যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিমান এত আধুনিক, সিঁড়ি কেন সেকেলে

এয়ারফোর্স ওয়ানে উঠতে গিয়ে লালগালিচায় মোড়া সিঁড়িতে পরপর তিনবার হোঁচট খান জো বাইডেন। মেরিল্যান্ডের অ্যান্ড্রু বিমানঘাঁটি, ২০২১ সালের মার্চে তোলাছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের বহনকারী বিমান বিশ্বজুড়ে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ নামে পরিচিত। এটি প্রযুক্তির দিক থেকে পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক বাহন। বিমানটির ভেতরে রয়েছে সুরক্ষিত যোগাযোগব্যবস্থা, অপারেশন থিয়েটার ও বিলাসবহুল সব সুবিধা। তবে এই বিমানে ওঠার সময় প্রেসিডেন্টকে প্রায়ই একটি সাধারণ হাতল ধরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে দেখা যায়। সমস্যাটি এখানেই।

এই হাতল ধরা সিঁড়ি বেয়ে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার সময় প্রেসিডেন্ট ও তাঁর কর্মকর্তাদের মাঝেমধ্যে হোঁচট খেতে দেখা যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতেও দেখা গেছে। তিনি আসলে বেশ কয়েকবারই হোঁচট খেয়েছেন। জো বাইডেনের সেই হোঁচট খেয়ে পড়ার মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরালও হয়েছিল।

মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও যেন জো বাইডেনের পথেই হাঁটছেন। কারণ, গত জুন মাসে একটি ভিডিও খুব ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হঠাৎ হোঁচট খেয়েছেন। নিউ জার্সির মরিসটাউনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি যখন ক্যাম্প ডেভিড যাওয়ার জন্য বিমানে উঠছিলেন, তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সামনেই তাঁকে হোঁচট খেতে দেখা যায়। এই ভিডিও ক্লিপও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

আরও পড়ুন

যে দেশে আধুনিকতম সব প্রযুক্তি আছে, সেখানে কেন প্রেসিডেন্টের জন্য এমন ‘সেকেলে’ সিঁড়ির ব্যবস্থা? কেনই বা একটি উন্নত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য আধুনিক, হাইড্রোলিক বা স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি ব্যবহার করা হয় না?

মার্কিন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার চার্লস গ্রিমস বেশ কিছু কারণ জানান, কেন এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাধারণ সিঁড়ি এখনো ব্যবহার করা হয়। প্রথমে আসে প্রেসিডেন্টকে যখন বিমানে ওঠানো বা নামানো হয়, তখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় নিরাপত্তাকে। এ কারণেই এয়ার ফোর্স ওয়ানকে কখনোই সাধারণ টার্মিনাল ভবনের কাছে পার্ক করা হয় না। বরং বিমানটিকে সব সময় টার্মিনাল থেকে দূরে একটি নিরাপদ ও ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়। এর ফলে সাধারণ যাত্রীদের থেকে দূরে, চারপাশ ঘেরা ও সুরক্ষিত নিরাপত্তাবলয় খুব সহজেই তৈরি করা সম্ভব হয়। এই নিরাপত্তাব্যবস্থাই এই সাধারণ সিঁড়ি ব্যবহারের প্রধান কারণ।

সাধারণ বিমানবন্দর টার্মিনালগুলো সব সময়ই অসংখ্য অচেনা যাত্রীতে ঠাসা থাকে। এত ভিড়ের মধ্যে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যাওয়া মানেই বিরাট নিরাপত্তাঝুঁকি। টার্মিনালকে বারবার খালি করা, আর এত যাত্রীকে ঘন ঘন তল্লাশি করে প্রেসিডেন্টকে তাঁদের থেকে দূরে রাখা কার্যত অসম্ভব। তাই এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাধারণত এই সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়, যা প্রেসিডেন্টকে দ্রুত সুরক্ষিত বিমানে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এটিই প্রেসিডেন্টের জন্য সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন
বোয়িং ৭৪৭-২০০বি সিরিজের এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোর এরিয়া প্রায় চার হাজার বর্গফুট। প্রেসিডেন্টের থাকার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি স্যুইট রয়েছে। আছে বড় অফিস, কনফারেন্স কক্ষ, প্রসাধন কক্ষসহ একাধিক পরিষেবা।
ছবি: হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট

আধুনিক সিঁড়ি ব্যবহার না করার পেছনে একটি বড় কারণ হলো জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ বা জনসংযোগ। প্রেসিডেন্ট যখন এই সিঁড়ি দিয়ে ওঠেন বা নামেন, তখন তিনি দর্শকদের দিকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। সিঁড়ির নিচে পাতা লালগালিচা, সামরিক ও ভিআইপিদের উপস্থিতিতে দেওয়া অভ্যর্থনা—পুরো দৃশ্যটাই ছবি তোলার জন্য দারুণ মুহূর্ত তৈরি করে। এটা শুধু নিরাপত্তা বা সুবিধার জন্য নয়। বরং অনেকটা ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। এ জন্য মনে করা হয় যে এভাবে প্রেসিডেন্ট মানুষকে তাঁর ক্ষমতা দেখাতে ও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন।

এ ছাড়া সুবিধার দিক থেকেও এই সাধারণ সিঁড়ি সেরা। সাধারণত যাত্রীদের জেট ব্রিজ থেকে নেমে টার্মিনাল, ব্যাগেজ এরিয়া পার হয়ে বাইরে অপেক্ষমাণ গাড়িতে যেতে হয়, যা অনেক সময়ের ব্যাপার। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সিঁড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মাত্র কয়েক ফুট হেঁটে তাঁর অপেক্ষায় থাকা লিমোজিনে উঠে যেতে পারেন। তাই বিমানটিকে এমন একটি স্থানে রাখা হয় যেখানে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী লিমোজিন, সিক্রেট সার্ভিসের ১৫ থেকে ২০টি গাড়ির পুরো বহর একসঙ্গে যেতে পারে। এ ধরনের বিশাল বহরের জন্য টার্মিনালের কাছে জায়গা পাওয়া কঠিন। সিক্রেট সার্ভিস কখনোই চাইবে না যে প্রেসিডেন্ট সাধারণ যাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে টার্মিনালের বাইরে থাকা লিমোজিনে উঠুন।

আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: এএফপি

বাইরে থেকে লিফটের মতো কোনো ব্যবস্থা তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে বিমান থেকে নামানো যেতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তার দিক থেকে সেটি পুরোপুরি নিরাপদ না–ও হতে পারে। আবার দেখতেও কিছুটা হাস্যকর লাগতে পারে। এ কারণেই কোনো প্রেসিডেন্টই এখন পর্যন্ত আধুনিক, হাইড্রোলিক বা স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি ব্যবহার করেননি এয়ার ফোর্স ওয়ানে।

আরও পড়ুন