বিড়াল নিয়ে আমাদের যত ভুল ধারণা
বিড়াল মানুষের অন্যতম সেরা বন্ধু। আমাদের অনেকের বাড়িতে পোষা বিড়াল আছে। কারও কারও বাসায় আছে একাধিক বিড়াল। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের পাশাপাশি বিড়ালও বন্ধু হয়ে থেকেছে। তাই আমরা ভাবি যে বিড়াল সম্পর্কে আমরা সবকিছুই জানি। কিন্তু বিড়াল নিয়ে আমাদের এমন অনেক ধারণা আছে যা আসলে সত্যি নয়। সে রকম চারটি ভুল ধারণা সম্পর্কে জানা যাক।
১. বিড়ালের প্রিয় খাবার দুধ
কার্টুনে বা সিনেমায় দেখা যায়, আদুরে বিড়াল বাটিভরে দুধ খাচ্ছে! এই দৃশ্য দেখতে ভালো লাগলেও সত্যিটা হলো, বিড়াল দুধ তেমন পছন্দ করে না। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জুলিয়া হেনিং বলেন, বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বিড়াল দুধ হজম করতে পারে না। ছোটবেলায় যখন ওরা মায়ের দুধ খায়, তখন শরীরে ল্যাকটেজ নামে একধরনের এনজাইম থাকে। এই এনজাইম দুধ হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই এনজাইম তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মানে দুধ হজম করা বন্ধ হয়ে যায়! ফলে দুধ খেলে ওদের পেটব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে। কিন্তু বিড়াল খুব চালাক। এরা নিজেদের কষ্ট লুকিয়ে রাখতে ওস্তাদ। তাই তুমি হয়তো বুঝতেই পারবে না যে তোমার পোষা বিড়ালটা দুধ খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। আবার অনেক বিড়াল পর্যাপ্ত খাবার না পেয়েও দুধ খেতে পারে। কিন্তু মনে রেখো, দুধ মোটেও বিড়ালের প্রিয় খাবার নয়।
২. বিড়াল নিশাচর প্রাণী
অনেকেই ভাবে, বিড়াল বুঝি সারা রাত জেগে থাকে আর দিনের বেলায় ঘুমায়। তোমার বিড়ালটাও কি রাতে জেগে থাকে? এক রাতে খেয়াল করে দেখো তো! তবে তোমাকে জানিয়ে রাখি, বিড়াল কিন্তু নিশাচর প্রাণী নয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, বিড়াল হলো ক্রেপাসকুলার। শব্দটা একটু জটিলই বটে। এর অর্থ দাঁড়ায়, বিড়াল ভোরে সূর্যোদয়ের সময় এবং সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার সময় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। বিড়ালবিশেষজ্ঞ স্টিফেন কোয়ান্ডট বলেন, এর কারণ হলো শিকার। পাখি বা ইঁদুরের মতো শিকারগুলো ঠিক ওই সময়ই বেশি বের হয়। তাই বিড়ালও ওই সময় শিকার করার জন্য তৈরি থাকে।
তোমার বিড়ালটা রাতে বেশি বিরক্ত করলে ঘুমানোর আগে ওর সঙ্গে একটু খেলা করতে পারো। তারপর অল্প কিছু খেতে দাও। এতে ওর শিকারের চক্রটা পূর্ণ হবে এবং শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।
৩. গরগর শব্দ করা মানেই বিড়ালের খুশি হওয়া
বিড়াল যখন কোলে এসে গরগর করে, তখন হয়তো আমাদের মনটা খুশিতে ভরে যায়। আমরা ভাবি, বিড়ালটা বুঝি খুব আরামে আছে। বেশির ভাগ সময় এটা সত্যি হলেও সব সময় নয়!
আমেরিকান অ্যানিমেল হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বিড়াল যখন ভয় পায় বা খুব চাপে থাকে, তখন নিজেকে শান্ত করার জন্যও গরগর শব্দ করে। এমনকি ব্যথা পেলেও করে একই শব্দ। মাঝেমধ্যে খাবার চাওয়ার জন্যও ওরা এই শব্দ করে। আমরা যেমন আনন্দে হাসি, আবার মাঝেমধ্যে ঘাবড়ে গেলেও বোকার মতো হেসে ফেলি, বিড়ালের গরগর করার ব্যাপারটাও অনেকটা তেমন! তাই শুধু গরগর শব্দ শুনেই সবটা বুঝে ফেলো না। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ওর লেজ নাড়ানো বা শরীরের ভঙ্গিও দেখতে হবে।
৪. বিড়াল মালিককে ভালোবাসে না
অনেকেই বলে, কুকুর যতটা প্রভুভক্ত, বিড়াল ততটা নয়। বিড়াল নাকি একটু দেমাগি! এটা ঠিক যে বিড়ালরা কুকুরের মতো লেজ নেড়ে, লাফিয়ে ভালোবাসা দেখায় না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এরা মালিককে ভালোবাসে না।
যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন ইউনিভার্সিটির গবেষক ডক্টর ক্রিস্টিন ভিটেল ২০১৯ সালে একটি গবেষণা করেন। তিনি দেখান, বিড়ালরাও তাদের মালিকের সঙ্গে ঠিক কুকুরের মতোই একটি মজবুত সম্পর্ক তৈরি করে। তারা মালিককে নিজেদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ বলে মনে করে।
গবেষণাটিতে বিড়ালদের একটি নতুন ঘরে তাদের মালিকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ রাখা হয়। তারপর কিছু সময়ের জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মালিকদের। দেখা গেছে, মালিক যখন পাশে থাকে, তখন বিড়ালের মানসিক চাপ অনেক কমে যায়।
অর্থাৎ বিড়ালরাও আমাদের ভালোবাসে, শুধু তাদের ভালোবাসা প্রকাশের ধরনটা একটু ভিন্ন। অর্থাৎ তোমার বিড়ালটা যদি কোলে এসে ঘুমিয়ে পড়বে, বুঝবে ও তোমাকেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করে!