টি-রেক্সের মুখে কয়টি দাঁত ছিল

টি–রেক্সের দাঁত ছিল ভয়ংকরছবি: আর্থ ডটকম

‘জুরাসিক পার্ক’ মুভির কথা মনে আছে? এই মুভিতে গাড়ি ধাওয়া করেছিল বিশাল টিরানোসরাস রেক্স বা টি-রেক্স। একসময় পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়ানো এই দানবকে নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। বিজ্ঞানীরা এত দিন যা জানতেন, ২০২৪ সালে এসে তা যেন আরেকবার ওলটপালট হয়ে গেল।

নতুন এক কম্পিউটার মডেলিং স্টাডি বলছে, আমরা টি-রেক্সকে যতটা বিশাল ভাবতাম, এরা আসলে তার চেয়েও বড় ছিল! বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, জীবাশ্ম বা ফসিল রেকর্ড দেখে আমরা যে ওজন অনুমান করতাম, বাস্তবে টি-রেক্স তার চেয়েও ৭০ শতাংশ বেশি ভারী হতে পারে।

ভাবতে পারছ! এমনিতেই এরা ছিল বিশাল, তার ওপর যদি ওজন আরও ৭০ শতাংশ বেড়ে যায়, তবে এই দানবীয় শরীর টিকিয়ে রাখতে এদের কী পরিমাণ খাবার লাগত? আর সেই খাবার শিকার করার জন্য ওদের মুখের দাঁতগুলো কেমন ছিল?

চলো সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে একটু ঢুঁ মেরে জেনে নেই, টি-রেক্সের দাঁতের ব্যাপারে। বিশেষ টি-রেক্সের কয়টি দাঁত ছিল?

আরও পড়ুন

টি-রেক্স কী খাবার খেত

দাঁতের হিসাবে যাওয়ার আগে দেখা যাক এরা খেত কী। টি-রেক্সের সময়পর্বটা ছিল শিকারের জন্য স্বর্গরাজ্য। এরা ছিল অত্যন্ত সক্রিয় বা অ্যাকটিভ প্রিডেটর। কখনো ওত পেতে বসে থাকত, আবার কখনো শিকারকে ধাওয়া করত।

এদের খাদ্যতালিকায় বাছবিচার ছিল না। ট্রাইসেরাটপস বা এডমন্টোসরাসের মতো বিশাল সব ডাইনোসর তো ছিলই, এমনকি অন্য প্রজাতির টিরানোসরাসকেও এরা খেয়ে ফেলত। বিজ্ঞানীরা টি-রেক্সের পেটের জীবাশ্ম বা ফসিল পরীক্ষা করে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন। দেখা গেছে, এরা প্রচুর ডাইনোসরের বাচ্চা খেয়ে ফেলত।

শুনতে নিষ্ঠুর মনে হলেও প্রকৃতির নিয়মেই এটা এদের জন্য ছিল ‘সহজ খাবার’। তবে শুধু বাচ্চা নয়, বিশাল সব দানব শিকার করে তাদের হাড়গোড় চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষমতাও এদের ছিল। আর এই হাড় চিবানোর জন্যই দরকার ছিল বিশেষ একপাটি দাঁত।

আরও পড়ুন

মুখে কয়টা দাঁত ছিল

এখন আসি আসল প্রশ্নে। টি-রেক্সের ওই বিশাল মুখে ঠিক কতগুলো দাঁত সাজানো ছিল? বিজ্ঞানীদের মতে, একটি পূর্ণবয়স্ক টি-রেক্সের মুখে সাধারণত ৫০ থেকে ৬০টি দাঁত থাকত।

সংখ্যাটা শুনে হয়তো মনে হচ্ছে, মাত্র ৫০-৬০টা? মানুষেরই তো ৩২টা থাকে! কিন্তু সংখ্যা দিয়ে এদের বিচার করতে যাওয়া ভুল হবে। আসল খেলাটা ছিল দাঁতের আকারে।

এদের একেকটা দাঁত ছিল বিশাল বড়! টি-রেক্সের দাঁতের দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ থেকে ৩০.৫ সেন্টিমিটার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়ংকর প্রাণী বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক হাঙর মেগালোডনকে। কিন্তু তুমি জানলে হয়তো অবাক হবে, টি-রেক্সের দাঁত লম্বায় সেই মেগালোডনের দাঁতের চেয়েও বড় ছিল!

এই দাঁতগুলো শুধু লম্বাই ছিল না, এগুলোর দুই পাশ ছিল করাতের মতো খাঁজকাটা। অনেকটা আজকের দিনের মাংস কাটার ছুরির মতো।

আরও পড়ুন

টি-রেক্স হাড় গুঁড়া করত যেভাবে

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবার মেরুদণ্ডী প্রাণী বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন ব্রিঙ্ক বলেন, ‘টি-রেক্সের দাঁতগুলো অন্য ছোট থেরোপড ডাইনোসরদের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত ছিল। এগুলো প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে পারত।’

কেন এত মজবুত ছিল? কারণ, ছোট আকারের মাংসাশী ডাইনোসররা ওদের দাঁত ব্যবহার করত মূলত মাংস ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য। কিন্তু টি-রেক্সের কাজ শুধু মাংস ছেঁড়া ছিল না। এরা শিকারের হাড়সুদ্ধ চিবিয়ে গুঁড়া করে ফেলত। আর প্রায় ৩০ সেন্টিমিটারের একেকটা মজবুত দাঁত যখন করাতের মতো চেপে বসত, তখন শিকারের বাঁচার কোনো উপায়ই থাকত না।

আরও পড়ুন
টি-রেক্স ডাইনোসরের প্রতীকী ছবি
ছবি: সংগৃহীত

বয়সের সঙ্গে কি টি-রেক্সের দাঁত বাড়ত

টি-রেক্সের দাঁত নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা রহস্য অনেক দিন ধরেই ছিল। সরীসৃপজাতীয় প্রাণীদের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দাঁতের সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু টি-রেক্সের ক্ষেত্রে মনে করা হতো উল্টোটা। বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, ছোট টি-রেক্সের দাঁত বেশি থাকে, আর বড় হলে কমে যায়।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় এই ধারণাটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এত দিন যেগুলোকে বাচ্চা টি-রেক্স ভেবে ভুল করতেন, সেগুলো আসলে টি-রেক্স ছিলই না! ওগুলো ছিল সম্পূর্ণ আলাদা এক প্রজাতির ডাইনোসর। সেগুলোর নাম ন্যানোটাইরানুস।

যেহেতু ওই ছোট ডাইনোসরগুলো টি-রেক্সের বাচ্চা নয়, তাই টি-রেক্সের বয়স বাড়লে দাঁত কমে যায়, এই তত্ত্বটা আর ধোপে টেকে না। ক্রিস্টিন ব্রিঙ্কের মতে, অন্যান্য সরীসৃপের মতো টি-রেক্সের দাঁতের সংখ্যাও হয়তো বয়সের সঙ্গে বাড়ত অথবা একই থাকত। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দাঁতগুলো আরও বিশাল এবং ভয়ংকর হয়ে উঠত।

সরীসৃপ ও ডাইনোসরদের একটা দারুণ সুবিধা হলো, ওদের দাঁত মানুষের মতো একবার পড়ে গেলেও হাহাকার করতে হতো না। আমৃত্যু এদের পুরোনো দাঁত পড়ে গেলে সেখানে নতুন দাঁত গজায়।

টি-রেক্সের ক্ষেত্রেও তাই হতো। প্রতিটি নতুন জেনারেশনের দাঁত আগেরটার চেয়ে একটু বড় এবং শক্তিশালী হয়ে উঠত। এভাবেই ধীরে ধীরে ওরা ওই ৬০টি দাঁতের মালিক হতো।

পৃথিবী থেকে টি-রেক্স হারিয়ে গেছে কোটি কোটি বছর আগে, কিন্তু তাদের সেই দানবীয় দাঁত আজও আমাদের ভাবায়—প্রকৃতি কতটা ভয়ংকর সুন্দর হতে পারে।

তথ্যসূত্র: আইএফএল সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, কানাডা

আরও পড়ুন