গান যেভাবে বাঁচিয়েছিল কিশোরীর প্রাণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিশোরী বয়সে ছিলেন আনিতা লস্কর–ওয়ালফিশ

ভাবো, তুমি গান ভালোবাসো, সুর ভালোবাসো। আর ভালোবাসো গিটার বাজাতে। কিন্তু হঠাৎ করে তোমার চারপাশ বদলে যাচ্ছে—ভিন্নমতের বলে ভালোবাসার বদলে মানুষ ঘৃণা করছে। স্কুলে তোমাকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। সহপাঠীরা তোমার বেঞ্চে বসে না, টিফিন ভাগ করে না, কথা বলে না। এভাবে চলতে চলতে একদিন তোমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ভয়ংকর এক শিবিরে—মৃত্যুশিবির। যেখান থেকে বেশির ভাগ মানুষই আর ফিরে আসতে পারে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এমনটাই হয়েছিল কিশোরী আনিতা লস্কর–ওয়ালফিশের জীবনে। তবে মৃত্যুশিবিরের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছে আনিতা। সে ফিরে এসেছিল; কারণ সে গান ভালোবাসত। সে চেলো (চেলো বা ভায়োলনচেলো হলো বেহালার মতো একধরনের বাদ্যযন্ত্র) বাজাতে পারত। গান, বই বা শিল্প—সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও এগুলো যে মনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে, আনিতা তার বাস্তব উদাহরণ। মৃত্যুশিবিরের সবচেয়ে অন্ধকার সময়েও সে ভেতরের শক্তি ধরে রাখতে পেরেছিল বলে বেঁচে ফিরতে পেরেছে। সেই কিশোরী আনিতার বয়স এখন ১০০। আউশভিৎস নারী অর্কেস্ট্রার শেষ জীবিত সদস্যও তিনি।

সুন্দর শৈশবে অন্ধকারের ছায়া

আনিতার জন্ম ১৯২৫ সালের ১৭ জুলাই, ব্রেসলাউ (তখনকার জার্মানি, এখন পোল্যান্ড) শহরের এক ইহুদি পরিবারে। এখন এই শহরের নাম ভ্রৎসোয়াভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এটি পোল্যান্ডের অংশ। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আনিতা। বড় দুই বোনের নাম মেরিয়ান ও রেনাতে। তাঁদের মা ইডিথ ছিলেন বেহালাবাদক আর বাবা আলফনস ছিলেন আইনজীবী। বাড়িতে সব সময় গান, বই আর নাটক নিয়ে তাঁদের আলোচনা হতো। সংস্কৃতিমনা পরিবারে ছোটবেলা থেকেই আনিতা চেলো বাজাতেন। তিনি চেলোবাদক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৩০-এর দশকে নাৎসি শাসন আসার পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।

আনিতা বলেন, তাঁরা ছিলেন জার্মান-ইহুদি পরিবার। ছোট্ট একটি বেসরকারি স্কুলে পড়তেন তিনি। একদিন হঠাৎ বুঝতে পারেন, ইহুদিদের ঘৃণা করা হচ্ছে। ১৯৩৮ সালের মধ্যে নাৎসি জার্মানিতে এই ইহুদিবিদ্বেষ বিশাল আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ইহুদি হওয়ায় আনিতার বাবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ইহুদি হওয়ায় আনিতাকে চেলো শেখানোর জন্য তখন ব্রেসলাউয়ে কোনো চেলো শিক্ষক রাজি হচ্ছিলেন না। এ কারণে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পড়াশোনার জন্য তাঁকে বার্লিনে পাঠানো হয়। কিন্তু এক ভয়াবহ ঘটনায় দ্রুত বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাঁকে।

১৯৩৮ সালের ৯ ও ১০ নভেম্বর নাৎসি কর্তৃপক্ষ জার্মানির ইহুদিদের ওপর এক বর্বরতম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালায়, যা ক্রিস্টালনাখট বা ভাঙা কাচের রাত (নাইট অব ব্রোকেন গ্লাস) নামে ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছে। এ সময় নাৎসিরা ইহুদিদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও উপাসনালয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনার পর বার্লিন থেকে বাড়ি ফিরে আসেন আনিতা।

আরও পড়ুন
মা–বাবা ও দুই বোনের সঙ্গে আনিতা (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: জুইশ মিউজিয়াম বার্লিন

পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন

এরপরও বাড়িতে আনিতার মা-বাবা সন্তানদের মধ্যে সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে থাকেন। কিন্তু শেষমেশ বিচ্ছিন্ন হতে হয় তাঁদের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ৯ মাস আগে নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ১০ হাজারের বেশি শিশু–কিশোরকে উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানের নাম ‘কিন্ডারট্রান্সপোর্ট’। এর মাধ্যমে শিশু–কিশোরদের নিরাপদে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ব্রিটিশ ফস্টার হোম, হোস্টেল, স্কুল ও ফার্মে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই উদ্ধারকৃতরা ছিল হলোকাস্টের প্রকোপ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া তাদের পরিবারের একমাত্র সদস্য।

১৯৩৯ সালে আনিতার বড় বোন মারিয়ান কিন্ডারট্রান্সপোর্টে পালিয়ে ব্রিটেনে চলে যান। বাড়িতে মা–বাবার সঙ্গে থেকে যান আনিতা ও রেনাতে। কিন্তু এই থাকাও তাঁদের খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

১৯৪২ সালের এপ্রিলে একদিন হঠাৎ আনিতার মা–বাবাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে হাজির হওয়ার ভয়ংকর আদেশ আসে। আনিতা বলেন, ‘ওই নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্য আমরা মা–বাবার সঙ্গে ব্রেসলাউয়ের পথ দিয়ে হেঁটেছিলাম। শুধু আমার মা–বাবা নয়, অনেক মানুষ এই দলে ছিলেন। ওই নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে দুই বোন মা–বাবাকে বিদায় জানিয়েছিলাম। এটাই ছিল শেষবিদায়। সেখান থেকে মা–বাবা আর কোনো দিন ফেরেননি। আমি যখন নিজে মা হয়েছিলাম, তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার মা–বাবা কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন।’

এরপর আনিতা ও রেনাতেকে একটি ইহুদি অনাথাশ্রমে পাঠানো হয়। সেখানে থেকে তাঁরা কিছুদিন একটি কাগজের কারখানায় কাজ করেন। এ কারণে তাঁদের নির্বাসনে পাঠানো হয়নি। কিন্তু দুই বোন নাৎসিদের কাছ থেকে পালানোর পরিকল্পনা করেন। সেখানে দুই বন্ধুর সহযোগিতায় ফরাসি মেয়ে সেজে ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে ব্রেসলাউ রেলস্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু তাঁদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। নাৎসি গোপন পুলিশ বাহিনী গেস্টাপো তাঁদের গ্রেপ্তার করে। জালিয়াতি, শত্রুকে সাহায্য ও পালানোর চেষ্টার অভিযোগে আনিতাকে প্রায় ১৮ মাস ব্রেসলাউ কারাগারে থাকতে হয়। বোন রেনাতের কাছ থেকেও আলাদা হওয়ায় একা হয়ে পড়েন কিশোরী আনিতা।

আনিতা বলেন, ‘কারাগার সুখকর জায়গা নয়, তবে এটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পও নয়। কারণ, কারাগারে কেউ আপনাকে হত্যা করে না।’

আরও পড়ুন
এই সেই মৃত্যুশিবির, কুখ্যাত আউশভিৎস ক্যাম্প। ট্রেন থেকে এখানেই নামতে হতো। এরপর তাদের নেওয়া হতো ডানে আর বাঁয়ে। ডানে মানে জীবন; আর বাঁয়ে চিমনি—পরিণতি মৃত্যু।
ছবি: এপি

মৃত্যুশিবিরে চেলোর বাদন

১৯৪৩ সালে ব্রেসলাউ কারাগারে কয়েদিদের ভিড় বেড়ে গেলে ইহুদিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো শুরু হয়। কিশোরী আনিতাকে ট্রেনে তুলে পাঠানো হয় মৃত্যুশিবির কুখ্যাত আউশভিৎসে, রেনাতে যান আরও দুই সপ্তাহ পরে। আনিতা আউশভিৎস ক্যাম্পে রাতে পৌঁছানোর পর ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘মনে আছে, এটি খুব কোলাহলপূর্ণ ও সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ছিল। আমি কোথায় আছি, জানি না। চারদিকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, মানুষের চিৎকার আর বিশ্রী গন্ধ...যেন আমি সত্যি সত্যি নরকে পৌঁছে গেছি।’

আউশভিৎস ক্যাম্পে পৌঁছেই আনিতার মাথা ন্যাড়া করার পর ট্যাটু করে নম্বর দেওয়া হয়। আর ঠিক এই অদ্ভুত মুহূর্তে ভাগ্য বদলে যায় তাঁর। ন্যাড়া করে নম্বর দেওয়ার সময় আলাপচারিতায় হঠাৎ মৃদু স্বরে আনিতা বলেছিলেন, তিনি চেলো বাজাতে পারেন। সামান্য এই তথ্যই তাঁর জীবন বাঁচিয়ে দেয়। এ সময় পাশে থাকা এক বন্দী নারী জানিয়েছেন, ‘তাহলে হয়তো তুমি বেঁচে যাবে।’ কারণ, আউশভিৎস ক্যাম্প অর্কেস্ট্রায় (বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র একসঙ্গে বাজানো একটি বাদক দল) একজন চেলোবাদকের প্রয়োজন ছিল। পরে ওই নারী ক্যাম্প অর্কেস্ট্রার প্রধান আলমা রোজকে ডেকে আনেন। আলমা রোজ ছিলেন সুরকার গুস্তাভ মাহলারের ভাগনি। তাঁর বাবাও ছিলেন সংগীতজ্ঞ। আনিতাকে দেখে আলমা রোজের পছন্দ হয়ে যায়। চেলো বাজানোর জন্য দলে ঠাঁই হয় তাঁর। এভাবেই ১৮ বছর বয়সী আনিতা হয়ে ওঠেন আউশভিৎস নারী অর্কেস্ট্রার সদস্য।

মৃত্যুশিবিরে প্রতিদিন আনিতাদের কাজ ছিল সকাল ও সন্ধ্যায় সামরিক সংগীত বাজানো। সকালে এই সংগীতের তালে তালে ক্যাম্পে থাকা মানুষদের মার্চ করে কাজে নিয়ে যাওয়া হতো আর সন্ধ্যায় একই তালে ক্যাম্পে ফিরিয়ে এনে বন্দী করে রাখা হতো।

এই মৃত্যুশিবির সম্পর্কে আনিতা বলেন, ‘ট্রেন থেকে আউশভিৎস ক্যাম্পে আসা মানুষদের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েই একজন চিকিৎসক ও একজন কমান্ডার পরীক্ষা করতেন। তাদের বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা জিজ্ঞেস করা হতো। যারা অসুস্থতার কথা বলত, তারা অজান্তেই নিজের মৃত্যুদণ্ডে সই করত। বিশেষভাবে শিশু ও বৃদ্ধদের বেছে নেওয়া হতো ডানে আর বাঁয়ে। ডানে মানে জীবন আর বাঁয়ে চিমনি—পরিণতি মৃত্যু।’

আউশভিৎস-বার্কেনেউ ঠিক কনসেনট্রেশন ক্যাম্প নয়, বরং এটা সে সময় বধ্যভূমি হয়ে উঠেছিল। মাত্র সাড়ে চার বছরে নাৎসি বাহিনী আউশভিৎসে ১১ লাখ মানুষকে হত্যা করে, যার মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ইহুদি। গ্যাস চেম্বারে পুরে, অভুক্ত রেখে, কাজ করিয়ে মানুষ হত্যা করেছে সেই ক্যাম্পে। আউশভিৎসের কাছে বার্কেনেউ ক্যাম্পকে দ্বিতীয় আউশভিৎস বলা হতো। সেখানেই গ্যাস চেম্বারে মারা হয়েছিল অধিকাংশ মানুষকে। ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত সৈন্যরা আউশভিৎস-বার্কেনেউ শিবির থেকে নাৎসি নির্মূল করেন।

১৯৯৬ সালে বিবিসি রেডিও ৪-এর ডেজার্ট আইল্যান্ড ডিস্কে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আনিতা বলেছিলেন, ‘আউশভিৎস শিবিরে সবচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্যের পটভূমিতে সংগীত বাজানো হতো। আলমা রোজ ভয়ংকর পেশাদারত্বের সঙ্গে ক্যাম্প অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করতেন। আমরা কী বাজাব এবং আমরা ভালো বাজাচ্ছি কি না, তা নিয়ে তিনি আমাদের এতটাই ব্যস্ত করে তুলতেন যে এই মৃত্যুশিবিরে আমাদের পরিণতি কী হবে, সে ভয় কেবল ওই বাজানোর সময়টুকু ভুলে যেতাম। আমার বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান ছিল চেলো বাজানো ও অর্কেস্ট্রার সঙ্গে থাকা। কারণ, একসময় মেনে নিতে হয়েছিল যে তারা হয়তো মৃত্যুর জন্য আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু যতক্ষণ নেয়নি, ততক্ষণ বেঁচে আছি। আর বেঁচে থাকার অন্যতম শর্ত ছিল অন্য মানুষের সঙ্গ; একা কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য ছিল।’

আরও পড়ুন

আউশভিৎস থেকে বেলসেন

১৯৪৪ সালের এপ্রিল মাসে আলমা রোজের মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয়—যুদ্ধে নয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয় তাঁর। বন্ধ হয়ে যায় অর্কেস্ট্রা, গান। এর পরপরই আউশভিৎস থেকে নারীদের বেলসেন শিবিরে পাঠানো হয়। সেখানে কোনো অর্কেস্ট্রা ছিল না। বেলসেন শিবির মৃত্যুশিবির ছিল না। মানুষকে হত্যার জন্য এখানে কোনো গ্যাস চেম্বারও ছিল না। তবু এখানকার পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ। কারণ, এখানে মানুষের মৃত্যু হতো রোগ আর অনাহারে।

এর এক বছর পর ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে ব্রিটিশ সেনারা বেলসেন মুক্ত করেন। আবারও মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান আনিতা। একই সঙ্গে বন্দিজীবন থেকেও মুক্ত হন তিনি। আনিতা বলেন, ‘বেলসেন শিবিরে আর এক সপ্তাহ দেরি হলে আমরা হয়তো বাঁচতে পারতাম না। কারণ, সেখানে খাবার ও পানি কিছুই ছিল না।’

আনিতা নিজের জীবনের জন্য আউশভিৎস ক্যাম্পের অর্কেস্ট্রা–প্রধান আলমা রোজের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবনের জন্য আলমার কাছে ঋণী। এমনকি জার্মানরাও তাঁকে মানুষের মর্যাদায় দেখত।’

আরও পড়ুন

যুদ্ধ শেষে নতুন জীবন

দ্য গার্ডিয়ানকে আনিতা জানিয়েছিলেন, যুদ্ধের পর তিনি বোন রেনাতেকে সঙ্গে নিয়ে কিন্ডারট্রান্সপোর্টে যুক্তরাজ্যে যাওয়া বোন মেরিয়ানকে খুঁজে বের করেন। ১৯৪৬ সালে তাঁরা দুজনই ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আর যুদ্ধের পরপরই সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মেরিয়ানের মৃত্যু হয়।

রেনাতে যুক্তরাজ্যে লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে বিয়ে করে ১৯৮২ সালে স্বামীর সঙ্গে ফ্রান্সে চলে যান। ২০২১ সালে ৯৭তম জন্মদিনের ১১ দিন আগে তাঁরও মৃত্যু হয়।

আবারও আনিতা একা হয়ে পড়েন। পরে সফল চেলোবাদক হিসেবে ইংলিশ চেম্বার অর্কেস্ট্রার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। প্যারিস ভ্রমণের সময় তাঁর পুরোনো বন্ধু ও সহশরণার্থী পিটার ওয়ালফিশের সঙ্গে দেখা হয়। পিটার একজন পিয়ানোবাদক। ১৯৫২ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তান—চেলোবাদক রাফায়েল ও মনোচিকিৎসক মায়া।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের ৫০ বছর আনিতা আর প্রকাশ্যে জার্মান ভাষায় কথা বলেননি, যদিও তার জন্মস্থান ব্রেসলাউ তখন ছিল জার্মানির অংশ। তিনি শপথ করেছিলেন, আর কোনো দিন নিজ দেশ জার্মানির মাটিতে পা রাখবেন না। কয়েক দশক সেই শপথ ভঙ্গ করেননি তিনি। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, বয়স্ক যে কেউ হয়তো তাঁর মা–বাবার হত্যাকারী হতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কঠোর মনেরও পরিবর্তন হয়। ২০১৮ সালে নিজের শপথ ভেঙে তিনি বার্লিনে গিয়ে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্দেসতাগে ভাষণ দেন।

বুন্দেসতাগে দেওয়া ওই ভাষণে আনিতা বলেন, ‘আপনারা দেখছেন, আমি আমার শপথ ভেঙেছি। এতে কোনো অনুতাপ নেই। কারণ, ঘৃণা হলো বিষ আর শেষ পর্যন্ত আপনি নিজেকেই বিষিয়ে তোলেন।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য নিউইয়র্কার, লা ভ্যানগার্ডিয়া, দ্য স্ট্র্যাড, ডয়চে ভেলে

আরও পড়ুন