ফিরে আসাটা দারুণ হলো না নেইমারের

নেইমারছবি: এক্স

ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে খেলোয়াড়দের সামনে বিকল্প থাকে দুটি—হয় শেষবেলায় টাকা উপার্জন করে জীবনটা উপভোগ করা। নইলে নিজের প্রাণপ্রিয় ক্লাবে ফিরে সমর্থকদের সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানা। ফুটবল খেলোয়াড়দের টেনেটুনে দেড় থেকে দুই দশকের ক্যারিয়ার। নেইমার বেছে নিয়েছিলেন দ্বিতীয়টা, ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকতেই প্রথমটার ফায়দা তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ঘরে ফেরাটা যেন অভিশপ্ত হয়ে রইল ব্রাজিলিয়ান তারকার জন্য। কারণ, নেইমারের সান্তোস এখন আছে অবনমনের শঙ্কায়।

নেইমারের উত্থানের গল্প যেভাবে লেখার কথা ছিল, তার ছিটেফোঁটাও হয়নি। সান্তোসের পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন ব্যালন ডি’অরের শীর্ষ ১০-এ। ইউরোপের বাইরে থেকে কেউ ব্যালন ডি’অরে জায়গা পাচ্ছে, এমনটা ভাবা তখনো ছিল কঠিন। নেইমার ২১ বছর বয়সে সেটা করে দেখিয়েছিলেন। বার্সেলোনার নেইমার ছিলেন অপ্রতিরোধ্য, চোটের কারণে মেসি যখন মাঠের বাইরে, বার্সেলোনার রক্ষাকর্তা হয়ে ছিলেন নেইমার। পিএসজির বিপক্ষে ৬-১ গোলের ঐতিহাসিক কামব্যাকের নেপথ্যের নায়কও ছিলেন তিনি। কিন্তু এত কিছুর পরও নেইমার বার্সা ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন পিএসজিতে। টাকা আর মেইন ম্যান হওয়ার লোভ তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ফ্রেঞ্চ লিগে।

আরও পড়ুন
নেইমারের ফিরে আসার গল্প উল্টো অবনমনের শঙ্কা জাগিয়েছে সমর্থকদের মনে
ছবি: এক্স

বেপরোয়া মনোভাব, খেলায় মনোযোগের অভাব আর চোট—সব মিলিয়ে নেইমার যেন পরিণত হয়েছিলেন নিজের ছায়ায়। ক্লাব ক্যারিয়ার মিশে গেছে ধুলায়, সঙ্গে জাতীয় দলও। পরিসংখ্যান দেখে তা বলার কোনো উপায় নেই। কিন্তু যাঁরা নেইমারের খেলা দেখেছেন, তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন, তাঁরা জানেন নেইমার কতটা বঞ্চিত করেছেন ফুটবল–বিশ্বকে। পিএসজি থেকে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে, আল হিলালে দুই মৌসুমে থেকে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৭টি। শেষ পর্যন্ত আর কাউকে না পেয়ে ফিরে এসেছেন সান্তোসে। নিজের প্রাণপ্রিয় ক্লাবে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে।

নেইমারকে ফিরে পেয়ে খুশি ছিল সান্তোস, নেইমার নিজেও উৎফুল্ল ছিলেন ফেরার আনন্দে। সবকিছু যেন খাপে খাপ মিলে যাচ্ছিল, সামনে বিশ্বকাপ, নিজের বাড়িতে থেকে প্রস্তুতিটাও হবে দারুণ। নতুন কোচ কার্লো আনচেলত্তির অধীনে নিজেকে প্রমাণের জন্য সুযোগও আছে। অন্তত সৌদি লিগ থেকে ব্রাজিলিয়ান লিগ তো এগিয়ে আছে। কিন্তু সেই স্বপ্ন মিইয়ে গেছে দ্রুতই।

আরও পড়ুন

মৌসুমের ৪৪ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ২৪ ম্যাচে মাঠে নামতে পেরেছেন। বাকি সময়টা কাটিয়েছেন সেই হাসপাতালেই। আর বাকি যে সময়টা ছিল হাতে, সেটাও যে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তা কিন্তু নয়। বরং দর্শকেরা হতাশ হয়েছেন তাঁর খেলা দেখে। স্বাভাবিক খেলাটা খেলতেও যেন ভুলে গেছেন তিনি। নেইমার সবটা পরিবর্তন করে দেবেন—এমন আশা ছিল না কারোর। কিন্তু সুপারস্টার বলে কথা, যার প্রভাব প্রতিপত্তি পুরো ফুটবলজুড়ে। খেলায় কিছুটা প্রভাব তো থাকবে। খেলায় না হলেও দলকে উজ্জীবিত করতে নেইমার তো আইকন হয়ে উঠতে পারেন। সেটাতেও হয়েছেন ব্যর্থ।

লিগে ১৬ ম্যাচ খেলে গোল পেয়েছেন মাত্র ২টি ম্যাচে। প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল ফ্ল্যামেঙ্গো, যারা আছে লিগের শীর্ষে। আরেক ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল জুভেন্তুদে (নাম ঠিক আছে, জুভেন্টাস আরেকটা দল), তারা আছে অবনমনের লড়াইয়ে। যেখানে নাম আছে সান্তোসেরও। লিগের ৩৩ ম্যাচ শেষে সান্তোসের পয়েন্ট মাত্র ৩৬। আছে ১৬ নম্বর স্থানে। ব্রাজিলিয়ান লিগ থেকে প্রতি মৌসুমে চারটি দল অবনমিত হয়। সেই হিসাবে সান্তোস কোনোভাবে অবনমন এড়িয়ে আছে। খুব যে এগিয়ে আছে, তা–ও নয়। ভিতোরিয়া, জুভেন্তুদে পিছিয়ে আছে মাত্র ১ পয়েন্ট।

আরও পড়ুন

এই মৌসুমে মোট চারজন কোচ বদলেছে সান্তোস। ব্রাজিলিয়ান লিগে অবশ্য কোচ বরখাস্ত করা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। একজন কোচ পুরো মৌসুম কাটাচ্ছেন এক দলে, এটাই অবাক হওয়ার মতো। নেইমার এত বড় চোটেই পড়েছেন যে, একজন কোচের অধীনে খেলার সুযোগই হয়নি তাঁর। নেইমারকে দলে ভিড়িয়ে যে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ আদায় করতে চেয়েছিল সান্তোস, তা ব্যর্থ হয়েছে পুরোপুরি। বরং কোচের কাছে দর্শকেরা আবদার করছেন, নেইমারকে ছাড়াই যাতে মাঠে নামে সান্তোস। তাহলেই অন্তত স্বাভাবিকের থেকে ভালো খেলে তারা।

অবনমন থেকে বাঁচতে সান্তোসের হাতে আছে মাত্র ৫ ম্যাচ। ২০২১ সালে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অবনমিত হয়েছিল সান্তোস। সমর্থকেরা ভেবেছিলেন নেইমারের অধীনে আবারও ফিরে আসবেন। ৯ বছর ধরে চলা শিরোপাখরা হয়তো শেষ হবে নেইমারের হাত ধরেই। কিন্তু তার কোনোটাই সত্যি হয়নি।

নেইমারের ফিরে আসার গল্প উল্টো অবনমনের শঙ্কা জাগিয়েছে সমর্থকদের মনে। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিল দলে ফেরার দ্বার রুদ্ধ হয়ে গেছে নেইমারের জন্য। ৩৩ বছর বয়সে নেইমারের ঘরে ফেরাটা তাই হয়ে রইল অভিশপ্ত।

আরও পড়ুন