উনিশ-বিনিশ
অনেক বড় রাজ্য ছিল ‘উনিশ’ নামক রাজার
অঢেল কড়ি, হিরে–মানিক, হাতি–ঘোড়া হাজার
‘বিনিশ’ নামে বুদ্ধিপ্রখর মন্ত্রী ছিল যে তার
যুদ্ধে রাজার ভাগ্য ছিল বরাবরই জেতার।
রাজার সে কী গোঁফ! তা দেখে ভয়েই মরে মানুষ
তৈরি হতো ফুলের মালা, উড়ত বেলুন–ফানুস
সে গোঁফ দেখে ব্যাঘ্র, ভালুক, সিংহ মানে নতি
চন্দ্র ঢালে কিরণধারা, সূর্য ঢালে জ্যোতি!
কিন্তু রাজার মন ভালো নেই, ক্ষিপ্ত হাতের মুঠি
হিসাব করে দেখে, দেশে শত্রু আছে দুটি
সবাই রাজার বশ মেনেছে, চলছে সোজা পথে
ওদের মোটেও বাগে আনা যায়নি কোনোমতে!
শত্রু কারা? কাদের এমন আছে সাহস বুকে!
রাজাও যেন কোন কারণে নাম আনে না মুখে!
ভীষণ রেগে ঝড়ের বেগে দেখল রাজা ঘুরে
শত্রু দুটি মাঠে–ঘাটে রাজ্যখানাজুড়ে!
নাম দুটো তার মন্ত্রীকে সে বলল কানে কানে
কাছেপিছেই থাকে ওরা, দূরে বাঁয়ে–ডানে!
অনেক ভেবে মন্ত্রী এসে বসে রাজার কাছে
বুদ্ধি দিল ফিসফিসিয়ে, কেউ না জানে পাছে
হাত–পা ছুড়ে খুশির তোড়ে বলল রাজা, জবর
শত্রু যতই হোক না বিশাল, এবার হবে খবর!
রাজাকে কী বুদ্ধি দিল মন্ত্রীমশাই বিনিশ?
কিনতে হবে অস্ত্র-রসদ মাত্র দুটি জিনিস
লম্বা, মোটা দড়িকাছি আর যে ভারী কামান
তুষ্ট রাজা মন্ত্রীকে দেয় এনামসহ যা মান!
বিভুঁই থেকে অঢেল টাকায় মাত্র কয়েক দিনে
অনেক দড়িকাছি, কামান আনল রাজা কিনে
রাজ্যব্যাপী রাতারাতি এবং বিনা ঘোষে
পৌঁছে গেল দড়িকাছি, কামান গেল বসে!
এবার রাজা ঘটা করেই প্রচণ্ড উল্লাসে
শত্রুনিধন কর্ম শুরু করল মধুমাসে
যজ্ঞ দেখে হাসল না কেউ, কেবল দিল হাঁচি
দড়িকাছি দিয়ে রাজা বাঁধবে সকল মাছি
দিনে–রাতে কামড়ে যারা করছে বেহাল দশা
কামান দেগে মারা হবে সেই ভয়ানক মশা।