ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এত স্ট্রাইকার কিনছে কেন

গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সারপ্রাইজ প্যাকেজ ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ভালো অর্থে নয়, খারাপ অর্থেই বলছি। খোদ ইউনাইটেডের শত্রুরাও ভাবতে পারেনি, প্রিমিয়ার লিগে এতটা শোচনীয় অবস্থা হতে পারে ক্লাবটির। একের পর এক ম্যাচ হেরেছে, প্রিমিয়ার লিগে তাদের ফলাফল ঠেকেছে তলানিতে। পত্রপাঠে কোচ বিদায় করে নতুন কোচ এসেছে, তাতেও বদলায়নি ভাগ্য। চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগসহ ইউরোপের কোনো টুর্নামেন্টই এবার খেলা হবে না ইউনাইটেডের। এ মৌসুমে তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে লড়তে হবে শুধু ইংলিশ লিগের শিরোপার জন্য।

গত মৌসুমের হযবরল অবস্থা দেখেই আন্দাজ করা গিয়েছিল, পরের মৌসুমে নিজেদের ভোল পাল্টে ফেলবে ইউনাইটেড। রুবেন আমোরিমকে সে রকম আশা দিয়েই আনা হয়েছিল। মৌসুমের মাঝপথে দলে যোগ দিতে কিছুটা নারাজ ছিলেন পর্তুগিজ এই কোচ, তবু তাঁকে ভবিষ্যতের আশা দেখিয়ে রাজি করিয়েছিল রেড ডেভিলরা। আমোরিম সে আশাতেই যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে নিজে বলতে বাধ্য হয়েছেন, ইউনাইটেড ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল দল এটি। তিন মাসের মাথায় পাক ধরেছে তাঁর চুল-দাড়িতে। এই মৌসুমে তাই রীতিমতো আটঘাট বেঁধেই দলবদলের বাজারে নেমেছে ইউনাইটেড। কিন্তু দলবদলের বিশাল একটা সময় পেরিয়ে এসে তাদের দলে যোগ দিয়েছেন মাত্র তিনজন স্ট্রাইকার! এত স্ট্রাইকার দিয়ে কী করবে ইউনাইটেড?

আরও পড়ুন
মৌসুমের মাঝখানে এসে ইউনাইটেডের হাল ধরতে হয়েছে আমোরিমকে।
ছবি: এক্স

ছবি: এক্সগত মৌসুমের শেষার্ধেই একটা দলবদল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেডের। ওলভারহ্যাম্পটন থেকে ইউনাইটেডে যোগ দিচ্ছেন ম্যাথিয়াস কুনহা। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারকে ভেড়াতে দুই পক্ষের শুধু সম্মতি দরকার ছিল। দলবদলের মৌসুম শুরু হতে না হতেই মিলে গেছে সেটা। ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন কুনহা। স্ট্রাইকার কেনা ইউনাইটেডের সবে শুরু। কুনহার পরপর গুঞ্জন ছড়াতে শুরু করে ব্রেন্টফোর্ডের স্ট্রাইকার ব্রায়ান এমবুয়েমুকে নিয়ে। ক্যামেরুনের ২৬ বছর বয়সী স্ট্রাইকার ব্রেন্টফোর্ডের আশা–ভরসা হয়ে ছিলেন প্রায় অর্ধযুগ। চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে টেনে এনে ব্রেন্টফোর্ডকে প্রিমিয়ার লিগে টিকিয়ে রাখার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল এই এমবুয়েমুর। ফলে তাঁর দিকে আলাদা করে নজর ছিল ইউনাইটেডের। দলবদলের বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঁকে কেনার জন্য। তিন দফা ফিরিয়ে দেওয়ার পর অবশেষে ইউনাইটেডের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ব্রেন্টফোর্ড। এমবুয়েমুকে দলে ভেড়াতে ইউনাইটেডের খরচ হয়েছে ৭৫ মিলিয়ন ইউরো। এ ছাড়া বোনাস তো আছেই।

এমবুয়েমু আর কুনহার কাছ থেকে সরাসরি ইমপ্যাক্ট পাবে ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগের পরীক্ষিত স্ট্রাইকার, বছরের পর বছর ধরে সার্ভিস দিয়ে এসেছেন দলকে। কয়েক মৌসুম ধরে আলেহান্দ্রো গার্নাচো বা অ্যান্থনির কাছ থেকে যে সার্ভিস পাচ্ছিল না ইউনাইটেড, সেটাই পাওয়ার আশা এ দুজনের কাছ থেকে। তাঁদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য আলাদা করে সময় দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। প্রিমিয়ার লিগের পরিবেশ আর খেলার ধরনের সঙ্গে বহুদিন ধরেই পরিচিত তাঁরা।

আরও পড়ুন
ব্রায়ান এমবুয়েমু এখন ইউনাইটেডের।
ছবি: এক্স

এখানেই অবাক করেছে বেনজামিন সেস্কোর দলবদল। সেস্কোর ইউনাইটেডে ভেড়ার তেমন কোনো কারণই ছিল না। বরং তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল নিউক্যাসল ইউনাইটেডের। অ্যালেকজেন্দার ইসাক বিদায় নিলে সেই জায়গায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। আরবি লাইপজিগের সঙ্গেও কথা অনেকটাই এগিয়ে ছিল নিউক্যাসলের। অন্যদিকে দুই স্ট্রাইকার পাওয়ার পর ইউনাইটেডের লক্ষ্য প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরেকজন স্ট্রাইকার। ওলি ওয়াটকিনস ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু সেটা না হওয়ায় সেস্কোর দিকে নজর পড়ে তাদের। নিউক্যাসল যেখানে আরবি লাইপজিগের সঙ্গে চুক্তি সেরে রেখেছিল, ইউনাইটেড সেখানে কথা বলতে থাকে সেস্কোর সঙ্গে। খেলোয়াড় যখন রাজি, বোর্ড তখন আর কী করবে। সামান্য দর–কষাকষির পর নিউক্যাসলের প্রস্তাবের চেয়ে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ইউরো বেশি দিয়েই তাঁকে দলে পায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

২০২৩ সালে প্রথম সেস্কোকে নজরে এনেছিল ইউনাইটেডের স্কাউটরা। তখন বেশ কয়েকবার কথা এগোলেও চূড়ান্ত হয়নি। অবশেষে ২০২৫ সালে এসে স্বপ্ন পূরণ হলো সেস্কোর। তাই তো চুক্তি নিশ্চিত হওয়ার পর আর দেরি করেননি, সেদিনই পাড়ি জমিয়েছেন ইউনাইটেডে। একসঙ্গে তিন স্ট্রাইকারকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ইউনাইটেড। ২২ বছর বয়সী স্ট্রাইকার ইউনাইটেডের ফ্রন্ট লাইনে আনবেন বৈচিত্র্য।

আরও পড়ুন

তবে এখানেই কিন্তু ইউনাইটেডের দলবদল থামছে না। গত মৌসুমে ইউনাইটেডের চিন্তার বড় কারণ ছিল গোলবারের নিচে অস্থিরতা। আন্দ্রে ওনানার ভুলে একের পর এক ম্যাচে হারের দেখা পেয়েছে ইউনাইটেড। যে কারণে গোলবারের নিচে বিশ্বস্ত এক জোড়া হাত চায় তারা। আর সেটা হতে পারে ২৬ বছর বয়সী ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। তাঁকে কিনতেও খুব একটা খরচ করতে হবে না তাদের। পিএসজির হয়ে সবটা জেতা হয়ে গেছে তাঁর, এখন নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য ইউনাইটেডে নজর রাখছেন তিনি। এমনকি ইউনাইটেডেরও পছন্দ তাঁকে। যদিও শুরুতে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমি মার্তিনেজের দিকে নজর রেখেছিল ইউনাইটেড, কিন্তু দামে বনিবনা না হওয়ায় সরে এসেছে সে সিদ্ধান্ত থেকে।

চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী গোলরক্ষককে দলে ভেড়াতে চায় ইউনাইটেড।
ছবি: এক্স

শুধু গোলরক্ষক নয়, মাঝমাঠেও একজন বিশ্বাসী খেলোয়াড় দরকার ইউনাইটেডের। সেখানে তাদের নজর আছে ব্রাইটনের ২১ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কার্লোস বালেবার দিকে। তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। ব্রাইটনের চাওয়া ১০০ মিলিয়ন, কিন্তু তাতে রাজি নয় ইউনাইটেড। ফলে বনিবনা না হলে কম দামি কারও দিকে ছুটবে তারা। সেটা হতে পারে সেভিয়ার লুসিএন এগুমে কিংবা ভ্যালেন্সিয়ার হাভি গুয়েরা। তবে মাঝমাঠে নতুন কাউকে আনবে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই ইউনাইটেডের।

এখন দেখার বিষয়, বিশাল অঙ্কের খরচের বোঝা নিয়ে কেমন করেন আমোরিম। আগের মৌসুমে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন মাঝ মৌসুমে ঢুকেছেন বলে। এই মৌসুমে সে সুযোগ নেই। ফলে আতশি কাচের নিচে কেমন করেন, সেটাই দেখার জন্য উদ্‌গ্রীব পুরো প্রিমিয়ার লিগ।

আরও পড়ুন