এসব খাবার খেলে শরীর থেকে সুগন্ধ বের হয়
আমাদের সবার শরীরে একটা আলাদা গন্ধ আছে। শরীরের এই বিশেষ গন্ধ অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। যেমন, জিন, হরমোন, বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, এমনকি মনের ওপরও। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, গন্ধে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের খাদ্যাভ্যাস। আমরা কী খাই, সেটাই ঠিক করে দেয় আমাদের শরীর থেকে কতটা আকর্ষণীয় গন্ধ ছড়াবে।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব স্টারলিংয়ের অধ্যাপক ক্রেইগ রবার্টস বলেছেন, ‘মানুষের শরীরের গন্ধ অনেক কিছুর ফল। তবে খাবার এমন এক বিষয়, যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’ সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, খাবার শুধু আমাদের শ্বাস বা ঘামের গন্ধই বদলায় না, আমাদের আকর্ষণীয়তাকে প্রভাবিত করে। কী খেলে আমাদের শরীর থেকে আকর্ষণীয় গন্ধ বের হবে, তাই নিয়ে আজকের লেখা।
ফল আর সবজি থেকে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ
অস্ট্রেলিয়ায় করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি ফল ও সবজি খান, তাঁদের শরীর থেকে বের হয় মিষ্টি ফুলের মতো ঘ্রাণ। গবেষকরা দেখেছেন, পুরুষদের ত্বকে ক্যারোটিনয়েড নামের একধরনের রঞ্জক জমে, যা থাকে গাজর, টমেটো, কুমড়া, পেঁপের মতো খাবারে। এতে ত্বক সামান্য হলদে হয়, আর ত্বকের ঘ্রাণ হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয় ও সতেজ।
অন্যদিকে, যারা শুধু চাল, রুটি, আলু ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেটজাত খাবার খান, তাঁদের শরীরের গন্ধ অতটা আকর্ষণীয় হয় না। গবেষকেরা বলছেন, কার্বোহাইড্রেট-নির্ভর খাদ্য শরীরে এমন কিছু যৌগ তৈরি করে, যা ঘামের সঙ্গে বের হয়ে কম আকর্ষণীয় গন্ধ ছড়ায়।
রসুনের প্রভাব
রসুনকে সবাই খুব একটা পছন্দ করে না। নেতবাচক অর্থে রসুনকে ব্যবহার করা হয়। বলা হয়, 'সব রসুনের গোড়া একখানে'। তবে খাবারের স্বাদ বাড়াতে রসুনের ভূমিকা অনেক। অবশ্য রসুনের তীব্র গন্ধ আছে। সেই গন্ধ আবার অনেকেরই অপছন্দ। তবে রসুন খেলে মানুষের শরীর থেকে আকর্ষণীয় ঘ্রাণ ছড়ায়। চেক প্রজাতন্ত্রের চার্লস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ইয়ান হাভলিচেকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি রসুন খেয়েছেন, তাঁদের ঘামের গন্ধ অন্যদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগ শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, যা ঘ্রাণকেও প্রভাবিত করে। ফলে শরীর থেকে বের হয় এক ধরনের সতেজ, স্বাস্থ্যবান মানুষের গন্ধ।
সবজি খেলে আছে উপকার
শীতকাল তো চলেই এল। অনেকেই লেপ নামিয়েছে, হুডি পরা শুরু করছে। শীতের পোষাক যেমন মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়, তেমনি শীতের সবজিও বিখ্যাত। এখন ধীরে ধীরে বাজারে আসছে ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগমের মতো সবজি। এসব সবজিতে থাকে প্রচুর সালফার যৌগ, যা শরীরের ঘ্রাণে বেশ ভূমিকা রাখে। এগুলো খেলে ঘাম বা নিঃশ্বাসে কিছুটা তীব্র গন্ধ তৈরি হয়। তবে তা সব সময়ই অস্বস্তিকর হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এসব যৌগ শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষা বাড়িয়ে ঘ্রাণকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে।
মাংস বনাম নিরামিষ
২০০৬ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দুই সপ্তাহ মাংস খাওয়া বন্ধ রেখেছিলেন, তাঁদের ঘামের গন্ধ অন্যদের কাছে বেশি মনোরম লেগেছে। এর মানে, মাংস-মুক্ত খাদ্যাভ্যাস শরীরের ঘ্রাণকে আরও হালকা ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাংস ভেঙে শরীরে তৈরি হয় কিছু অ্যামাইন যৌগ ও চর্বিজাত পদার্থ, যা ঘামের সঙ্গে বের হয়ে গন্ধ বাড়ায়। তবে মাংস সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে পরিমিত খাওয়া ভালো। কারণ সামান্য পরিমাণ মাংস, ডিম ঘ্রাণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
চা বা কফি
অনেকেরই চা বা কফি ছাড়া দিন শুরুই হয় না। তাদের জন্য সুখবর দেওয়া যাচ্ছে না। কফি ও চা শরীরের ঘামগ্রন্থি সক্রিয় করে দেয়। আর ঘামের সঙ্গে গন্ধও বেড়ে যায়।
তাই আমরা প্রতিদিন যা খাই, তা কেবল শরীর গঠনের জন্য নয়, আমাদের ঘ্রাণকেও বদলে দেয়।