দুই ইনিংসই শুরু হতো যাঁদের হাত ধরে

ক্রিকেটে দুই ধরনের খেলোয়াড় আছেন। এক দল বল করেন, আরেক দল ব্যাট করেন। ক্রিকেটারদের ভাগ করতে চাইলে আসলে এই দুটি ভাগের কথাই সবার আগে মাথায় আসে। কিন্তু অলরাউন্ডাররা এর ব্যতিক্রম। তাঁরা ব্যাট হাতেও যেমন পারদর্শী, বল হাতেও ঠিক সমানে সমান। একজন অলরাউন্ডার দলে থাকা মানে একের ভেতর দুই। তবে এর মধ্যে কেউ কেউ আছেন এককাঠি সরেস। বল ও ব্যাট—দুই ইনিংসের সূচনাই হয় তাঁদের হাত ধরে। এক দিনের ক্রিকেটে দুই ইনিংস সূচনা করা খেলোয়াড়দের নিয়েই আজকের লেখা।

তিলকারত্নে দিলশান, শ্রীলঙ্কা

তিলকারত্নে দিলশান
ছবি: এক্স (টুইটার) থেকে সংগৃহীত

তিলকারত্নে দিলশান সবার কাছে পরিচিত ছিলেন ওপেনিং ব্যাটার হিসেবেই। জয়াসুরিয়া-পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কার মার-কাটারি ব্যাটিংয়ের ধারক ছিলেন দিলশান। যদিও দিলশানের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল লোয়ার-অর্ডার ব্যাটার হিসেবে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছর খেলেছেন ব্যাটিং অর্ডারের ৫, ৬, ৭ নম্বরে। ২০০৮ সালে প্রথম তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয় ওপেনিংয়ে। সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। ক্যারিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত দিলশান ছিলেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান। ব্যাট হাতে এক দিনের ক্রিকেটে ১০ হাজারেরও বেশি রান করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি এসে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মনোযোগ দেন বোলিংয়েও। বল হাতে মোট ১০৬ উইকেটের মালিক তিনি। স্পিননির্ভর পিচে তাঁকে দিয়ে বোলিং শুরু করতেন অধিনায়কেরা। মোট ১৩ ম্যাচে ব্যাটের সঙ্গে বল হাতেও ইনিংসের সূচনা করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন

মোহাম্মদ হাফিজ, পাকিস্তান

মোহাম্মদ হাফিজ
ছবি: এক্স (টুইটার) থেকে সংগৃহীত

পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ অবশ্য দিলশানের ঠিক উল্টো ভার্সন। হাফিজ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ওপেনিং ব্যাটসম্যান। বরং ক্যারিয়ারের শেষ দিকে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দিতে ওপেনিং পজিশন ছেড়ে দেন তিনি। বল হাতেও বেশ কার্যকর ছিলেন হাফিজ। প্রশ্নবিদ্ধ অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত নিয়মিত বোলিং করতেন। বল হাতে ২৫ ইনিংসের শুরু করলেও বল ও ব্যাট হাতে একই সঙ্গে দুই ইনিংসের সূচনা করেছেন ১৪ ম্যাচে। হাফিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে ৬ হাজার ৬১৪ রানের সঙ্গে রয়েছে ১৩৯ উইকেট।

নিল জনসন, জিম্বাবুয়ে

নিল জনসন
ছবি: এক্স (টুইটার) থেকে সংগৃহীত

জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডারকে অনেকেরই হয়তো চেনা নেই। কিন্তু জিম্বাবুয়ের স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা তারকাদের একজন ছিলেন নিল জনসন। খুব বড় একটা ক্যারিয়ার না হলেও তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন বল ও ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করার জন্য। ৪৮ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে মোট ২৩ ম্যাচে বল ও ব্যাট দুই ইনিংসের সূচনাই হয়েছে তাঁর হাত ধরে। ছোট্ট এই ক্যারিয়ারে চারটি সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ১ হাজার ৬৭৯ রান। ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার বল হাতেও রয়েছে ৩৫ উইকেট।

আরও পড়ুন

মনোজ প্রভাকর, ভারত

মনোজ প্রভাকর
ছবি: এক্স (টুইটার) থেকে সংগৃহীত

বোলার থেকে ব্যাটসম্যান হওয়ার গল্প ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। ভারতীয় ক্রিকেটার মনোজ প্রভাকরও তেমনই এক ক্রিকেটার। তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ওপেনিং বোলার হিসেবে। ব্যাট হাতে কালেভদ্রে নামতে দেখা যেত তাঁকে। হুট করেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেওয়া হয় তাঁকে। অধিনায়ক আজহারউদ্দিন কী মনে করে মনোজকে পাঠান ওপেন করতে। শুরুতে সুবিধা করতে না পারলেও আস্তে আস্তে মানিয়ে নেওয়া শুরু করেন মনোজ। অতঃপর পুরোদস্তুর ব্যাটার বনে যান। ব্যাট হাতে তাঁর রয়েছে দুই সেঞ্চুরি ও ১১টি হাফ সেঞ্চুরি। বল হাতে ১৩০ ম্যাচে ১৫৭ উইকেট। ৫ উইকেট পেয়েছেন চারবার। বল ও ব্যাট হাতে মোট ৪৫ ম্যাচে শুরু করেছেন এই ডানহাতি মিডিয়াম পেস অলরাউন্ডার। অবসরের আগপর্যন্ত ব্যাট ও বল হাতে ম্যাচ শুরুর দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধেই।

এ ছাড়া ল্যান্স ক্লুজনার, ক্রিস গেইল, বীরেন্দর শেবাগের মতো ক্রিকেটারদের দেখা গেছে ব্যাট ও বল হাতে ইনিংসের সূচনা করতে। বাংলাদেশের বর্তমান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও এক দিনের ক্রিকেটে তিনবার ব্যাট ও বল হাতে ম্যাচ শুরু করেছেন। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কাইল মেয়ার্সকে দেখা গেছে বল ও ব্যাট হাতে এক ম্যাচে সূচনা করতে।

আরও পড়ুন