টটেনহামকে ‘ধোঁকা’ দিয়ে আর্সেনালে এজে

লিডস ইউনাইটেডের মুখোমুখি আর্সেনাল। এমিরেটস স্টেডিয়ামের দর্শক থেকে শুরু করে টিভির পর্দার সামনে সবাই ম্যাচ শুরুর অপেক্ষায়। এর মধ্যেই মাঠে ফুটল বাজি—এমিরেটস স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এলেন ১০ নম্বর জার্সি পরিহিত এক ভদ্রলোক। নাম তাঁর এবেরেচি এজে। দুই দিন আগেও ছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেসে। ক্লাব ইতিহাসের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের সাক্ষী হয়েছেন। আর এখন আর্সেনাল শিবিরে। না, চমকটা এখানে নয়, চমকটা দলের নামে। কারণ, এক মাস ধরে এজের ভবিষ্যৎ দলের নাম ছিল টটেনহাম হটস্পার্স!

ক্রিস্টাল প্যালেস, আর্সেনাল আর টটেনহাম—এক শহরেই তাদের বসবাস। লন্ডন শহরে গাড়ি ধরে ঘুরলে তিনটি ক্লাব দেখতে দুই ঘণ্টার বেশি লাগবে না। শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চলে যাওয়া যাবে সহজে। ক্লাবগুলোর দূরত্ব যত কম, প্রতিদ্বন্দ্বিতা তত বেশি। সাফল্যের দিক দিয়ে টটেনহাম আর আর্সেনাল যতটা উঁচুতে, ক্রিস্টাল প্যালেস ততটা এগোতে পারেনি। তাদের ইতিহাসের প্রথম শিরোপাই এসেছিল মাস কয়েক আগে। এবেরেচি এজেকে তাই বড় দলে যেতে চাইবেন, সেটাই ছিল অনুমিত।

আরও পড়ুন

সে তালিকায় সবার আগে পা চালিয়েছিল টটেনহাম। নতুন কোচ এসেছে স্পার্সে, নতুনভাবে গড়ে তুলছেন পুরো দলকে। টমাস ফ্র্যাঙ্ক নিজের মতো করে দল সাজাচ্ছেন। হিউয়েন মিন সনের রেখে যাওয়া জায়গাটা পূরণ করতে চেয়েছিলেন এজেকে দিয়ে। আলোচনাও ছিল শেষদিকে। ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে ছিল মৌখিক চুক্তি, টটেনহামের প্রস্তাবে হ্যাঁ ছিল এবেরেচি এজেরও। কথা ছিল, কমিউনিটি শিল্ড শেষ করে চুক্তি সম্পন্ন করতে বসবে দুই দল। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো ইউরোপে খেলছে ক্রিস্টাল প্যালেস। তারা চাইছিল এজের হাত ধরেই ইউরোপে অভিষেক হোক তাদের। যে কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই চুক্তি নিয়ে চুপচাপ ছিল দুই পক্ষই।

ক্রিস্টাল প্যালেসকে ইতিহাসের প্রথম শিরোপা এনে দিয়েছেন এজে।
ছবি: এক্স

কিন্তু সবকিছু বদলে গেল এই ৪৮ ঘণ্টায়। বলা বাহুল্য, গত মাস পর্যন্ত এবেরেচি এজের রিলিজ ক্লজ ছিল ৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড। কেউই এত দাম পরিশোধ করতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড ও ৭ মিলিয়ন বোনাসে টটেনহামই এগিয়ে ছিল এত দিন। কিন্তু এর মধ্যেই ইনজুরি হানা দিল আর্সেনালে। মৌসুমের প্রথম ম্যাচে কাই হাভার্টজের চোট পালটে দিল সব সমীকরণ। কত দিনের জন্য বেরিয়ে যাচ্ছেন, তা–ও জানা নেই। ফলে একজন দক্ষ রাইট উইঙ্গার দরকার ছিল আর্সেনালের। আর বাজারে হাতের কাছে কে আছে? এবেরেচি এজে!

আরও পড়ুন

ফলাফল দুই দিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে এজের পিছু নিল আর্সেনাল। ক্রিস্টাল প্যালেসের হয়ে এজের ইউরোপে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, ক্রিস্টাল প্যালেসকে দুটি ট্রফিও উপহার দেওয়া হয়েছে। ফলে বিক্রি করতে আর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই তাদের। এখন যে বেশি দাম দিতে পারে। আর্সেনাল সুযোগটা নিল সেখানেই। টটেনহামের আগে তারা যোগাযোগের হাত বাড়াল এজের দিকে। এই আর্সেনালের একাডেমিতেই এজের বেড়ে ওঠা। মাত্র আট বছর বয়সে আর্সেনাল একাডেমিতে এসেছিলেন। পাঁচ বছর সেখানে থেকে পরিবারের সঙ্গে চলে যান ফুলহামে। আর্সেনালের সঙ্গে তাই এজের সম্পর্ক সেই ছোটবেলার। মনেপ্রাণে গানার্স একজনকে যখন ডাক দিল আর্সেনাল, তখন আর না করার সুযোগ পাননি তিনি। টটেনহামের সঙ্গে চুক্তিটা ছিল মৌখিক। সেটি ভেঙে তাই আর্সেনালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে ছিল না কোনো বাধ্যবাধকতা।

মাঝখানে ব্যবধান ১৯ বছরের।
ছবি: এক্স

এজের কাছ থেকে সবুজসংকেত পেয়ে কাজ শুরু করে আর্সেনাল। দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয় তাঁর দলবদল। সবটাই টটেনহামের নাকের ডগা দিয়ে। স্পার্সের কোনো ধারণাই ছিল না যে তাদের চোখের সামনে দিয়ে খেলোয়াড় নিয়ে যাচ্ছে তাদেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফলাফল? টটেনহামের এক মাস ধরে হয়ে থাকা খেলোয়াড় ৪৮ ঘণ্টায় ভোল পালটে যোগ দিলেন আর্সেনালে।

আরও পড়ুন

এবেরেচি এজের এই দলবদল যেন মনে করিয়ে দিল সল ক্যাম্পবেলের কথা। ২০০১ সালে নিজের ঘর টটেনহাম ছেড়ে আর্সেনালে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২৫ বছর পরে এসেও সেই ঘটনা এখনো স্পার্স সমর্থকদের স্মৃতিতে অমলিন। টটেনহাম কোচ অবশ্য এই ‘ধোঁকা’ সামলে নিয়েছেন ভালোভাবেই। ‘যে আসতে চায় না, তাকে জোর করে এনে লাভ নেই’ বলে মিডিয়া সামলেছেন কোচ টমাস ফ্র্যাঙ্ক। কিন্তু মনের ক্ষত তো রয়ে গেছে।

আর্সেনালের নতুন ‘নাম্বার টেন’!
ছবি: এক্স

আর্সেনালের জন্য এবেরেচি এজে একেবারে পারফেক্ট সাইনিং। একে তো কাই হাভার্টজ লম্বা সময়ের জন্য চোটের কারণে বাইরে। তাঁর জায়গায় এমন একজন আসছেন, যিনি হাভার্টজের জায়গা যেমন পূরণ করতে পারবেন, তেমনি মাঝমাঠে আর্সেনালের বিভিন্ন সমস্যা দূরও করতে পারবেন। একাধারে ড্রিবলিং, দূরপাল্লার শট নেওয়া, গায়ের জোরে বল কেড়ে নেওয়া, ট্র্যাকব্যাক করা, দৌড়ে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করা; অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে সবটা করার শক্তি আছে তার। গত মৌসুমে ক্রিস্টাল প্যালেসকে দুটি শিরোপা জেতানোর মূল নায়ক ছিলেন তিনি। ফলে আর্সেনালের ‘একটুর জন্য ফসকে যাওয়া’ শিরোপাগুলোয় নায়ক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এখন এজের কাছে। কতটা পূরণ করতে পারবেন, সেটা সময় আর কোচ মিকেল আর্তেতার হাতে।

আরও পড়ুন