যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রোদ উঠেছে ২০২৫ সালে
আমাদের দেশের আকাশে রোদ ওঠা খুব বিরল কিছু নয়। এখানে প্রায় প্রতিদিনই বেশ রোদ ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আছে, যেখানে রোদ ওঠে খুব কম। মানুষ রোদের জন্য অপেক্ষা করে। আবহাওয়া অফিস রোদের আগাম বার্তা দিলে মানুষের মনে আনন্দ জাগে। বাইরে সময় কাটানোর জন্য এসব দিনে মানুষ পরিকল্পনা করে।
যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য রোদ খানিকটা তেমনই। বছরের এই শেষ সময়ে, মানে ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের আকাশ বেশ ধূসর। শীত আসছে। এমন সময় আবহাওয়াবিদেরা জানালেন এক চমকপ্রদ তথ্য। এ বছরটা যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে রোদেলা বছর। মানে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রোদ উঠেছে এ বছর। ব্রিটেনের আবহাওয়া দপ্তর মেট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে রেকর্ড হয়েছে ১ হাজার ৬২২ ঘণ্টা রোদ। ১৯১০ সাল থেকে রাখা হিসাব অনুযায়ী সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এ তথ্য।
এর আগে সবচেয়ে বেশি রোদ ওঠা বছর ছিল ২০০৩ সাল। সে তুলনায় ২০২৪ ছিল একেবারেই উল্টো। ১৯৯৮ সালের পর সবচেয়ে কম রোদ দেখা গিয়েছিল গত বছর। এক বছরের ব্যবধানে দেখা গেল পুরোপুরি বিপরীত চিত্র।
এ রোদ সবচেয়ে বেশি উঠেছে ইংল্যান্ডে। দেশটির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে রোদেলা বছর। স্কটল্যান্ডও খুব পিছিয়ে নেই। দেশটির ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বাধিক রোদেলা বছর। আর ওয়েলস এ ক্ষেত্রে ষষ্ঠ। যদিও নর্দান আয়ারল্যান্ড এখনো প্রথম দশে আসেনি। তবে বছরের শেষ দিনগুলোতে এই হিসাব বদলাতে পারে বলে জানিয়েছে মেট অফিস। বিশেষ করে ২০২৫ সালের মে মাসে নর্দান আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি ডেরির ম্যাগিলিগান এলাকায় রেকর্ড হয়েছে ৩০১ দশমিক ৩ ঘণ্টা রোদ, যা দেশটির ইতিহাসে কোনো মাসে সর্বোচ্চ।
বছরের সবচেয়ে রোদেলা সময় ছিল বসন্তকালে। শুধু ২০২৫ সালের নয়, ইতিহাসের সবচেয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল বসন্ত হিসেবেই ধরা হচ্ছে এ মৌসুমকে। সামগ্রিকভাবে এটি ছিল চতুর্থ সর্বাধিক রোদেলা মৌসুম। এর আগে শুধু তিনটি গ্রীষ্মকালে (১৯১১, ১৯৭৬ ও ১৯৯৫) বেশি রোদ উঠেছিল। গ্রীষ্মকালও ছিল গড় সময়ের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল। জানুয়ারি ছিল বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল, যদিও ফেব্রুয়ারিতে মেঘলা আকাশ বেশি দেখা গেছে। শীতকালে রোদ ছিল তুলনামূলক কম। শরৎকালে রোদের পরিমাণ ছিল গড়ের নিচে।
মেট অফিসের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মাইক কেনডন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ রোদ পড়ার প্রধান কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাব। ফলে মেঘ কম ছিল। দিনের পর দিন পরিষ্কার আকাশ দেখা গেছে। তাঁর মতে, বসন্তকাল ছিল সত্যিই আলাদা। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই ছিল রোদেলা দিন। মার্চ ছিল তৃতীয় সর্বাধিক রোদেলা মাস। এপ্রিল ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে রোদেলা মাস। আর মে ছিল দ্বিতীয়। গ্রীষ্মের তিন মাসেই গড়ের চেয়ে বেশি রোদ উঠেছে। ফেব্রুয়ারি ও অক্টোবর ছাড়া বছরের প্রায় সব মাসেই সূর্যের আলোর তীব্রতা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
মেট অফিসের তথ্য বলছে, ১৯৮০-এর দশক থেকে যুক্তরাজ্য ক্রমেই বেশি রোদ পাচ্ছে। বাতাসে ক্ষতিকর কণার পরিমাণ কমে যাওয়াকে এর একটি কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে রোদের পরিমাণ বাড়বে না কমবে, এ নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ অতিরিক্ত রোদ শুধু আবহাওয়ার খবরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে জ্বালানি খাতে। ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যের মোট বার্ষিক জ্বালানি চাহিদার ৬ শতাংশের বেশি পূরণ হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ থেকে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌরবিদ্যুতের খামারগুলোর বেশ লাভ করেছে এ বছর।
তবে রোদের উজ্জ্বলতার সঙ্গে এসেছে তাপ। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মকাল যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল। পুরো বছরটিই ছিল অস্বাভাবিকভাবে গরম। একই সঙ্গে বৃষ্টি ছিল গড়ের নিচে, আর কিছু অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ কম বৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান