হংকংকে হারাতে কোন কৌশল নিতে হবে বাংলাদেশকে

আশা-হতাশার মিশ্রণের এক ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ ফুটবল দল এখন হংকংয়ে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। শুধু বদলে গেছে ভেন্যু। নিজেদের মাটিতে ফিরে আসার গল্প লিখতে লিখতেও লেখা হয়নি বাংলাদেশের। শেষ বাঁশি বাজার এক সেকেন্ড আগে গোল হজম করে বাংলাদেশ ম্যাচ শেষ করেছে হার দিয়ে। এশিয়ান কাপে সুযোগ পেতে চাইলে জয়ের কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে। কীভাবে এই দল নিয়েই হংকংকে হারাবে বাংলাদেশ?

হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে নিজেদের প্রস্তুত করার খুব একটা সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। লম্বা সফর শেষে দেশে এসেছিলেন বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা দুই তারকা হামজা চৌধুরী ও শমিত সোম। তাঁদের পারফরম্যান্সই ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। দলকে যেমন টেনে নিয়ে গেছেন, তেমননি গোলও করেছেন। বরং পুরো ম্যাচজুড়ে চোখে পড়ছিল ডিফেন্ডারদের বাজে পারফরম্যান্স। কোচের প্রশ্নবিদ্ধ ট্যাকটিকস নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। কোনো এক জায়গায় ভালো পারফর্ম করতে পারলেই হয়তো ম্যাচটা নিজেদের অনুকূলে নিতে পারত বাংলাদেশ। হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে কিছুটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পেরেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। সেখান থেকে শিক্ষা না নিলে হংকংয়ের কাছে আবারও হারের স্বাদ নিতে হতে পারে।

আরও পড়ুন
মাঠে একসঙ্গে চারজনকে দেখ যায়নি কখনোই।
ছবি: জামাল ভূঁইয়ার ফেসবুক থেকে

বাংলাদেশ দলের অন্যতম বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে গোলবারের নিচে। ২১ বছর বয়সী মিতুল মারমা গ্লাভস হাতে এখনো ততটা অভিজ্ঞ নন। আনিসুর রহমান জিকোর নিষেধাজ্ঞার পর তাঁর ওপরে এসে পড়ে গোলরক্ষকের দায়িত্ব। বেশ ভালোভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু বড় মঞ্চে তাঁকে দেখে বেশ নার্ভাস মনে হয়। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বিপক্ষে তাঁকে আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। সহজ দুটি শট হাত গলে বেরিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে শেষ মুহূর্তে হজম করা গোলটি তাঁর হাত বরাবরই ছিল, তা ঘুরে প্রবেশ করেছে জালে। মাঠের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন নিয়ে তাই আলাদা করে ভাবতে হবে বাংলাদেশকে। নইলে হয়তো একই ভুলের সম্মুখীন হতে পারে পরবর্তী ম্যাচেও। তবে স্কোয়াডে থাকা বাকি দুই গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ ও সুজন হোসেনের অভিজ্ঞতাও শূন্যের কোঠায়। তাই চিন্তাভাবনা করে গোলরক্ষক বেছে নিতে হবে কোচকে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের ডিফেন্সের হতশ্রী অবস্থা দেখা গেছে হংকং ম্যাচে। বিশেষ করে বাংলাদেশের চারটি গোলের তিনটিই এসেছে বাঁ পাশ দিয়ে। লেফট ব্যাক সাদ উদ্দিনের বাজে পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। তাজ উদ্দিন ও তারিক কাজি বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়। তাঁদের সঙ্গে ডিফেন্সে যুক্ত হতে পারেন চোট কাটিয়ে আসা তপু বর্মণ ও জায়ান আহমেদ। ২০ বছর বয়সী জায়ান আহমেদ বাঁ মাঠে নেমেই চমক দেখিয়েছেন। সাদ উদ্দিনের জায়গায় তিনিই হতে পারেন সেরা সিদ্ধান্ত।

গত ম্যাচে মাঝমাঠ একাই সামলেছেন হামজা চৌধুরী।
ছবি: হামজা চৌধুরীর ফেসবুক থেকে

মাঝমাঠে বাংলাদেশের ভরসা হামজা চৌধুরী। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দুজন সোহেল রানা ঠিকভাবে সঙ্গ দিতে পারছেন না, বরং দলের সেরা খেলোয়াড়েরা বসে থাকেন তাঁদের কারণে। সেখানে জামাল ভূঁইয়া ও শমিত সোম হতে পারেন প্রথম পছন্দ।

আরও পড়ুন

আক্রমণভাগে শেষ ম্যাচে ডানে ও বাঁয়ে ছিলেন যথাক্রমে রাকিব হোসেইন ও ফয়সাল আহমেদ। ফলস নাইন হিসেবে খেলানো হয়েছিল শেখ মোরসালিনকে। কিন্তু আক্রমণভাগে কেউই নিজেদের জায়গায় ক্লিক করেননি। বাঁ পাশে ফয়সাল আহমেদ ছিলেন নিষ্প্রভ। অন্যদিকে রাকিব হোসেনের বাড়ানো একটা বলও ঠিকমতো আয়ত্তে নিতে পারেননি শেখ মোরসালিন। সব মিলিয়ে আক্রমণভাগও ছিল ছন্নছাড়া। বাঁ পাশে তাই ফাহামিদুল ইসলামের মতো খেলোয়াড়কে প্রয়োজন। বাঁ পাশ দিয়ে তাঁর আক্রমণ বরাবরই ক্ষুরধার। রাকিব ও মোরসালিনকে অদল-বদল করে নিজেদের কাজ বুঝিয়ে দিলে পাকাপোক্ত হবে মূল একাদশ।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য সেরা একাদশ

কোচ হাভিয়ের কাবরেরার মূল সমস্যা বরাবরই একাদশ বেছে নেওয়ায়। কারণ দলে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁদের ওপর ভরসা করলে খুব সহজে উৎরে যাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে মাঝমাঠে এখন পর্যন্ত একত্রে জামাল-হামজা-শমিতকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি কারও। এই তিনজনের ফুটবল মস্তিষ্ক একসঙ্গে হলে বদলে যেতে পারে খেলার ভাগ্য। এ ছাড়া বাঁ পাশে জায়ান-শমিত-ফাহামিদুলের দ্রুতগতির আক্রমণ বদলে দেবে অনেক সমীকরণ। গত ম্যাচেই হংকংয়ের রক্ষণভাগে এই ফাঁকা জায়গা চোখে পড়েছে অনেকের। হামজা চৌধুরী বেশ কিছু দুর্দান্ত পাসও বাড়িয়েছেন এই জায়গা দিয়ে। কিন্তু মাঝমাঠের অনভিজ্ঞতা আটকে দিয়েছে দুর্দান্ত আক্রমণগুলো। পরবর্তী ম্যাচে ঠিকঠাক একাদশ বেছে নিলে আর এই সমস্যায় পড়তে হবে না বাংলাদেশকে। হাভিয়ের কাবরেরা যেভাবে দলকে ষাট মিনিটের পর খেলিয়েছেন, তা শুরু থেকে খেলাতে পারলে হংকংয়ের মাটি থেকে ৩ পয়েন্ট নিয়েও ফেরা সম্ভব। শুধু দরকার সঠিক জায়গায় সঠিক খেলোয়াড়ের।

আরও পড়ুন