স্কুলের যে ৪ সাবজেক্টে গুরুত্ব দিলে ভবিষ্যতে এগিয়ে থাকবে
ধরো, তুমি সাত দিনের জন্য ঘুরতে যাবে। এই সাত দিনে সমুদ্র ও পাহাড়সহ নানা জায়গায় ঘুরবে। সে জন্য তোমাকে ব্যাগ গোছাতে হবে এখনই। সমুদ্রে কী পরে নামবে, পাহাড়ে ওঠার সময় কী পরবে, কোথায় থাকবে, কী খাবে—সেসব বিষয় এখনই যতটা সম্ভব গুছিয়ে ফেলতে হবে। ঠিক একইভাবে তোমার ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এখন থেকেই তা গোছাতে হবে। তবে মাথায় রাখতে হবে, পৃথিবী কিন্তু দ্রুত বদলে যাচ্ছে। সে জন্য আমাদের পড়াশোনার ধরনও বদলাতে হবে। এমন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, যেগুলো তুমি ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবে। এই লেখায় সেই বিষয়গুলো নিয়েই থাকছে আলোচনা।
১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং আর গণিত—এই চারটিকে একসঙ্গে বলা হয় ‘স্টেম’ (STEM)। এগুলোই বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। তোমার চারপাশটা খেয়াল করো, একটা ধারণা পাবে। তোমার মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এমনকি তুমি যে গাড়িতে স্কুলে বা কলেজে যাও, সবই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান। ভবিষ্যতের পৃথিবী চলবে এই প্রযুক্তির ওপর। রোবট বানানো, মহাকাশে রকেট পাঠানো, নতুন নতুন মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা, কিংবা পরিবেশদূষণ কমানোর জন্য নতুন উপায় বের করা; সবকিছুর মূলে আছে এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। যারা এই বিষয়গুলো ভালোভাবে শিখবে, তাদের জন্য ভবিষ্যতে দারুণ সব কাজের সুযোগ অপেক্ষা করছে। শুধু তাই নয়, মানবজাতির মঙ্গলের জন্যও এই বিষয়গুলো জানা খুব দরকার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে জানলে তোমার ভবিষ্যতের পাশাপাশি বদলে যাবে গোটা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ।
২. ভাষা ও সাহিত্য
কথায় আছে, ‘যতই পরিবর্তন আসুক, কিছু জিনিস একই থাকে।’ ভাষা হলো তেমন একটি বিষয়। বাংলা হোক বা ইংরেজি, ভালোভাবে পড়তে, লিখতে, বলতে ও শুনতে পারার ক্ষমতাটা সব সময় জরুরি। একটু ভেবে দেখো, তুমি যত বড় বিজ্ঞানীই হও না কেন, তোমার আবিষ্কারের কথা সবাইকে জানাতে হলে ভালোভাবে লেখার ও বলার দক্ষতা লাগবে। একজন ইঞ্জিনিয়ারকে তার দলের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেকোনো কাজ করতে গেলেই মানুষের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন। যারা সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে বা লিখতে পারে, তারা সব জায়গায় এক ধাপ এগিয়ে থাকে। তাই ভাষা শেখাটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ।
৩. গণিত
অনেকেরই গণিতভীতি আছে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা বলতে হলে গণিতকে বাদ দেওয়া যায় না। ওপরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় স্টেমে গণিতের কথা ছিল। কিন্তু গণিতের গুরুত্ব এত বেশি যে এটিকে আলাদাভাবে বলতেই হয়। বড় বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে গণিত লাগবেই। শুধু তা-ই নয়, আমাদের প্রতিদিনের জীবনেও গণিত ছাড়া চলে না। দোকানে গিয়ে হিসাব করা, বাড়ির খরচের হিসাব রাখা, কিংবা ব্যাংকের কাজ, সবকিছুতেই লাগে গণিত। তাই গণিতকে ভয় না পেয়ে বন্ধু বানানোর চেষ্টা করাই সবচেয়ে ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৩ সালের গ্যালাপ পোলের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৪ শতাংশ মানুষ মনে করে গণিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি! তাই গণিত বাদ দিয়ে ভবিষত্যে উন্নতি করার সম্ভাবনা খুব কম।
৪. সামাজিক বিজ্ঞান
আগে আমরা শুধু নিজের দেশ বা আশপাশের খবর রাখতাম। কিন্তু এখন ইন্টারনেট আর প্রযুক্তির কারণে পুরো পৃথিবীটাই যেন একটা গ্রাম হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে ভিডিও কলে অন্য দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি। এই নতুন পৃথিবীতে সফল হতে হলে আমাদের অন্য দেশের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ভূগোল সম্পর্কে জানতে হবে। এটাই হলো সামাজিক বিজ্ঞান। যারা অন্য দেশের মানুষের রীতিনীতি বোঝে, তাদের সঙ্গে কীভাবে চলতে হয় তা জানে, তারাই ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ব্যবসাবাণিজ্য বা যেকোনো কাজে অনেক সুবিধা পাবে। অন্যকে জানা মানে শুধু একটি নতুন ভাষা শেখা নয়, বরং তাদের মন বোঝা। সামাজিক বিজ্ঞান আমাদের সেই কাজটা করতে সাহায্য করবে।
তাই তুমি যে বিষয়েই পড়ো না কেন, এই চারটি বিষয়ে একটু বিশেষ নজর দিয়ো। কারণ এগুলোই তোমাকে ভবিষ্যতের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে তুলবে। তবে সব বিষয়ই কিন্তু একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে শুধু প্রযুক্তি জানলেই চলবে না, ভালো যোগাযোগের দক্ষতাও থাকতে হবে। একজন ভালো লেখক হতে চাইলেও রাখতে হবে বিজ্ঞানের খোঁজখবর। সব মিলিয়ে, এখানে আলোচিত বিষয়গুলোতে যদি এখনই বেশি গুরুত্ব দাও, তাহলে তুমি ভবিষ্যতের জন্য কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবে।