টি-রেক্স রহস্য (চতুর্থ পর্ব)

অলংকরণ: সাদাত

চার

টিরোনের উদ্দেশে দৌড়ে গেল তিন বন্ধু।

‘কী হয়েছে?’ প্রশ্ন করল কিশোর।

‘আমাদের টাকা চুরি গেছে!’ বলল রয়।

‘খাইছে, যে টাকা এইমাত্র ওঠালেন?’ মুসার প্রশ্ন।

মাথা নাড়ল টনি।

‘না, সেটা আছে।’ রাবার ব্যান্ডে মোড়া মোটা দুটো টাকার তাড়া দেখাল ও, ‘আগেকার টাকার সঙ্গে এটা রাখতে গিয়ে দেখি টাকা নেই!’

টিরোনের পেটের ভেতর মেঝের দিকে আঙুল তাক করল কিশোর। টেবিল, চেয়ার আর কার্পেট সরানো হয়েছে। টেবিল-চেয়ার যেখানে ছিল, মেঝের সেখানটায় এখন চৌকো একটা গর্ত। কবজা লাগানো একটা দরজা খোলা, বেরিয়ে পড়েছে একটা কম্পার্টমেন্ট। ফাঁকা।

‘টাকাগুলো এখানেই লুকিয়ে রাখতাম,’ বলল জন, ‘ডাফেল ব্যাগে ভরে। মন্টানা থেকে আসার পর থেকে এখানেই ছিল।’

‘কত টাকা ছিল?’ প্রশ্ন করল মুসা।

টনির মুখের চেহারা ফ্যাকাশে।

‘এত দিন যা জমিয়েছিলাম, সব,’ বলতে গিয়ে গলা কেঁপে গেল ওর, ‘প্রায় পাঁচ হাজার ডলার।’

ছয় জোড়া চোখ তাকিয়ে রইল ফাঁকা কম্পার্টমেন্টটার দিকে।

‘চোর এল কখন, বুঝতে পারছি না,’ বলল রয়।

মুহূর্তের জন্য চোখ মুদল টনি।

‘আমরা ভেবেছিলাম, ডাইনোসরের ভেতরই টাকাগুলো নিরাপদ,’ বলল টনি, ‘আমরা ছাড়া আর কেউ গোপন কম্পার্টমেন্টটার কথা জানত না। টাকাগুলো মন্টানায় আমার ব্যাংকে রাখার ইচ্ছা ছিল।’

‘ডাফেল ব্যাগটা গতকাল ওখানে রেখেছিলাম,’ বলল ও, ‘টিরোনকে সেটআপ করার পর।’

‘তার মানে টাকাটা চুরি গেছে কাল বিকেল আর আজ সকালের মধ্যে,’ জানাল জন, ‘ঘটনাটা কাল রাতে ঘটেনি, কারণ, আমি এখানেই ঘুমিয়ে ছিলাম।’

‘আমি অফিসার ফলেটকে ডেকে আনছি,’ বলল রবিন, ‘উনি এখানকার পুলিশ চিফ।’

‘উনি আর এখন কী করবেন?’ প্রশ্ন করল টনি, ‘টাকাটা তো অনেক আগেই চুরি হয়ে গেছে।’

‘অফিসার ফলেট অনেক বদমাশকে ধরেছেন,’ জানাল কিশোর।

মুসা মাটির দিকে তাকাল, রোদের তাপে শুকিয়ে গেছে।

‘উনি এখান থেকে কিছু ক্লু পেতে পারেন,’ বলল ও।

‘পুলিশ ডাকাই উচিত, টনি,’ বলল জন, ‘টাকাটা ফেরত পাওয়ার জন্য আমাদের সব রকম চেষ্টাই করতে হবে।’

‘আমি এখুনি আসছি!’ বলে দৌড় দিল রবিন।

‘এই টাকায় কেউ হাত দিতে পারবে না,’ বলল টনি। শার্ট খুলে নোটগুলো ভেতরে ঠেসে দিল।

মুসা কিশোরের বাহুতে চিমটি কাটল। ও মুখ তুলে চাইতেই মুসা ভ্রু দেখিয়ে ওর সঙ্গে যেতে বলল।

মুসাকে অনুসরণ করল কিশোর।

‘বলতে খারাপ লাগছে,’ বলল মুসা, ‘কিন্তু চুরিটা এই তিনজনের মধ্যে একজন করেছে।’ চিবুক দেখাল টনি, জন আর রয়ের উদ্দেশে।

‘ওরা নিজেদের টাকা চুরি করতে যাবে কেন?’ প্রশ্ন করল কিশোর, ‘টনি আর জন সত্যি সত্যি জাদুঘরটা বানাতে চায়। আর রয় ওখানে কাজ করবে।’

‘কিন্তু আর কার কাছে চাবি আছে, কিংবা টিরোনের ভেতর যে গোপন জায়গা আছে, সেটার কথা ওরা ছাড়া আর কে জানে?’ জোর দিয়ে বলল মুসা।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ছোট্ট একটা নুড়িতে লাথি মারল।

‘আমি বিশ্বাস করি না, টনি এমন কাজ করতে পারে,’ বলল সে।

এমন সময় রবিন আর অফিসার ফলেটকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখা গেল। ডাইনোসরটার কাছে ফিরে গেল কিশোর আর মুসা।

অফিসার ফলেট নিজের পরিচয় দিয়ে পকেট থেকে নোটবুক আর কলম বের করলেন।

‘রবিনের কাছে সব শুনলাম,’ বললেন তিনি। তিন যুবকের দিকে তাকালেন, ‘আপনাদের নাম জানতে পারি?’

সবার নাম টুকে নিলেন অফিসার ফলেট।

‘টাকাটা শেষবার কোথায় দেখেছেন বলতে পারবেন?’ প্রশ্ন করলেন।

দরজা ভেদ করে ফাঁকা কম্পার্টমেন্টটা দেখাল জন।

‘ওখানে ছিল, শুধু যখন আমরা রাস্তায় থাকতাম তখন ট্রাকে আমাদের সঙ্গে রাখতাম।’

‘গতকাল বিকেলে ডাফেলটা কম্পার্টমেন্টের ভেতর রেখেছি আমি,’ বলল টনি, ‘তখনই শেষবার দেখেছি টাকাগুলো।’

‘টাকাগুলো ব্যাংকে রাখলে ভালো হতো না?’ অফিসার ফলেট প্রশ্ন করলেন।

‘আমরা ভেবেছিলাম, ডাইনোসরের ভেতরই টাকাগুলো নিরাপদ,’ বলল টনি, ‘আমরা ছাড়া আর কেউ গোপন কম্পার্টমেন্টটার কথা জানত না। টাকাগুলো মন্টানায় আমার ব্যাংকে রাখার ইচ্ছা ছিল।’

‘কম্পার্টমেন্টটা কি লক করা ছিল?’ পুলিশ চিফের প্রশ্ন। নোটবইতে টুকছেন।

মাথা নাড়ল টনি।

‘না, কিন্তু আমরা সব সময় বাইরের দরজাটা বন্ধ রাখি।’

কি–হোলটা পরখ করলেন অফিসার ফলেট। রাবারের ওয়েজটা সরিয়ে কবজার ওপর দরজাটাকে আগু-পিছু করলেন।

‘এই দরজার চাবি কার কাছে আছে?’ জিজ্ঞেস করলেন।

‘আমার কাছে একটা আছে,’ জানাল জন। চাবির রিং ট্যাপ করল।

নিজের চাবিগুলো তুলে ধরল টনি।

‘আর আমার কাছে আছে অন্যটা,’ বলল ও।

প্যাডে নোট নিলেন অফিসার ফলেট।

‘তো মি. টনি কাল বিকেলে কম্পার্টমেন্টে টাকাগুলো রেখেছিলেন,’ বললেন তিনি, ‘তারপর আজ সকালে, শোর পর মি. জন টাকা খুঁজতে গিয়ে দেখেন টাকা নেই। ঠিক?’

‘না, ঠিক তা নয়,’ জানাল জন, ‘শোটা আমি করেছি, কিন্তু টাকা নেই, সেটা প্রথম জেনেছে টনি।’

‘টাকাগুলো কাল রাতে চুরি হয়নি তো?’ অফিসার প্রশ্ন করলেন, ‘আপনারা রাতে কোথায় ঘুমিয়েছিলেন?’

‘রয় আর আমি হোটেলে ঘুমিয়েছি,’ জানাল টনি, ‘টাকাটা ছিল কম্পার্টমেন্টে। সব সময় তা–ই থাকে। জন বাইরে ঘুমায়। টিরোনকে পাহারা দেয়।’

অফিসার ফলেটকে বিভ্রান্ত দেখাল।

‘টিরোন কে?’

‘আমাদের ডাইনোসরটার নাম টিরোন,’ ব্যাখ্যা করল রয়।

অফিসার ফলেট জনের দিকে তাকালেন।

‘আপনি রাতে এখানে ঘুমিয়েছেন? বৃষ্টির মধ্যে?’

মৃদু হাসল জন।

‘না, বৃষ্টি শুরু হলে স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে ট্রাকের ভেতর ঢুকে পড়ি।’

অফিসার ফলেট প্যাডে আরও কী সব নোট নিয়ে টনির দিকে ঘুরে তাকালেন।

‘আপনি যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন কি কেউ চাবিটা চুরি করতে পারে?’

মাথা নাড়ল টনি।

‘দরজা বন্ধ ছিল।’

জনের দিকে তাকালেন অফিসার ফলেট।

‘আপনার চাবি, মি. জন? ওটা কোথায় ছিল, আপনি যখন এখানে ঘুমাচ্ছিলেন?’

চাবির গোছাটা তুলে ধরল জন।

‘স্লিপিং ব্যাগের ভেতর আমার বেল্টে ক্লিপ করা ছিল,’ জানাল।

অফিসার ফলেট দরজাটা ধাক্কা মেরে খুলে কম্পিউটারের দিকে তাকালেন।

‘টিরোনকে অপারেট করে কে?’ জিজ্ঞেস করলেন।

‘আমি,’ জানাল জন, ‘আর আমার কম্পিউটার।’

‘তো আপনাদের জানামতে, আজ সকালে ডাফেল ব্যাগটা মেঝের নিচে লুকানো ছিল,’ অফিসার ফলেট মত প্রকাশ করলেন।

‘হ্যাঁ,’ জানাল জন।

টিরোনের ভেতর উঁকি দিলেন অফিসার ফলেট।

‘মি. জন, আপনি লুকানো টাকার ঠিক ওপরে কম্পিউটার নিয়ে বসে ছিলেন, তা–ই না?’

মাথা ঝাঁকাল জন।

‘তবে আমার ধারণা, ততক্ষণে টাকা চুরি হয়ে গেছে,’ বলল ও, ‘শোর পর, টনি যখন টেবিল সরিয়ে কার্পেট টানে, ডাফেল ব্যাগটা তখন হাওয়া।’

অফিসার ফলেট ওয়েজটা যথাস্থানে রাখলেন যাতে দরজাটা ঈষৎ খোলা থাকে। এবার তিন যুবকের দিকে তাকালেন তিনি।

‘আপনারা আমার অফিসে চলুন। আপনারা গতকাল এখানে আসার পর থেকে যা যা ঘটেছে, সব আমাকে লিখে দেবেন। ছোটখাটো বিষয়ও বাদ দেবেন না, যতই গুরুত্বহীন মনে হোক না কেন।’

‘এতে কতক্ষণ লাগবে?’ প্রশ্ন করল রয়, ‘আমাদের আরও অনেক স্কুলে শো করতে যেতে হবে কিনা।’

‘তাহলে আর দেরি না করে আসুন আমার সঙ্গে,’ বললেন অফিসার ফলেট।

চলবে...

আরও পড়ুন