বাবল র্যাপ ফাটাতে এত ভালো লাগে কেন
ধরো, অনলাইনে তুমি একটা বই অর্ডার করলে। দুদিন পর বইটা তোমার ঠিকানায় চলে এল। প্যাকেটটা খুলতেই প্রথমে কি দেখতে পেলে? বই? মোটেই না। প্রথমে একটা বাবল র্যাপ থাকার কথা। প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো যে জিনিসটা ওপরে দেখতে পাও, ওটাই বাবল র্যাপ।
শুরুতে বইটা নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করার পর নিশ্চয়ই বাবল র্যাপটা নিয়ে বসে পড়ো। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, তুমি সব কটা বাবল পটাশ পটাশ করে ফুটিয়ে তবেই শান্ত হও! একটা–একটা বুদ্বুদ আঙুল দিয়ে চেপে ধরো, আর তারপর...পটাশ শব্দ! আহ্, কী শান্তি!
কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছ, এই সামান্য প্লাস্টিকের বুদবুদ ফাটানোর মধ্যে এত আনন্দ কেন? এটা কি শুধু একটা মজার শব্দের কারণে, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে?
বিজ্ঞানীরাও তোমার মতোই ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছেন। আর তাঁরা যা খুঁজে পেয়েছেন, তা কিন্তু দারুণ মজার! বাবল র্যাপ ফোটানোর মজাটা আসে মস্তিষ্ক থেকে। যখনই তুমি কোনো কাজ সফলভাবে শেষ করো, তোমার মস্তিষ্ক তোমাকে একটা ছোট্ট পুরস্কার দেয়। এই পুরস্কারের নাম হলো ডোপামিন। একে আনন্দের হরমোনও বলা হয়। তুমি যখন পছন্দের কাজ করো, তখন ডোপামিন নিঃসৃত হয়। সে জন্যই পছন্দের কাজটা তোমার ভালো লাগে।
কিন্তু বাবল র্যাপ ফোটাতে কেন ভালো লাগে? বাবল র্যাপ ফোটাতে গেলে তিনটা ধাপে মস্তিষ্কের কাজ করতে হয়। প্রথমে, বাবলটা আঙুলের সাহায্যে খুঁজে বের করতে হয়। তারপর চাপ দিতে হয় ঠিকমতো। চাপটা ঠিকভাবে লাগলেই পটাশ করে শব্দ হয়। যেই না কাজটা শেষ হলো, অমনি তোমার মস্তিষ্ক খুশি হয়ে একটু ডোপামিন ছেড়ে দেয়। তোমার ভালো লাগতে শুরু করে। তাই তুমি পরের বাবলটাও ফাটাও। আবার একটু ভালো লাগে। এভাবে চলতেই থাকে!
খেয়াল করে দেখবে, তুমি যখন কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা করো বা তোমার পরীক্ষা নিয়ে টেনশনে থাকো, তখন বাবল র্যাপ ফাটাতে আরও বেশি ভালো লাগে।
এরও কারণ আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাবল র্যাপ হলো বিশ্বের সেরা ‘ফিজেট টুল’। অস্থির লাগলে বা টেনশন হলে আমরা না বুঝেই আঙুল নাড়াই বা চুল প্যাঁচাতে থাকি। অনেক সময় আঙুলের মধ্যে কলম ঘোরাই। এটাই হলো ‘ফিজেট’।
এই ছোট ও একঘেয়ে কাজগুলো আমাদের স্নায়ুকে শান্ত করে। ১৯৯২ সালে ক্যাথলিন এম ডিলন নামের এক বিজ্ঞানী এটা নিয়ে একটা মজার পরীক্ষা করেন। তিনি একদল লোককে দুটি ভাগে ভাগ করেন। এক দলকে বাবল র্যাপ ফাটাতে দেন, আরেক দলকে দেন না। পরে দেখা যায়, যারা বাবল র্যাপ ফাটিয়েছিল, তারা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি শান্ত, সতেজ ও মনোযোগী হয়ে উঠেছে! অর্থাৎ, যখন তোমার মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খায়, তখন এই ‘পটাশ পটাশ’ শব্দ আর আঙুলের চাপটা তোমার সব মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। তখন তুমি অনেকটা চাপমুক্ত হও। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত ও মজার ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাবল র্যাপ ফাটানোর অভ্যাসটা আমরা পেয়েছি আমাদের গুহাবাসী পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে! ভাবছ, গুহামানবেরা আবার বাবল র্যাপ পেল কোথায়? তারা বাবল র্যাপ পায়নি, কিন্তু তারা অন্য একটা জিনিস ফাটাত। সেটা হলো পোকামাকড়!
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছি! আমাদের আদিম পূর্বপুরুষদের জন্য সবচেয়ে বিরক্তিকর ও বিপজ্জনক জিনিসগুলোর একটা ছিল গায়ে বসে থাকা উকুন, এঁটেল বা অন্য পোকামাকড়। এগুলোকে খুঁজে বের করে টিপে মেরে ফেলা ছিল তাদের প্রতিদিনের একটা জরুরি কাজ। কাজটা সফলভাবে করতে পারলে তারা খুব তৃপ্তি পেত। কারণ, এটা তাদের বিপদমুক্ত করত।
লাখ লাখ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরের সেই পুরোনো অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। তাই যখন আমরা বাবল র্যাপ দেখি, আমাদের মস্তিষ্ক সেই পুরোনো ‘পোকা ফাটানোর’ আনন্দ খুঁজে পায়! এটা আমাদের অদ্ভুত একধরনের জয়ের অনুভূতি দেয়।
আসলে বাবল র্যাপের মজাটা কোনো একটা নির্দিষ্ট কারণে হয় না। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন স্পর্শ। তুমি যখন বুদবুদে চাপ দাও, তোমার আঙুল একটা বাধা অনুভব করে। তারপর হঠাৎ করে সেই বাধাটা ফেটে যায়! এই যে চাপ দিয়ে কোনো কিছুকে ভেঙে ফেলার অনুভূতি, এটাই খুব মজার।
দ্বিতীয়ত, শব্দও গুরুত্বপূর্ণ। পটাশ করে যে শব্দ হয়, সেটা তোমার কানকে বলে দেয় ‘হ্যাঁ, কাজটা ঠিকমতো হয়েছে!’
সূত্র: দ্য কাট ডটকম, এসএসআই প্যাকেজিং গ্রুপ ইনক ও টাইমস অব ইন্ডিয়া