কিছু জুতার সামনের অংশ সুচালো হয় কেন

মিডজার্নি দিয়ে তৈরি

মানুষের পায়ের পাতার সামনের দিকটা অনেকটা গোলাকার। এ হিসেবে জুতার সামনের অংশ হওয়ার কথা ছিল গোল। কিন্তু এখন দেখা যায়, অনেক জুতার সামনের দিকটা একদম চোখা বা সুচালো হয়। এই জুতা পরা আরামদায়ক নয়। তবু কেন জুতার কারিগরেরা বারবার এমন জুতা বানান? নারীরাই বা কেন এমন জুতা পরেন?

জুতার কিছু কিছু নকশা দেখতে অদ্ভুত বা পরতে কষ্ট হয়। কিছু মানুষ এ ধরনের জুতা পরেন। এটি জানার আগে জানতে হবে সুচালো জুতা কীভাবে এল?

সুচালো জুতা পরতে শুরু করেছিলেন ধনী পুরুষেরা। মেয়েদের ফ্যাশনের অনেক কিছুই প্রথম পরা শুরু করেছিলেন পুরুষেরাই।

১৪ ও ১৫ শতকে ইউরোপের পুরুষদের মধ্যে সুচালো জুতা পরার চল ছিল। এসব জুতার নাম ছিল পৌলেইনস বা ক্রাকোস। ধারণা করা হয় যে পোল্যান্ডের ক্র্যাকো শহর থেকে এর নাম হয়েছিল ক্র্যাকোস।

এসব জুতা লম্বায় প্রায় ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারত! জুতার সুচালো মাথাটা যাতে শক্ত ও টান টান থাকে, তাই এর ভেতরে শেওলা বা পশম ভরে রাখা হতো।

আরও পড়ুন

অন্য অনেক কিছুর মতোই জুতার সাহায্যেও মানুষের সামাজিক মর্যাদা বা স্ট্যাটাস বোঝা যেত। এই পৌলেইনস জুতার দাম ছিল অনেক। আর এর লম্বা গঠনের কারণে এটা পরে ঠিকমতো হাঁটা যেত না। তাই এই জুতা পরার মানেই হলো সবাইকে বোঝানো যে ‘আমি এতই ধনী যে আমাকে কোনো কাজই করতে হয় না।’

জুতা নিয়ে রাজার আইন

এই জুতা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে ১৪৬৩ সালে ইংল্যান্ডের রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ড একটি আইন পাস করতে বাধ্য হন। আইনে বলা হয়, লর্ড বা অভিজাত শ্রেণির নিচের কোনো ব্যক্তি দুই ইঞ্চির বেশি লম্বা ডগার জুতা পরতে পারবেন না। এই আইনের পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণও ছিল। রাজা এই আইন করেছিলেন কারণ তিনি চেয়েছিলেন যে শুধু বড়লোকেরাই যেন লম্বা জুতা পরে আলাদা থাকতে পারেন। তিনি আরও চেয়েছিলেন, জুতার জন্য যেন বেশি কাপড় নষ্ট না হয়। এমনকি পাদরিরাও এই জুতা পছন্দ করতেন না। তাঁরা বলতেন, এই লম্বা জুতা পরে ঠিকমতো হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করা যায় না।

এই সুচালো জুতা পরার কারণে শারীরিক মূল্যও দিতে হতো। এটি পরলে পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হতো। এতে অনেক সময় পায়ের আঙুলের হাড় বাঁকা হয়ে যেত। এই জুতার কারণেই ‘বানিয়ন’ নামে একটি নতুন অসুখ দেখা দিল। এই রোগের কারণে পায়ের বুড়ো আঙুলের গাঁট ফুলে যেত।

আরও পড়ুন
মিডজার্নি দিয়ে তৈরি

তবু কেন মানুষ এমন জুতা পরে আধুনিক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে চোখা জুতার কারণে পায়ে রোগ হয়। ভাবছ, তবু কেন এত কষ্ট করে মানুষ এই জুতা পরে! এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

১. বন্ধুদের মতো হওয়া: এর একটি বড় কারণ হলো অন্যদের সঙ্গে মিশে থাকার ইচ্ছা। আমাদের মস্তিষ্ক সব সময় তার নিজস্ব দল খুঁজে বেড়ায়। কারণ, আদিম যুগে মানুষকে উপজাতি বা দলের সঙ্গে বাস করতে হতো। একা থাকা মানেই ছিল বিপদ। তাই দলবদ্ধ থাকাটা আমাদের মস্তিষ্কে নিরাপত্তার বোধ তৈরি করে। যেহেতু সুচালো হাই হিল সাধারণত মেয়েরাই পরে, তাই এটি পরলে অন্যদের কাছ থেকে একধরনের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়।

২. সবাই যা করে তা–ই করা: আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ভালোবাসে। এর একটি সহজ উপায় হলো, অন্যেরা কী করছে, তা দেখা। যখন আমরা দেখি, অনেক মানুষ একটি নির্দিষ্ট স্টাইল অনুসরণ করছে, তখন আমাদের মস্তিষ্ক ভাবে, ‘সবাই যখন এটা করছে, তখন এটা নিশ্চয়ই ভালো’।

আরও পড়ুন

৩. পোশাকের জাদু: বিজ্ঞানীরা এই প্রভাবের একটি সুন্দর নাম দিয়েছেন, এনক্লোথড কগনিশন। এর মানে হলো, তুমি যা পরো, তা তোমার নিজের অনুভূতি বদলে দিতে পারে। ডিজাইনাররা সুচালো জুতা ব্যবহার করেন, কারণ এটি একটি বিভ্রম তৈরি করে। এটি পা ও পুরো শরীরকে লম্বা ও সরু দেখায়। ফলে যিনি এই জুতা পরেন, তিনি নিজেকে আরও মার্জিত ও শক্তিশালী অনুভব করেন। তবে আশার কথা হলো, নতুন প্রযুক্তি ও আরামদায়ক জুতার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় আজকাল সুচালো জুতাগুলো অতীতের সেই ভয়ংকর পৌলেইনসের চেয়ে অন্তত কিছুটা হলেও কম যন্ত্রণাদায়কভাবে তৈরি করা হচ্ছে।

সূত্র: দ্য কনভার্সেশন-এর ‘কিউরিয়াস কিডস’ অবলম্বনে

আরও পড়ুন