বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাকড়সার জালের খোঁজ পাওয়া গেছে

নিউইয়র্ক টাইমস

মাকড়সার জাল বলতেই চোখে ভেসে ওঠে ঘরের কোণে ছোট্ট একটা জাল, যা বেয়ে মাকড়সা ঘুরে বেড়ায়। এই জাল দেখলে তো অনেকেরই সেই ঘরে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি, একটি গুহার ভেতরে দেখা মিলেছে বিশাল বড় মাকড়সার জালের। ভাবো তো, সেখানে যদি মাকড়সাভীতি থাকা কোনো মানুষ থাকত, তাহলে তার অবস্থা কী হতো।

আলবেনিয়া ও গ্রিসের সীমান্তে অবস্থিত একটি গুহায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন চেক স্পেলিওলজিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা। সেখানেই তাঁরা এমন এক দৃশ্যের মুখোমুখি হলেন, যা দেখে তাঁরা রীতিমতো অবাক। তাঁরা এমন একটি মাকড়সার জাল খুঁজে পেলেন, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে বড়।

আলাদা একটি গবেষক দলের গবেষণায় জানানো হয়, গুহার প্রবেশপথের কাছে একটি সরু, নিচু পথের দেয়ালজুড়ে ১ হাজার ৪০ বর্গফুটেরও বেশি আয়তনের এই বিশাল জালটি মাকড়সাদের ‘মেগাসিটি’। এই জালে ‘টেগেনারিয়া ডোমেস্টিকা’ ও ‘প্রিনেরিগোন ভ্যাগান’ প্রজাতির প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার মাকড়সা একসঙ্গে বসবাস করে।

আরও পড়ুন

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক রোমানিয়ার ট্রান্সিলভানিয়ার স্যাপিয়েন্টিয়া হাঙ্গেরিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইস্তভান উরাক জানিয়েছেন, এটি হলো দুটি সাধারণ মাকড়সার প্রজাতির মধ্যে একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে থাকার প্রথম প্রমাণ। আর এই জালটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাকড়সার জাল।

আলবেনিয়া ও গ্রিসের সীমান্তে অবস্থিত এই গুহাটি মূলত একটি সালফার গুহা। সালফার গ্যাসযুক্ত গুহাগুলোকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ও চরম আবাসস্থলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন সালফাইডের বিক্রিয়ায় তৈরি সালফিউরিক অ্যাসিড এই গুহাটিকে তৈরি করেছে। এই গুহাগুলো থাকে পুরোপুরি অন্ধকার ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসে ভর্তি। যা বেশির ভাগ প্রাণীর জন্যই বিষাক্ত।

আরও পড়ুন

এই গুহার ভেতরে প্রাণীদের বেঁচে থাকা নির্ভর করে এমন এক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ওপর, যা সালফারকে কাজে লাগানো জীবাণু (Microbes) দিয়ে চলে। এই অণুজীবগুলো একটি বিশেষ খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে, যা গুহায় থাকা প্রাণীদের একটি সম্প্রদায়কে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

এই কঠিন পরিবেশে মাকড়সারা কীভাবে বেঁচে থাকে, সেটা বোঝার জন্য গবেষক দলটি এদের টিস্যুতে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে। সেই পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, এই মাকড়সাগুলো গুহার পুকুর থেকে বেরিয়ে আসা ছোট ছোট জলজ প্রাণীগুলোকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে।

আরও পড়ুন

চেক স্পেলিওলজিক্যাল সোসাইটির গুহা অভিযাত্রীরা ২০২২ সালে ভ্রোমনার ক্যানিয়নে একটি অভিযানের সময় এটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন। এরপর ২০২৪ সালে বিজ্ঞানীরা গুহাটি দেখতে যান এবং জালটি বিশ্লেষণের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন। তখন থেকে বিজ্ঞানীরা এই মাকড়সার জাল নিয়ে গবেষণা করছেন।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গুহার ভেতরের এই মাকড়সাগুলোর জিনগত বৈশিষ্ট্য বাইরের পরিবেশে থাকা এদের আত্মীয়দের থেকে আলাদা। এই বিষয়টি প্রমাণ করে, এই মাকড়সার মহানগরীর বাসিন্দারা একটি একক দল তৈরি করার জন্য নিজেদের পরিবেশের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নিয়েছে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, লাইভসায়েন্স, সায়েন্টিফিক আমেরিকান

আরও পড়ুন