ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কী হচ্ছে
‘স্যাকড ইন দ্য মর্নিং। ইউ আর গেটিং স্যাকড ইন দ্য মর্নিং’—এমন স্লোগান মানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের স্ট্যান্ড থেকে। প্রতিপক্ষের কোচকে পরদিন সকালে বরখাস্ত হতে দেখার আনন্দ যেন ম্যাচ জয়ের থেকেও অনেক গুণ বেশি; কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে এই স্লোগান এসেছে গ্রিমসবি টাউন সমর্থকদের কাছ থেকে। প্রশ্ন করতে পারো, গ্রিমসবি টাউন আবার কারা?
গ্রিমসবি টাউন ইংলিশ ফুটবল লিগের চতুর্থ স্তরের একটি দল। যারা কারাবাও কাপের চতুর্থ রাউন্ডে হারিয়েছে ২০ বার লিগ জেতা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। রূপকথা বললেও যেন একে বর্ণনা করা কম হয়ে যাবে। যাদের পুরো দলের মূল্য ইউনাইটেড অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেসের তিন মাসের বেতনের সমান। সেই পুঁচকে দলটা কিনা হারিয়ে দিয়েছে ইংলিশ ফুটবলের মহারথীদের?
গ্রিমসবি টাউনের কথা দিয়েই শুরু করা যাক, ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসে তাদের নামটা জড়িয়ে আছে নিচু স্তরেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কখনো প্রথম স্তরে খেলা হয়নি তাদের। তাদের মাঠে আটে সর্বসাকল্যে ১০ হাজার মানুষ। গত বুধবার ১০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন নিজেদের মাঠে ইউনাইটেডকে বরণ করতে। খুব যে একটা আশা করে এসেছিলেন, তা–ও নয়। ইউরোপীয় ফুটবল না থাকায় ইউনাইটেডকে খেলতে হচ্ছে কারাবাও কাপের চতুর্থ রাউন্ড। বড় দলের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে লক্ষ্যই থাকে—যত কমে ম্যাচ শেষ করা যায়; কিন্তু দলটা তো ইউনাইটেড। তাই বোধহয় ম্যাচে অন্যকিছু করার প্রত্যয়ে নেমেছিল গ্রিমসবি টাউন। নইলে কি আর প্রথমার্ধেই এগিয়ে যায় ২-০ গোলে?
ইউনাইটেডের মান রাখতে এগিয়ে এসেছিলেন ব্রায়ান এমবিউমো আর হ্যারি ম্যাগুইয়ার। শেষ মুহূর্তে তাঁদের দুজনের গোলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানে দেখা মেলে আরেক বিরল দৃশ্যের। দুই দল মিলিয়ে পেনাল্টি হয়েছে মোট ২৬টি! দুই দলের খেলোয়াড়েরা প্রত্যেকে তো পেনাল্টি নিয়েছেনই, সঙ্গে দুজন খেলোয়াড় নিয়েছেন দুইবার। ইউনাইটেডের কপাল পুড়েছে ১৩ নম্বর শটে গিয়ে। ২-২ গোলে ড্রয়ের পর, টাইব্রেকারে ১২-১১ ব্যবধানে জিতে উল্লাসে মেতেছে গ্রিমসবি টাউন। পুরো শহর যেন মাঠে নেমেছিল উদ্যাপন করতে। আর তার মধে৵ লজ্জায় মুখ লুকিয়েছেন কোচ রুবেন আমোরিম, সঙ্গী হয়েছেন ইউনাইটেডের নতুন তিন সাইনিং।
কারাবাও কাপের লজ্জাজনক পারফরম্যান্সের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তিন নতুন সাইনিংয়ের। একপ্রকার কাড়াকাড়ি করেই তিন স্ট্রাইকারকে দলে ভিড়িয়েছে ইউনাইটেড। ধরেই নিয়েছিল, এদের নিয়ে গোলের অভাব হবে না তাদের। অথচ ম্যাচে এক ব্রায়ান এমবিউমো ছাড়া কেউ জালের দেখাই পাননি; বরং হাস্যকর দুই মিস করে দলকে উল্টো বিপদে ফেলেছেন ম্যাথিয়াস কুনহা ও বেনজামিন সেসকো। টাইব্রেকারে ইউনাইটেডের প্রথম মিস করা শটটাও ছিল ম্যাথিয়াস কুনহার। নিজেকে স্ট্রাইকার দাবি করা বেনহামিন সেসকো নিয়েছেন দশম শট! গোলরক্ষকের আগে শেষ খেলোয়াড় হিসেবে। আর ম্যাচে গোল করা ব্রায়ান এমবিউমো? ১৩ নম্বর শট ফেরত এসেছে গোলবারে লেগে। তাঁর শটই নিশ্চিত করেছে গ্রিমসবি টাউনের জয়।
মৌসুমের শুরু থেকেই হাবুডুবু খাচ্ছে ইউনাইটেড। প্রথম দুই ম্যাচে এসেছে মাত্র ১ পয়েন্ট। এত এত স্ট্রাইকার কিনেও গোলমুখে ব্যর্থ তারা। প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের প্রমাণ করা দুই স্ট্রাইকার খেই হারিয়েছেন ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে; কিন্তু কারাবাও কাপের হারের পেছনে কোচ রুবেন আমোরিমকে যে দোষ দেওয়া যায় তা–ও না। কারণ, এ ধরনের ম্যাচে কোচের ট্যাক্টিকসের দরকারই পড়ে না। দুই দলের পার্থক্যটা এতই বড় থাকে যে বেঞ্চের খেলোয়াড়েরাই যথেষ্ট দলকে জয় এনে দিতে। কিন্তু ইউনাইটেড সেটাই পারেনি। দলের মূল গোলরক্ষক গোলবারের নিচে দাঁড়িয়ে হজম করেছেন ১২টি পেনাল্টি শট। দুটি শট হাতে লাগিয়েও থামাতে পারেননি। এতটাই হযবরল ছিল ইউনাইটেডের অবস্থা যে ৬০ মিনিটে আমোরিমকে দেখা গেছে ট্যাক্টিকস বোর্ড নিয়ে খুঁটিনাটি করতে। চোখেমুখে তাকালে মনে হচ্ছিল, এই আরেকটু হলেই যেন কেঁদে দেবেন। এর পরই এসেছে দুই গোল!
পর্তুগিজ কোচ অবশ্য সব দায় নিজের ওপরই নিয়েছেন; কিন্তু কোচ ও খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সমর্থক, সবাই জানেন এই ক্লাবে যাঁরাই আসেন, তাঁরাই যেন কীভাবে হারিয়ে যান। যে আমোরিম যোগ দিয়েছেন টানা ১১ ম্যাচ জিতে, সেই আমোরিম এখন খেই হারিয়ে ঘুরছেন হারের বৃত্তে। স্ট্রাইকাররা খুঁজে পাচ্ছেন না জাল, গোলকিপাররা ধরতে পারছেন না বল। হয়তো নতুন খেলোয়াড় আসবে, নতুন কোচ এসে আশার বাণী শোনাবেন। হয়তো দু–একটা জয়ও আসবে; কিন্তু এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নামক গোলকধাঁধার সমাধান কোথায়, তা হয়তো জানা নেই কারোর।