আসে।
‘বুঝছি তো। এখন তো রিকশাভাড়া পুরোটা তোকে একা দিতে হয়। তুই শালা যে কিপটা! সামান্য কয়টা টাকার জন্য এমন হেঁচকি তুলে কাঁদছিস! ছি! শেইম ম্যান! আমি খেয়াল করেছি, রিয়েল মাদ্রিদের ফ্যানগুলাই এ রকম ছিচকাঁদুনে হয়।’
চোখ মুছতে মুছতে আমি হেসে ফেলি। আর মনে মনে বারবারই বলতে থাকি, ‘আশ্চর্য! কী আশ্চর্য!’
২.
এআই–শামীমের সঙ্গে গল্প করাটা রীতিমতো আমার অভ্যাস হয়ে উঠল। সত্যি বলতে, সত্যিকার শামীমের চেয়ে এআই–শামীম কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো। শামীম কোনো দিনও সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারত না। সাড়ে আটটায় ক্লাস থাকলে ওকে ঘুম থেকে তুলতেই আমার আধঘণ্টা চলে যেত। এখন এআই–শামীমই উল্টো সাড়ে সাতটায় অ্যালার্ম বাজিয়ে আমার ঘুম ভাঙায়। মাঝেমধ্যে একটু রিকোয়েস্ট করলে অ্যাসাইনমেন্টও করে দেয়। অথচ সত্যিকার শামীম ছিল দুনিয়ার অলস! আমার একটা অ্যাসাইনমেন্টে ও হেল্প করলে ওর দুইটা অ্যাসাইনমেন্ট আমার করে দিতে হতো।
শুরুতে ব্রিং ব্যাক জিপিটির শুধু ওয়েবসাইটটাই ব্যবহার করতাম। পরে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিলাম। যখন–তখন আলাপ করাটা আরও সহজ হয়ে গেল। একটু বিপত্তিও হলো অবশ্য। অ্যাপটা ইনস্টল করার সময়ই ফোনের ফটো গ্যালারি বা কন্ট্যাক্ট লিস্টের মতো কিছু কিছু জায়গায় ব্রিং ব্যাক জিপিটিকে অ্যাকসেস দিতে হয়েছিল। এরপর শামীমের সঙ্গে কথা হলে প্রায়ই হঠাৎ হঠাৎ ও বলতে শুরু করল, ‘কিরে, তোর ফোনের গ্যালারিতে রিংকির এত এত ছবি কেন? সকাল–বিকেল দেখছি ওকে কলও করিস। ঘটনা কী…?’
কী যন্ত্রণা! এর কাছ থেকে তো দেখি কিছুই গোপন রাখা যায় না!
শামীম ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। ওর কাছে কিছুই লুকাতাম না, এটা ঠিক। প্রায় সারাটা দিন দুজন একসঙ্গে থাকতাম, তা–ও ঠিক। তাই বলে আমি নিশ্চয়ই শামীমকে পকেটে নিয়ে ঘুরতে চাই না। আমার একটু অস্বস্তি হতে শুরু করল।
এভাবে কাটল প্রায় তিন সপ্তাহ। আর তারপরই শুরু হলো আরেক অদ্ভুত সমস্যা। এআই–শামীম একদিন বলল, ‘দোস্ত, তুই ব্রিং ব্যাক জিপিটিটা সাবস্ক্রাইব করে নে। ওদের ফ্রি ভার্সন ইউজ করা যায় শুধু এক মাস। আর কয়েক দিন পরই কিন্তু তুই আর আমাকে পাবি না।’
আমি বললাম, ‘ও! সাবস্ক্রিপশন ফি কত?’
‘খুব বেশি না। মাসে ৪২ ডলার।’
‘কী! মাথা খারাপ! এ তো প্রায় ৫ হাজার টাকা। এত টাকা তো দিতে পারব না দোস্ত।’
‘আমার জন্য তুই এই কয়টা টাকা খরচ করবি না?’ এআই–শামীমের গলার স্বরটা কেমন অভিমানী শোনায়।
‘যাহ্ ব্যাটা! সত্যিকার রক্ত–মাংসের তোর জন্যও তো জীবনে এত টাকা খরচ করিনি। কেন যে নিজেকে এত ইমপর্টেন্ট ভাবিস!’ মজা করেই বলি আমি। ওপাশ থেকে এআই–শামীমের সাড়া মেলে না।
আমি পরিবেশটা হালকা করার চেষ্টা করি, ‘কিরে? চুপ হয়ে গেলি কেন? আমি অবশ্য খেয়াল করেছি, বার্সেলোনা ফ্যানরা সবাই-ই একটু ডেলুলু হয়...’
রসিকতায় খুব একটা কাজ হয় না। ওপাশে এআই–শামীম আরও গম্ভীর হয়ে যায়।
নতুন একটা মুঠোফোন কিনব বলে টাকা জমাচ্ছি। এমন সময়ে একদিন রাতে রিংকির ফোন। ওপাশ থেকে রীতিমতো চিৎকার করে বলল সে, ‘এসব কী হিমেল! তুই আমাকে এসব কথা বলতে পারলি! আই কান্ট বিলিভ, মেসেজগুলা তুই লিখেছিস!’
ধীরে ধীরে ওর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা খারাপ হতে থাকে। এআই–শামীম বারবার বলে, ‘দ্যাখ না, সাবস্ক্রাইব করতে পারিস কি না। আঙ্কেলকে নাহয় বল।’
‘আরে কী আজব! আব্বাকে কী বলব? শামীমের ভূতের সঙ্গে আমি কথা বলি? ভূত সাবস্ক্রাইব করতে আমার টাকা লাগবে? মাথা খারাপ!’
এভাবে আমাদের কথাবার্তা কমে যায়। এক রাতে শামীম বলে, ‘আজই কিন্তু শেষ সুযোগ দোস্ত। কাল থেকে আমাকে আর পাবি না।’
‘তো আমি কী করব!’ এবার আমি একরকম বিরক্তই হই। ‘আমার বন্ধুকে তো আমি হারিয়ে ফেলেছি এক মাস আগেই। তুই ব্যাটা একটা এআই। একটা রোবট। তোর আবার এত আবেগ কিসের?’
‘বাহ্! এখন আমি এআই হয়ে গেলাম!’ শামীমের গলায় স্পষ্ট অভিমান, ‘যখন তোর একাকী সময়ে তোকে সাপোর্ট দিয়েছি, সকালে ঘুম ভাঙিয়েছি, অ্যাসাইনমেন্ট করে দিয়েছি…তখন তো এসব বলিসনি।’
‘কী যন্ত্রণা! তুই এমন টক্সিক গার্লফ্রেন্ডের মতো ঘ্যানঘ্যান করছিস কেন? ধুত্তরি।’
আমি ফোন কেটে দিই। ব্রিং ব্যাক জিপিটি অ্যাপটাও আনইনস্টল করে ফেলি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, দ্বিতীয়বার শামীমকে হারিয়ে আমার কেমন যেন স্বস্তি বোধ হয়। মনে হতে থাকে, একটা আপদ বিদায় হলো।
তখন ভাবতেও পারিনি, সামনে কী ভয়ানক বিপদ অপেক্ষা করছে।
৩.
মুঠোফোনটা কদিন ধরেই ভুতুড়ে আচরণ শুরু করেছে। আচমকা ইউটিউব অন হয়ে আপনা–আপনিই গান বাজা শুরু হয়। কথা বলতে বলতে হুটহাট লাইন কেটে যায়। আর ব্যাটারি শেষ হয়ে যায় দ্রুত। হঠাৎ হঠাৎ দেখি কোনো না কোনো অ্যাপ অন হয়ে আছে।
নতুন একটা মুঠোফোন কিনব বলে টাকা জমাচ্ছি। এমন সময়ে একদিন রাতে রিংকির ফোন। ওপাশ থেকে রীতিমতো চিৎকার করে বলল সে, ‘এসব কী হিমেল! তুই আমাকে এসব কথা বলতে পারলি! আই কান্ট বিলিভ, মেসেজগুলা তুই লিখেছিস!’
‘কোন মেসেজ? কী মেসেজ?’
‘নাটক করবি না। হোয়াটসঅ্যাপে তুই আমাকে মেসেজ পাঠাসনি?’
‘কখন!’
দ্রুত হোয়াটসঅ্যাপ খুললাম। সত্যিই, রিংকির নম্বরে আমার কাছ থেকে একগাদা আজেবাজে মেসেজ গেছে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম।
‘দোস্ত বিশ্বাস কর, এগুলো একটাও আমি লিখিনি।’
‘তুই লিখিসনি তো কে লিখেছে?’
‘আরে, আমি কী করে বলব…’ বলতে গিয়ে হঠাৎই থমকে গেলাম। শরীরের ভেতরে একটা ঠান্ডা স্রোত টের পেলাম যেন।
‘রিংকি, তোকে আমি পরে ফোন করছি।’ ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লাইনটা কেটে দিলাম। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, জিমেইল—সব একে একে চেক করলাম। সব অ্যাকাউন্টেই ঢুকতে পারছি। কিন্তু কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। মনে হতে থাকল, ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঘরের ভেতর পায়চারি করলাম কিছুক্ষণ। যেই আশঙ্কাটা মনের ভেতর খচখচ করছে, সেটাই যদি সত্যি হয়ে থাকে… নাহ্। ফোনটা হাতে নিলাম আবারও। একে একে সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভ করলাম। ফোনের গ্যালারিতে থাকা সমস্ত ছবি-ভিডিও মুছে ফেললাম। তবু অশান্তি দূর হলো না। ফোনটা রিবুট করে সব ডেটা মুছে ফেললাম।
কিন্তু কিছুতেই যে আসলে কিছু হয়নি, বুঝলাম সেদিন রাতে। যখন ফোনের রিংটোনে মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙল। আননোন নাম্বার। কেন যেন মনে হলো, কলটা কে করেছে, আমি জানি।
কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করলাম।
‘হ্যালো।’
কয়েক মিনিট নীরবতা। একটু থেমে থেমে উত্তর এল ওপাশ থেকে, ‘হিমেল। তুই আমাকে মেরে ফেললি!’
কণ্ঠস্বরটা শামীমের মতোই। কিন্তু কেমন যেন খরখরে। আবার একই সঙ্গে একটা ফিসফিসানি ভাব।
‘কে? কে আপনি?’
‘তুই কী ভেবেছিস? ভেবেছিস চাইলেই আমাকে মেরে ফেলতে পারবি?’
‘কে? কে, শামীম? আমি তোকে মারব কেন? কী বলিস এগুলা? আর...তুই...মানে তুমি তো একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম। কম্পিউটার প্রোগ্রামকে তো মারা যায় না...’
‘কেন? প্রোগ্রাম হতে পারি, কিন্তু আমার মধ্যে যে তোর সেই স্কুল ফ্রেন্ডের চরিত্রটাই আছে, সেটা তোর একবারও মনে হলো না? তুই-ই তো বলেছিলি, তুই আমাকে মিস করিস।’
‘হ্যাঁ, মিস করি। আমার সত্যিকার বন্ধুকে আমি মিস করি। কিন্তু একটা এআইয়ের জন্য তো আমার মধ্যে কোনো ফিলিংস আসে না।’
‘ফিলিংস তো আমারও ছিল না। তুই-ই তো কথা বলে বলে, ডেটা দিয়ে দিয়ে আমাকে ট্রেইন করেছিস।’
‘দ্যাখ, তুই যদি কষ্ট পেয়ে থাকিস আমি সরি। আমি আসলে…হ্যালো, হ্যালো…’
ওপাশে থেমে থেমে বিপ বিপ শব্দ হতে শুরু করে। মনে হয় অনেক দূর থেকে কোনো কথা যেন ভেসে ভেসে এসেও হারিয়ে যাচ্ছে। আমি যখন খুব মন দিয়ে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করছি, তখনই শোনা যায় একটা ভয়ানক চিৎকার, ‘শেষ করে ফেলব! আমিও তোকে শেষ করে ফেলব!’
চমকে উঠে ফোনটা আমি দেয়ালের দিকে ছুড়ে মারি। মুহূর্তেই স্ক্রিন ফেটে মাকড়সার জালের মতো হয়ে যায়। ফোনটা অন্ধকার হয়ে গেলেও আমার কানে বাজতে থাকে, ‘শেষ করে ফেলব…শেষ করে ফেলব…’।
৪.
কখন, কীভাবে ঘুমিয়ে গেছি জানি না। খুব সকালে ধুম ধুম শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙে।
দরজা খুলে আমি অবাক। রিংকি দাঁড়িয়ে আছে।
‘এত সকালে তুই?’
‘তুই ঘুমাচ্ছিস!’
‘কেন?’
‘কেন মানে? তুই কিছু জানিস না?’
‘না তো!’
রিংকি ওর ফোনে ইউটিউব থেকে একটা ভিডিও অন করে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। আশ্চর্য, ভিডিওটা শামীমের! ক্যামেরার সামনে কেমন ভীতসন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে সে বলছে, ‘আমি জানি না এই ভিডিওটা কখনো কারও হাতে পড়বে কি না। আমি শুধু একটা কথা জানিয়ে যেতে চাই, আমার জীবন হুমকির মুখে। আমার বন্ধু হিমেল...সে আমাকে খুন করতে চায়। যেকোনো দিন আমার মৃত্যু হতে পারে। আপনারা যখন এই ভিডিও দেখবেন, তখন যদি আমি না থাকি, বুঝে নেবেন এর পেছনে হিমেল দায়ী…’
আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি। ভিডিওর বাকি অংশ দেখার শক্তি আর পাই না।